এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার বিদেশি গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হল সাত জন। সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের ঘটনা।
পুলিশ জানায়, পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার তরফে দীপক অগ্রবাল নামে এক ব্যক্তি এপ্রিলে অভিযোগ দায়ের করে জানান, তাঁদের সংস্থার বিদেশি গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে কেউ বা কারা তাঁদের সুনাম নষ্ট করছে। সেই সব গ্রাহকদের ঠকিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েও নিচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে বেশ কয়েকটি বিদেশি ফোন নম্বর এবং এ দেশের দু’টি ফোন নম্বরের খোঁজ পায়। কিন্তু তাতে অভিযুক্তদের সন্ধান মেলেনি। ওই সূত্রেই পরে দু’টি ই-মেল আইডির খোঁজ মেলে। সেই সূত্র ধরেই ‘জিয়ন টেকনোলজি প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে সল্টলেকের একটি বিপিও সংস্থা ও তাঁর কর্তা ব্যক্তিদের সন্ধান মেলে। বিপিও-র কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, অভিযোগকারী সংস্থারই দুই কর্মী নদিম আলম ও কাইজার আলম কমিশনের বিনিময়ে বিদেশি গ্রাহকদের তথ্য সরবরাহ করত। এর পরে ওই দুই ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের উপর নজরদারি শুরু করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নদিম ও কাইজারের থেকে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির বিদেশি গ্রাহকদের তথ্যভাণ্ডার সংগ্রহ করত নবীনের সংস্থা। সেই গ্রাহকদের বলা হত, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর পরিষেবা দিতে পারবে না। ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০০ ডলার ফেরত দেওয়া হবে। এমনকী গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় নবীনের সংস্থা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, অনলাইনে টাকা ফেরত দেওয়ার সময় দেখা যেত ২০০০ ডলার ফেরত দেওয়া হয়েছে। আসলে কোনও টাকা দেওয়া হত না। কিন্তু এই ২০০০ ডলারের তথ্য দেখে গ্রাহকেরা নবীনের সংস্থাকে জানাতেন, বেশি টাকা দেওয়া হচ্ছে। পাল্টা নবীনের সংস্থা জানাত, ভুলবশত বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে। তাই তাদের বলে দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বাড়তি ১৮০০ ডলার ফেরত দিতে বলা হত। অনলাইনে গ্রাহকরা ওই পরিমাণ টাকা ফেরত দিতেন। কিন্তু আমেরিকার ৩ গ্রাহক, যাঁরা ইতিমধ্যেই বিধাননগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের অভিযোগ, ১৮০০ ডলার দিলেও নবীনের সংস্থা কোনও টাকাই গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেনি।
নদিম ও কাইজার ছাড়াও অভিযুক্ত জিয়ন টেকনোলজির মালিক নবীন শর্মা-সহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে মোবাইল, ল্যাপটপ, ভিসা কার্ড-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, বিদেশি গ্রাহকদের ঠকানোর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বাজারে পাঁচ নম্বর সেক্টরের সংস্থাটির সুনাম নষ্ট করা হয়েছে।
ধৃতদের বুধবার বিধাননগর এসিজেএম আদালতে তোলা ৪ জনের ৪ দিনের পুলিশি হেফাজত ও ৩ জনের জেল হেফাজত হয়। আদালতে এই মামলায় যাকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে যুক্ত করা হচ্ছে সই বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আরও একবার বিদেশের গ্রাহকরা প্রতারিত হলেন। এর জেরে দেশের বিপিও সংস্থার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে এই দেশ থেকে মুখ ফেরাতে পারে বিদেশি সংস্থাগুলি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy