Advertisement
E-Paper

হাসপাতালের ঘেরাটোপে অনাদরের স্কুল

মর্গের পাশ দিয়ে গিয়ে কয়েক পা মাত্র। রোজ সকালে কাঁধে ব্যাগ বা হাতে ঝোলানো প্লাস্টিকে বইপত্র নিয়ে হাজির হয় অনিকেত, অনুষ্কা, রোহিতেরা। এগিয়ে যায় স্কুলের দিকে। আশপাশে তখন হাসপাতাল চত্বরের চেনা ব্যস্ততা।

মধুরিমা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:২৬
চলছে স্কুল। এন আর এস হাসপাতালে।

চলছে স্কুল। এন আর এস হাসপাতালে।

মর্গের পাশ দিয়ে গিয়ে কয়েক পা মাত্র। রোজ সকালে কাঁধে ব্যাগ বা হাতে ঝোলানো প্লাস্টিকে বইপত্র নিয়ে হাজির হয় অনিকেত, অনুষ্কা, রোহিতেরা। এগিয়ে যায় স্কুলের দিকে। আশপাশে তখন হাসপাতাল চত্বরের চেনা ব্যস্ততা। কেউ এসেছেন আত্মীয়ের ডেথ সার্টিফিকেট নিতে, কেউ বা সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে। কোথাও মর্গের দিকে স্ট্রেচারে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সাদা চাদরে ঢাকা দেহ। সে সবের মধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষার পাঠে মগ্ন এই শিশু ও

তাদের শিক্ষকেরা।

ঘটনাস্থল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। শহরের এই হাসপাতালের মধ্যেই চলছে শিশুদের প্রাথমিক স্কুলটি। অথচ পঁয়ষট্টি বছর ধরে চলা এই স্কুলের কথা খুব কম লোকেই জানেন।

হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য চালু হয়েছিল স্কুলটি। শুধু কর্মীদের সন্তানরাই নয়, ওই এলাকার বস্তির শিশু, পথশিশুরাও পড়তে আসত সেই সময়ে। ১৯৮১ সালে বহু চিঠিপত্রের পরে সরকারি অনুমোদন পেয়ে স্কুলের নাম হয় ‘শ্রমিক শিশু প্রাথমিক স্কুল’। স্কুল কর্তৃপক্ষের হিসেবে, এখন সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় নব্বই।

কেমন এই স্কুল? একটাই ছোট্ট ঘরে প্রথম দিকের বেঞ্চে প্রি-প্রাইমারি, শেষের বেঞ্চে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা। মাঝখানে পরপর অন্যরা। একটি বেঞ্চে গা ঘেঁষাঘেষি করে বসে প্রায় সাত জন। ঘরে নেই কোনও ডেস্ক, বেঞ্চের উপরেই খাতা রেখে ঝুঁকে পড়াশোনা করতে হয় বাচ্চাদের। ঠেলাঠেলির জেরে কখনও ব্যাগ পড়ে যায়, তো কখনও পড়ুয়া নিজেই।

মিড-ডে মিল রান্নার কোনও জায়গা না-থাকায় স্থানীয় এক স্কুল থেকে বাক্সবন্দি করে আনা হয় খাবার। ‘‘আগে বৃষ্টির সময়ে উপর থেকে জল পড়ে খাতা ভিজে যেত,’’ জানায় এক পড়ুয়া। নিজেদের চেষ্টাতেই স্কুলে টিনের ছাউনি দিয়েছেন, জানলায় কাচ বসিয়েছেন শিক্ষকেরা। স্কুলের চার জন শিক্ষক জানান, সেখানে কোনও অফিসঘর নেই। নেই কোনও শিশুদের খেলার মাঠও। স্কুল থেকে রাজ্য স্তরে খেলায় অংশ নিতে চলা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অনিকেত জানায়, স্কুলের সামনে খেলার জায়গা না থাকায় অনুশীলনের তেমন সুযোগও মেলে না।

কিন্তু পঁচিশ বছর আগে সরকারি অনুমোদন পাওয়া স্কুলের হাল
এমন কেন?

স্কুলের শিক্ষক সুব্রত রজক জানান, স্কুলের জমি স্বাস্থ্য দফতরের। অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা দফতর। তাই স্কুলের উন্নয়নের কাজ করতে গেলে প্রয়োজন স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন। শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য দফতর অনুমোদন দিলে এই স্কুলের ভবন করে দিতে তাদের কোনও আপত্তি নেই। ২০১১ সালে স্বাস্থ্য দফতরে ছাড়পত্র চেয়ে চিঠি লেখেন শিক্ষকেরা। কিন্তু সেই চিঠির কোনও জবাব মেলেনি বলে দাবি তাঁদের। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, ‘‘বিষয়টির আমি কিছুই জানি না। শুনলাম, ছাড়পত্র দেওয়ার চেষ্টা করব।’’

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্যও এই স্কুলের জমি নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘‘ওদের ফেলে কোনও কাজ করব ভাবতেই পারি না। বাচ্চাদের ভবিষ্যতের প্রতি আমরাই দায়বদ্ধ। তাই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের আবাসনের মধ্যে স্কুলটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।’’

hospital school morgue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy