এখন কোনও এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা কত থাকে, তা জানতে গেলে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই সেই তথ্য হাতে পাওয়া যায়। কোথাও হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, গ্রাহকেরা ফোন করে অভিযোগ না করা পর্যন্ত জানার কোনও উপায় থাকে না। এমনকী, কোন সাবস্টেশন বা ট্রান্সফর্মারের উপর গরমের জন্য অনেক বেশি চাপ পড়ছে বা কোনটি যে কোনও সময় ট্রিপ হয়ে যেতে পারে, তা-ও জানার কোনও প্রযুক্তি এখনও নেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছে। কেন্দ্রের অর্থসাহায্যে এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ বার সল্টলেক ও নিউটাউনে সেই বাধাগুলিকে কাটিয়ে উন্নত পরিষেবা চালু করতে চলেছে বণ্টন কর্তৃপক্ষ। যার পোশাকি নাম হচ্ছে ‘সুপারভাইজারি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাকুইজিশন’ বা স্কাডা। এই ব্যবস্থায় একটি অফিসে বসেই সল্টলেকের বিদ্যুৎ পরিষেবা সংক্রান্ত প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
সংস্থাটির যা পরিকল্পনা, স্কাডা পরিষেবা সল্টলেক-নিউটাউন ছাড়াও আগামী দিনে আসানসোল ও শিলিগুড়িতেও চালু করবে। মূলত কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের দৌড়ে এ রাজ্যের যে সব শহর রয়েছে, সেই সব শহরেই ওই ব্যবস্থা চালু করবেন বণ্টন কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাপে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক এই প্রকল্পের জন্য ৩২ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে ফেলতে পারলে, বণ্টন সংস্থাকে ঋণ মকুবও করে দেবে বিদ্যুৎ মন্ত্রক। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সল্টলেকের ৪৪টি সাবস্টেশনকে স্কাডা নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কী এই স্কাডা?
বণ্টন সংস্থা সূত্রে খবর, সল্টলেকের প্রতিটি সাবস্টেশনকে একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডেটা নেটওয়ার্কের মধ্যে বেঁধে ফেলা হবে। সাবস্টেশনগুলিতে বসানো হবে একটি করে রিমোট টার্মিনাল ইউনিট (আরটিইউ)। যার আওতার মধ্যে চলে আসবে প্রতিটি ট্রান্সফর্মার ও ফিডারও। এর ফলে দিনের যে কোনও সময় সল্টলেকে বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের যাবতীয় তথ্য যেমন এক জায়গায় বসে হাতে গরম পাওয়া যাবে, একই ভাবে নজরদারি চালানো যাবে প্রতিটি ট্রান্সফর্মার ও ফিডারে। এই পরিকল্পনায় নিউটাউনে বণ্টন সংস্থার যে নিজস্ব তথ্যকেন্দ্র রয়েছে সেখানে একটি নতুন কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। যেখানে একটি ডিসপ্লে বোর্ডের সামনে বসেই সল্টলেক ও নিউটাউনের বিদ্যুৎ পরিষেবার প্রতিটি সেকেন্ডের চিত্র ধরা পড়বে। একই সঙ্গে পাওয়া যাবে প্রতিটি সাবস্টেশনের বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই বিদ্যুৎকর্মীদের আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া যাবে।
উদাহরণস্বরূপ এক বিদ্যুৎকর্তা জানিয়েছেন, এখন গরমের দুপুরে কোন ট্রন্সফর্মারের উপর অনেক বেশি লোড পড়ছে তা বোঝার কোনও উপায় নেই। তার ফলে অনেক সময়েই অতিরিক্তি চাপে ট্রান্সফর্মার ‘ট্রিপ’ করে যায়। বিপদে পড়েন গ্রাহকরা। বিশেষ করে গরমের রাতে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সমস্যা বেশি হয়। স্কাডা চালু হয়ে গেলে কন্ট্রোলরুমে বসেই ট্রান্সফর্মারটির ‘শারীরিক’ অবস্থা প্রতি মুহূর্তে নজরে রাখা যাবে। যদি কোনও কারণে ট্রান্সফর্মারের লোড মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন তার ভার কমাতে অন্য একটি ট্রান্সফর্মার থেকে ওই লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। ফলে দু’টি ট্রান্সফর্মারের মধ্যে লোডের ভারসাম্য আনা যাবে। কন্ট্রোলরুমে বসেই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় তা করা যাবে বলে বণ্টন কর্তাদের দাবি।
শুধু তাই নয়, কোন ফিডার দিয়ে সল্টলেকের কোন ব্লকে কত বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে তা-ও জানা যাবে। দিনের কোন সময় বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে, হঠাৎ কোন ফিডারে বিদ্যুতের চাহিদা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে, এ সবই স্কাডা পরিষেবার মাধ্যমে কন্ট্রোলরুমে বসেই নজরে রাখা যাবে। কোনও ট্রান্সফর্মার বিপদসীমার বাইরে চলে গিয়েছে তারও সিগন্যাল পাওয়া যাবে কন্ট্রোলরুমে। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে দেওয়া যাবে। ফলে যান্ত্রিক ত্রুটি অনেক কম সময়ের মধ্যে সারিয়ে তোলা যাবে। তাতে উপকৃত হবেন সল্টলেকের গ্রাহকরা।
বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘স্কাডা ব্যবস্থাটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য এবং আধুনিক। বিদ্যুৎ বণ্টনের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করলে গ্রাহক পরিষেবা যেমন ২৪ ঘণ্টা নজরদারির মধ্যে থাকে, সংস্থারও অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সাশ্রয় হয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যায়, এই ব্যবস্থার ফলে কোনও একটি অঞ্চলে বিলিং ব্যবস্থাটিও অনেক বৈজ্ঞানিক ভাবে করা যায়। কারণ স্কাডা পদ্ধতিতে একটি বিশেষ অঞ্চলে কত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছিল এবং গ্রাহকরা কতটা ব্যবহার করেছে তার যাবতীয় তথ্য মজুত করে রাখা যাবে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে বছর শেষে কত রাজস্ব আদায় হল তা-ও বোঝা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy