Advertisement
E-Paper

পুলিশে মোড়া সিজিও, জনতা নাকাল

একেবারে ব্যূহ সাজিয়ে তৈরি বাহিনী। কয়েকটি স্তরে ভাগ হয়ে অপেক্ষায়। কখন বিপক্ষ হানা দেবে আর তা সামলাতে কম্যান্ডিং অফিসারেরা বলবেন ‘চার্জ’! তখনই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে! যেন যুদ্ধ বাধবে যখন-তখন!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৬
এ দিন ১২.০১.২০১৬

এ দিন ১২.০১.২০১৬

একেবারে ব্যূহ সাজিয়ে তৈরি বাহিনী। কয়েকটি স্তরে ভাগ হয়ে অপেক্ষায়। কখন বিপক্ষ হানা দেবে আর তা সামলাতে কম্যান্ডিং অফিসারেরা বলবেন ‘চার্জ’! তখনই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে!

যেন যুদ্ধ বাধবে যখন-তখন!

সেনা নয়! মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর, সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সের চার পাশে ওই ব্যূহ রচনা করেছিল বিধাননগর কমিশনারেটের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী। তবে কোনও দুষ্কৃতীদল বা জঙ্গি হানার আশঙ্কায় না! এ দিন ছিল সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই-এর আঞ্চলিক অফিসের সামনে বামফ্রন্টের অবস্থান কর্মসূচি। আর ওই কর্মসূচি ঘিরে বড়সড় গোলমাল বাধার আশঙ্কাতেই এত আয়োজন!

এ দিন সিজিও কমপ্লেক্সের চার দিকের চারটি রাস্তা আটটি ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো হয়েছিল। যার ফল ভুগতে হল আমজনতাকে।


সে দিন ১১.০৯.২০১৪

সিজিও কমপ্লেক্সের ঠিক সামনের রাস্তার দু’দিকে তিনটি ব্যারিকেড। ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি দূর অস্ত্, হেঁটে ঢুকতে গেলেও পুলিশকে পরিচয় জানাতে হয়েছে! পুলিশ সব দেখে শুনে সন্তুষ্ট হলে তবেই ভিতরে ঢোকার অনুমতি মিলেছে। ইডি, সিবিআই-সহ সিজিও-তে থাকা বিভিন্ন অফিসের কর্তা থেকে সাধারণ কর্মী— প্রায় কেউই এই বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালীন গাড়ি নিয়ে ঢুকতে বা বেরোতে পারেননি!

সিজিও কমপ্লেক্সের সামনের রাস্তা ধরে এগিয়ে ডান দিকে ঘুরলেই প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাসস্থান। সেখানে আবার লোহার উঁচু ব্যারিকেড। ওই রাস্তা থেকে ৮০০ মিটার দূরেই বামফ্রন্টের সভামঞ্চ।

বামফ্রন্টের সভামঞ্চের পিছনের রাস্তাও দু’দিক থেকে গার্ডরেল দিয়ে আটকানো। সেখানে শুধু বাম নেতৃত্বের প্রবেশাধিকার। বাকিদের ক্ষেত্রে অনুমতি সাপেক্ষে। সিজিও কমপ্লেক্সের অদূরে সিটি সেন্টার থেকে ময়ূখ ভবন পর্যন্ত রাস্তায় বন্ধ রাখা হয়েছিল যান চলাচল।

পুলিশি আয়োজন কেমন ছিল?

পাঁচ জন ডেপুটি কমিশনার-সহ প্রায় ১১০০ পুলিশ! তার মধ্যে মহিলা পুলিশ প্রায় ২০০। সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে রাস্তার মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ার ও কয়েক জন পুলিশ অফিসার। পিছনে ব্যারিকেডগুলিতে হেলমেট পরে, ঢাল-লাঠি-বন্দুক নিয়ে মহিলা ও পুরুষ মিলিয়ে জনা ৫০ পুলিশ। সিজিও কমপ্লেক্সের মূল দু’টি ফটকের বাইরে প্রায় ১২০ জন সশস্ত্র পুলিশ। সিজিও কমপ্লেক্সের ভিতরে জনা ২০ পুলিশ। সিজিও-র মূল ফটকের বাইরের দু’টি ব্যারিকেডের দায়িত্বে গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই। পুলিশ ঠিক করেছিল, জনতা যদি কোনও ভাবে ওই ব্যারিকেড ভাঙে, তা হলেই লাঠিচার্জ শুরু হবে। সে জন্য ওখানে ছিলেন ৮০ জন লাঠিধারী পুলিশ।

বামেদের সভাস্থল ঘিরে ছিল ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজের নেতৃত্বে মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে ১০০ জনের বাহিনী। এর সঙ্গেই কমব্যাট ফোর্সের পৃথক পুরুষ ও মহিলা বাহিনী। তাদের সঙ্গে তিনটি জলকামান। যান চলাচল মসৃণ রাখতে পৃথক বাহিনী। এ ছাড়া, সাদা পোশাকের পুলিশ তো ছিলই। এই ব্যাপক আয়োজনের জন্য পুলিশ গিয়েছিল ব্যারাকপুর, হাওড়া এবং হুগলি থেকেও।

শুধু সিজিও কমপ্লেক্সে কর্মরত লোকেরাই নন, এই নজিরবিহীন পুলিশি আয়োজনের ঠেলায় তাঁদেরও চরম ভোগান্তি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কমপ্লেক্সের সামনের রাস্তার অস্থায়ী দোকানদারদের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, নিয়মিত খদ্দেররা এ দিন ওই রাস্তায় ঢুকতেই পারেননি। ফলে, তাঁদের ক্ষতি হয়েছে।

কিন্তু কেন এই নজিরবিহীন নিরাপত্তা?

পুলিশের বক্তব্য, প্রায় দশ হাজার বাম সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। সেই মতো ব্যবস্থা রাখতে হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে তৎকালীন মন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার পরে শাসক তৃণমূল যখন সিজিও কমপ্লেক্স ঘেরাও কর্মসূচি নেয়, তখন তো এত পুলিশি আয়োজন ছিল না? এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘গত সেপ্টেম্বরে সিপিএমের লালবাজার অভিযান ঘিরে ব্যাপক গণ্ডগোল ও তার জেরে বিতর্ক বাধে। আমরা ওই রকম কিছু এড়াতে চেয়েছিলাম।’’

বামেদের ওই সভাস্থল থেকে কিছু দূরেই বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল। এ দিন সভা উপলক্ষে আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মাইক লাগানো হয়। অভিযোগ, হাসপাতালের ঠিক সামনে মাইক বন্ধ করলেও শব্দদূষণ আটকানো যায়নি।

বাম নেতাদের একাংশের দাবি, পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেই ওই জায়গা ঠিক হয়েছে। পুলিশের দাবি, যান চলাচল ও নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় রেখেই সভার জায়গা বাছা হয়েছে।

kolkata news cgo complex
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy