দাঁত ভাঙা অঙ্ক বললেই ভেসে ওঠে তাঁর নাম! এ বার পড়ুয়াদের অঙ্ক ভীতি কাটাতে সেই ‘কে সি নাগ’-এর উপরেই ভরসা রাখছে স্কুল। সম্প্রতি ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনে কেশবচন্দ্র নাগের জন্মদিনে পড়ুয়াদের বার্তা দেওয়া হল, অঙ্ককে ভয় পেয়ো না, ভালবাসতে শেখো।
মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক অসিতবরণ গিরি বলেন, ‘‘কেশবচন্দ্র নাগের কথা উল্লেখ করে পড়ুয়াদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জাগানো হয়। গণিতের মতো বিষয়ে পারদর্শী হতে গেলে কী করতে হবে, তা-ও শেখানো হয়। সবার আগে ভয় দূর করতে হবে। আশা করি সকলেই সেটা করতে পারবে।’’ স্কুলশিক্ষা দফতরও জানিয়েছে, অঙ্কে ভয় কাটাতে এমন অনুষ্ঠানই দরকার।
কেন? স্কুলশিক্ষা দফতরের পর্যবেক্ষণ, এ রাজ্যের একটা বড় অংশের পড়ুয়াদের মধ্যে অঙ্ক নিয়ে ভয় কাজ করে। এমনও দেখা গিয়েছে, কোনও পড়ুয়া ইতিহাসে ৭০ শতাংশ, ভৌতবিজ্ঞানে ৮০ শতাংশ পেয়েও অঙ্কে পেয়েছে ৪৫ শতাংশ। শুধু অঙ্ক নয়, একই ছবি ইংরেজির ক্ষেত্রেও। একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষাতেও একই ছবি উঠে এসেছে।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, জেলার বিভিন্ন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এই দু’টি বিষয়ের প্রতি পড়ুয়াদের ভীতি রয়ে গিয়েছে। আগ্রহও তুলনামূলক কম। এর জন্য পুরনো গতানুগতিক পাঠ্যক্রমকে দায়ী করছেন তাঁরা। তিন বছর আগে থেকে যে নতুন পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে তার ফলে এই সমস্যা মিটবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
ওই বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অঙ্ক নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও ভয় রয়েছে। শহরের ৮৯ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন অঙ্ক সন্তানদের কাছে কঠিন বিষয়। ৬৩ শতাংশ অভিভাবকের মতে, অঙ্ক পরীক্ষার আগে সন্তানেরা মানসিক চাপে ভোগে। ইংরেজির ক্ষেত্রে স্কুলশিক্ষা দফতর অবশ্য কোনও আলাদা সমীক্ষা করেনি। কিন্তু শিক্ষকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পড়ুয়াদের ইংরেজি পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া ও তা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকে এই বিষয়ে ভীতির দিকটি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
অঙ্কের মতো ইংরেজির ভয় কাটাতেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে। দফতরের মতে, ইংরেজি শিখতে গেলে আগে তা ভাল করে শোনা ও পড়া দরকার। বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এখানেই সমস্যা। তাই ‘রিডিং’ পড়ার জন্য পাঠ্যক্রমে একটি ইংরেজি বই আনার কথা ভাবছেন তাঁরা। যেখানে শুধু ইংরেজি গল্প থাকবে। ‘‘পাঠ্যক্রমকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কিছু রদবদল করা হতে পারে,’’—বললেন এক স্কুলশিক্ষা কর্তা। অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। ইংরেজি সংবাদপত্র, বই পড়া, ইংরেজি খবরের চ্যানেল দেখার অভ্যাস তৈরি করতে অভিভাবকদের উদ্যোগী হতে হবে।
অঙ্কের ভয় কাটাতে শিক্ষকদের আরও যত্নবান হতে বলছে স্কুলশিক্ষা দফতর। বিশেষজ্ঞ কমিটির এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলা সফরে যাওয়ার সময় শিক্ষকদের এই বিষয়ে বাড়তি নজর দিতে বলা হবে। কারণ অঙ্কের ভীতি দূর করতে বিষয়কে পড়ুয়াদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।’’ পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘পাঠ্যক্রম নতুন ভাবে সাজানো হয়েছে। সময় দিলে ভীতি অবশ্যই কাটবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy