Advertisement
১৬ মে ২০২৪

দমদম বিমানবন্দরের টারম্যাকে রক্ষীকে ধাক্কা ট্যাঙ্কারের, প্রশ্নে নিরাপত্তা

সাত সকালে বিমানের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ইন্ডিগো বিমানসংস্থার এক কর্মীকে ধাক্কা মেরে দিল রিল্যায়েন্সের একটি ট্যাঙ্কার। বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা বিমানবন্দরের ভিতরে টারম্যাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৫ ১৭:৫৭
Share: Save:

সাত সকালে বিমানের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ইন্ডিগো বিমানসংস্থার এক কর্মীকে ধাক্কা মেরে দিল রিল্যায়েন্সের একটি ট্যাঙ্কার।

বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা বিমানবন্দরের ভিতরে টারম্যাকে। ইন্ডিগোর ওই কর্মীর নাম অমিত সিংহ (২০)। সূত্রের খবর, ধাক্কা মারার পরে অমিত পড়ে গেলে ট্যাঙ্কারের একটি চাকা তাঁর ডান পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। তাঁকে আহত অবস্থায় বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পায়ে অস্ত্রোপচার করা হতে পারে অমিতের। তাঁর বাড়ি বেসব্রিজে। তিনি মাত্র মাস চারেক আগে ইন্ডিগোর নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত অয়েল ট্যাঙ্কারের চালক পটনার বাসিন্দা অভিষেক কুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ট্যাঙ্কারটিকেও।

বিমানবন্দরের যে এলাকায় বিমান দাঁড়ায় তাকে টারম্যাক বলা হয়। সেখানে ২৭ নম্বর বে-তে দাঁড়িয়েছিল ইন্ডিগোর বিমান। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল তার। তখন যাত্রীরা সব উঠে গিয়েছিলেন। বিমানের দরজাও বন্ধ করে সিঁড়ি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শুধু ইন্ডিগোর কয়েকজন কর্মী বিমানের আশপাশে ছিলেন। অমিতও ছিলেন সেই দলে। সূত্রের খবর, অমিত সেই বিমানের কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিমান ছাড়ার সময়ে তার ডানা কোথাও ছুঁয়ে যাচ্ছে কি না তাই দেখার কথা ছিল অমিতের। এই সময়েই আচমকা পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারে ট্যাঙ্কারটি। ওই বিমানে জ্বালানি ভরেই ট্যাঙ্কারটি ফিরছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, নিজের নির্দিষ্ট রাস্তা ছেড়ে প্রায় ১০ ফুট বিমানের দিকে সরে এসেছিল ট্যাঙ্কারটি। যদিও পুলিশের জেরার মুখে ট্যাঙ্কার-চালক জানান, আচমকাই তাঁর গাড়ির সামনে চলে এসেছিলেন অমিত। শেষ মূহূর্তে ব্রেক মেরে ও কোনও লাভ হয়নি।

টারম্যাকে প্রতি মূহূর্তে বিভিন্ন ধরণের গাড়ি যাতায়াত করে। তার মধ্যে অয়েল ট্যাঙ্কার যেমন থাকে, তেমনই বিমানসংস্থার ছোট ছোট গাড়ি, যাত্রীদের নিয়ে বড় বাস, যাত্রীদের মালপত্র বহনকারী গাড়িও থাকে। বিমানের গায়ে যে সিঁড়ি লাগানো হয় তাকে নিয়েও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গাড়ি যাতায়াত করে। বিশাল টারম্যাকে একটি গাড়ির সঙ্গে অন্য গাড়ির ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা একেবারেই কম। সেরকম ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। কখনও সখনও গড়াতে থাকা বিমানের কাছাকাছি কোনও এক গাড়ি চলে এসেছে, এমন খবরও পাওয়া গিয়েছে। সেখানে টারম্যাকে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তিকে এ ভাবে ধাক্কা মারার ঘটনা খব কমই ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন অফিসারেরা।

নিয়ম মতো, টারম্যাকের যেখান সেখান দিয়ে খেয়াল খুশি মতো এই গাড়িগুলি যাতায়াত করতে পারে না। বিমান কোথা দিয়ে যাবে তার জন্য যেমন নির্দিষ্ট করা পথ করা রয়েছে (যাকে বে বলা হয়), তেমনই এই সব গাড়ি যাতায়াত করার জন্যও দাগ কেটে টারম্যাকে নির্দিষ্ট রাস্তা করা রয়েছে। এ দিন সকালের ঘটনার তদন্তে নেমেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। প্রাথমিক তদন্তে ডিজিসিএ অফিসারেরাও জানতে পারেন, এ দিন নির্দিষ্ট রাস্তা ছেড়ে সরে এসেছিল সেই ট্যাঙ্কারটি। অমিতকে ধাক্কা মারার আগে বা পরে বিমানের সঙ্গে কোনও ভাবে ধাক্কা লাগলে বড়সড় ক্ষতি হতে পারত বলে মনে করছেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা।

কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সেই ট্যাঙ্কারে তখনও জ্বালানি অবশিষ্ট ছিল। তার সঙ্গে বিমানের ধাক্কা লাগলে আগুন লেগে যেতে পারত। তাতে ৩০০ কোটি টাকা দামের বিমানের ক্ষতি হতে পারত। তার চেয়েও বড় কথা সেই সময় ইন্ডিগোর ওই বিমানে যাত্রীরা বসেছিলেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে সকাল ৬টা ৫৬ মিনিটে এবং বিমানটি ছাড়ার কথা ছিল তার ৯ মিনিট পরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE