Advertisement
E-Paper

হুমকি সত্ত্বেও অগোছালো মেট্রোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

আর সতর্কবার্তা এলে ওই প্রহরা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়। ফলে মেট্রোতে হামলা করা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫২
ঢিলেঢালা: (১) চেয়ার আছে, পুলিশ নেই। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে।

ঢিলেঢালা: (১) চেয়ার আছে, পুলিশ নেই। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে।

বারবারই আসে সতর্ক বার্তা। কিন্তু কলকাতা মেট্রোর চিত্রটা থেকে যায় একই রকম।

প্রবেশ পথে নেই কোনও প্রহরা, ডোরফ্রেম মেটাল ডিটেক্টরের বেশির ভাগই অকেজো। গলিতে বসে থাকা দু’এক জন নিরাপত্তারক্ষীও হয় গল্প-গুজবে ব্যস্ত, নইলে ঝিমোচ্ছেন। আর প্ল্যাটফর্মের ভিতরে অবাধ বিচরণ সকলের। এটাই মেট্রোর ‘সতর্কতা’ এবং নিরাপত্তার হাল হকিকত।

এমনিতেই বছরের শেষে উৎসবের মরসুমে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের অনেকটাই সতর্ক থাকার কথা। সেখানে দিন কয়েক আগে এক জঙ্গি সংগঠন কলকাতা-সহ দেশের কয়েকটি শহরে হামলার হুঁশিয়ারি দেওয়ায় সেই নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো হওয়ার আশা করেছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু এখনও সে রকম কিছু না দেখে আতঙ্ক ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, মেট্রোর নিরাপত্তার যে অবস্থা, তাতে কোনও ঘটনা ঘটলে তা সামলানো যাবে তো! মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই সব মানতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, মেট্রোর সর্বত্রই অতন্দ্র প্রহরা থাকে সারাক্ষণ। এমনকী
ট্রেন চলে যাওয়ার পরেও। আর সতর্কবার্তা এলে ওই প্রহরা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়। ফলে মেট্রোতে হামলা করা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।

মোবাইলে মগ্ন পুলিশ। পাশ দিয়ে চলে কে চলে গেলেন, নজর নেই তাতে। বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনে।

যাত্রীদের অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে মেট্রোর প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মেট্রোর নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকা আরপিএফ-এর সিকিউরিটি কমিশনার (সিনিয়র কম্যান্ডান্ট) মানোয়ার খান বলেন, ‘‘বড়দিনের আগেই এই সর্তকবার্তা আমাদের কাছে এসেছে। আমরাও ইতিমধ্যে অনেক ব্যবস্থাই নিয়েছি। এই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন চলবে বেশ কিছু দিন। আগেও এমন সতর্কতা জারি হয়েছিল। তখন বিভিন্ন স্টেশনে বালির বস্তা দিয়ে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রয়োজনে তা ফের চালু হবে।’’

এই সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে কী কী অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার উত্তরে সিকিউরিটি কমিশনার জানান, হামলার কথা মাথায় রেখে কলকাতা মেট্রোর বেশ কয়েকটি স্টেশন বেছে সেখানে নিরাপত্তা অনেক বেশি করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্ক স্ট্রিট, দমদম, কালীঘাট এবং কবি সুভাষ স্টেশনে নিরাপত্তা রক্ষীও বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যাও। তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ ইউনিট।

মেট্রো সূত্রের খবর, এমনিতে একটি স্টেশনে এক জন অফিসার ও দশ জন করে কর্মী থাকেন। এই বিশেষ ব্যবস্থায় তিন অফিসার এবং আঠেরো জন করে কর্মী থাকছেন। এর সঙ্গে রয়েছে একটি ভ্রাম্যমান ইউনিট। তাতে এক মহিলা নিরাপত্তা কর্মী-সহ চার জন আছেন। এসপ্ল্যানেড ও পার্ক স্ট্রিটে একটি করে সাত সদস্যের অতিরিক্ত কমান্ডো বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। মেট্রোর সদর দফতরেও রাখা হয়েছে একটি বিশেষ দল। এ ছাড়া আরপিএফ-এর পাশাপাশি যাত্রী নিরাপত্তার দেখার জন্য রয়েছে কলকাতা পুলিশও। রাখা হয়েছে প্রচুর সংখ্যায় সিভিল ভলান্টিয়ার এবং হোমগার্ডও।

নিরাপত্তাকর্মী উপস্থিত, নেই তবু তল্লাশির বালাই। কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে।

কিন্তু মেট্রোয় যে হারে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে এই সামান্য নিরাপত্তায় হামলা ঠেকানো যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা। বড়দিনের সন্ধ্যায় ভিড় বেড়ে যাওয়ায় দু’দফায় পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের ঢোকার গেট বেশ কিছু ক্ষণ করে বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এর কারণ হিসাবে মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর বড়দিনে যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল প্রায় দেড় লক্ষ। আর তাতেই গোলমাল
হয়েছে। শহরের দর্শনীয় স্থানগুলির পাশাপাশি মেট্রোতেও যে হারে প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে তাতে জঙ্গিদের কাছে কলকাতা মেট্রো অনেকটাই সহজ লক্ষ্য হতে পারে বলে এখন মনে করছেন গোয়েন্দারা। ফলে ভিড়ের মাঝে মিশে থেকে কেউ হামলা চালানোর চেষ্টা করলে তা ঠেকানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

Metro security
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy