—প্রতীকী চিত্র।
কেউ জন্মেছে সংশোধনাগারে। কেউ সেখানে এসেছে জন্মের পরে। বহির্জগতে ওদের দেখাশোনা করার কেউ নেই। তাই মা জেলবন্দি হওয়ায় সেখানে চার দেওয়ালের মধ্যেই শৈশব শুরু হয়েছে তাদের। কারা দফতরের উদ্যোগে এমন সাত জন শিশুকে বাইরের স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। রাজ্যে এমন উদ্যোগ এই প্রথম বলে দাবি কারা দফতরের একটি সূত্রের।
এক কারাকর্তা বলেন, ‘‘তিন থেকে ছ’বছরের ওই সাতটি শিশুর মায়েরা আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে বন্দি। সাত জনের মধ্যে কেউ পড়ছে কেজি-তে, কেউ প্রথম শ্রেণিতে। শহরেরই তিনটি স্কুলে পড়াশোনা করছে ওরা।’’ দফতর সূত্রের খবর, প্রত্যেক দিন সরকারি নিরাপত্তায় গাড়িতে করে সংশোধনাগার থেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় ওই সাত খুদেকে। স্কুল শেষে ফিরিয়ে আনা হয় সংশোধনাগারে। কেউ যাতে তাদের জেলের বাসিন্দা বলে চিহ্নিত করতে না পারে, তার জন্য ওদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে নিরাপত্তারক্ষীরাও থাকেন সাধারণ পোশাকে।
দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘উদ্যোগ দফতরের হলেও এই ভাবনার নেপথ্যে রয়েছেন সমাজকর্মী অলকানন্দা রায়।’’ অলকানন্দা বলেন, ‘‘বাড়ি বা পরিবার সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই ওই সাত শিশুর। ওদের বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন কখনওই সহপাঠীদের না বলে যে, ওদের বাড়ি জেলে। নিজেদের আলিপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিতে বলা হয়েছে ওদের।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই শিশুদের সংশোধনাগারে থাকার কোনও কারণ নেই। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ওদের সেখানে থাকতে হয়। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো ওদেরও বাইরের স্কুলে পড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে।’’
জেল কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, ওই শিশুরা বাইরে বেরোনোর সুযোগ পেত খুবই কম। প্রিজ়ন ভ্যানে চাপিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যেতেন তাদের মায়েরা। কয়েক বছর আগে সংশোধনাগারের মধ্যে একটি স্কুল চালুর জন্য কারা দফতরের কাছে জায়গা চান অলকানন্দা। সেই আবেদনে সাড়া দেন কর্তৃপক্ষ। সেখানেই লেখাপড়ায় হাতেখড়ি হয় ওই শিশুদের। এক কারাকর্তা বলেন, ‘‘ওই শিশুরা কেন বাইরের স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে না— সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন ওই সমাজকর্মী। সংশোধনাগার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের একটি কমিটি রয়েছে। তার একটি বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অলকানন্দাকে। সেখানে বিষয়টি উঠলে কমিটি প্রস্তাবে সিলমোহর দেয়।’’
অলকানন্দা জানান, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও এমন কয়েকটি শিশু রয়েছে, যাদের মায়েরা জেলবন্দি। তাদেরও বাইরের স্কুলে ভর্তি করানো যায় কি না, তা নিয়ে কারা দফতরের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy