পড়ুয়া ভর্তির সময়ে স্কুলের অতিরিক্ত ফি নেওয়া রুখতে পদক্ষেপ করল স্কুলশিক্ষা দফতর। বৃহস্পতিবার কলকাতা জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে কড়া চিঠি পাঠানো হল শহরের ৫৬৩টি সরকারি পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে। আগামী, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অতিরিক্ত টাকা অভিভাবকদের ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দফতর। এমনকী, নির্দেশ পালন না-হলে নজিরবিহীন ভাবে পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিলেন দফতরের কর্তারা।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন সম্পূর্ণ অবৈতনিক। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্য সরকার একটি আইন পাশ করে জানায়, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির সময়ে বছরে এক বার উন্নয়ন ফি হিসেবে স্কুলগুলি ২৪০ টাকা করে নিতে পারবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বহু স্কুলই নির্ধারিত টাকার থেকে অনেক বেশি পরিমাণ টাকা নেয় পড়ুয়াদের থেকে। কম্পিউটার ফি, গ্রন্থাগার ফি-সহ একাধিক তালিকা তৈরি করা হয়। সেই টাকার অঙ্ক কখনও কয়েক হাজার পার হয়ে যায় বলে অভিযোগ।
এ বছরের শুরুর দিকে বেসরকারি স্কুলের বর্ধিত ফি কমাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই ওই সমস্ত স্কুলের ফি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তখন স্পষ্ট জানিয়েছিলেন বর্ধিত ফি নেওয়া যাবে না। অভিযোগ, তার পরেও বহু স্কুল সেই নির্দেশ মানেনি।
এর পরে আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার আগেই বিকাশ ভবন থেকে সমস্ত জেলা স্কুল পরিদর্শকের (ডিআই) কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই দফতরের কর্তারা ডিআইদের জানিয়েছেন স্কুলের এই প্রবণতায় দ্রুত রাশ টানতে হবে। তার প্রেক্ষিতেই শিক্ষাভবন থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ দিন স্কুলে যে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যে যে-সমস্ত স্কুল ২৪০ টাকার চেয়ে বেশি টাকা ফি হিসাবে নিয়েছে, সেই সব স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অভিভাবকদের সেই অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেবে। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে তার রিপোর্ট পাঠাতে হবে ডিআই অফিসে। রিপোর্ট পাওয়ার পরে এসআই-দের মাধ্যমে স্কুল পরিদর্শন করিয়ে সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হবে।
দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যদি দেখা যায়, কোনও তথ্য ভুল রয়েছে বা নির্দেশ পাওয়ার পরেও কেউ টাকা ফেরত দেয়নি, তা হলে সংশ্লিষ্ট স্কুলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। এমনকী, স্কুলের পরিচালন সমিতিও ভেঙে দেওয়া হতে পারে।’’ প্রসঙ্গত, স্কুলে পরিচালন সমিতি না থাকলে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান বা অন্য কোনও খাতে বরাদ্দ অর্থ পাওয়া যায় না। ফলে আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হতে পারে স্কুলগুলিকে।
যদিও ওই চিঠির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন প্রধান শিক্ষকদের একাংশ। শহরের প্রথম সারির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান, ২৪০ টাকায় কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করা যায় না। সরকার থেকেও সে ভাবে কোনও সহযোগিতা করা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ভর্তির সময়ে বেশি টাকা নিতে হয়।
যদিও স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশ অমান্য করাটা মোটেও কাজের কথা নয়।’’ তাঁর যুক্তি, বই, খাতা, ব্যাগ, জুতো থেকে শুরু করে সাইকেল-সহ পড়ুয়াদের বিভিন্ন অভাব মিটিয়েছে সরকার। তা হলে কেন বাড়তি টাকার বোঝা অভিভাবকদের থেকে নেওয়া হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy