Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Coronavirus

নিয়ম মেনে খুলল কিছু উপাসনালয়

কেন্দ্রের নির্দেশিকা মোতাবেক সোমবার, ৮ জুন থেকে সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খুলবে ভেবে এ দিন সকালেই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে দর্শনে এসেছিলেন সিঁথির মৌসুমী ভট্টাচার্য। কিন্তু মন্দির খোলেনি।

প্রার্থনা: থার্মাল স্ক্রিনিং করার পরে আদ্যাপীঠ মন্দিরে ঢুকেছেন এক ভক্ত (বাঁ দিকে)। টিপু সুলতান মসজিদে দূরত্ব-বিধি মেনেই চলছে নমাজ পড়া (ডান দিকে)। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার, সুদীপ্ত ভৌমিক

প্রার্থনা: থার্মাল স্ক্রিনিং করার পরে আদ্যাপীঠ মন্দিরে ঢুকেছেন এক ভক্ত (বাঁ দিকে)। টিপু সুলতান মসজিদে দূরত্ব-বিধি মেনেই চলছে নমাজ পড়া (ডান দিকে)। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার, সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২০ ০১:৪২
Share: Save:

সিংহদুয়ারের গ্রিলের দরজায় বেশ কিছু ক্ষণ মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রৌঢ়া। গাছের মাথা ভেদ করে চোখে পড়ছে মন্দির-চূড়ার খানিকটা। প্রৌঢ়া বললেন, ‘‘মাগো কবে যে তোমার দর্শন পাব!’’

কেন্দ্রের নির্দেশিকা মোতাবেক সোমবার, ৮ জুন থেকে সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খুলবে ভেবে এ দিন সকালেই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে দর্শনে এসেছিলেন সিঁথির মৌসুমী ভট্টাচার্য। কিন্তু মন্দির খোলেনি। বেলঘরিয়ার সীমা গোমেশ, শ্রীরামপুরের বুলু বিশ্বাসেরাও বাইরে থেকেই প্রণাম সেরেছেন। খোলা থাকার খবর পেয়ে আদ্যাপীঠ মন্দিরে যান অনেকে। সেখানে ‘থার্মাল স্ক্রিনিং’ করে একটি ছোট দরজা দিয়ে দশ জন করে ঢোকানো হয়।

বিকেলের ধর্মতলায় সেক্রেড হার্ট গির্জার অন্দরেও গুটিকয়েক প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াকে প্রার্থনায় নিমগ্ন দেখা গেল। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের জুডি রেগো বা তালতলার অ্যান্টনি সালদানহারা গুটিগুটি হাজির বর্ষার বৃষ্টিশেষে। জুডি বলেন, ‘‘এই দুঃসময়ে মনটা ভাল নেই। ছোটবেলা থেকে চেনা গির্জায় আলাদা শান্তি পাই! তাই চলে এলাম।’’

আরও পড়ুন: রেস্তরাঁ খুলল খাবারের পসরা নিয়ে, অপেক্ষা মানুষের ভয় কাটার

ভক্তি-বিশ্বাসের টানেও সতর্কতা-বিধি নিয়ে আপসের চিহ্ন তেমন দেখা যায়নি ধর্মস্থানগুলিতে। নাখোদা মসজিদ বা ধর্মতলা-টালিগঞ্জের টিপু সুলতান মসজিদে মাস্ক ছাড়া নমাজ পড়তে ঢোকায় রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। নাখোদা মসজিদে এ দিন একটিমাত্র গেট খোলা ছিল। মূল গেটটি বন্ধ। নমাজ পড়ার সময়ে কী কী করণীয়, তা গেটের সামনে নোটিসে লেখা। নাখোদার ট্রাস্টি নাসের ইব্রাহিমের কথায়, ‘‘যাবতীয় সুরক্ষা-বিধি মেনেই মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।’’ টালিগঞ্জে টিপু সুলতান মসজিদে হাত ধোওয়ার জন্য আলাদা জায়গায় সাবান মজুত করা হয়। ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদও সাবানে হাত ধোওয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে বলে জানান মোতায়াল্লি আনোয়ার আলি শাহ। ফুরফুরা শরিফেও সতর্কতার দিকে খেয়াল রাখছেন মুখ্য নির্দেশক ত্বহা সিদ্দিকী। ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আব্দুল গনি বলেন, ‘‘করোনার প্রকোপ রুখতে এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য সরকারের নির্দেশমাফিক সর্বাধিক দশ জনকে নিয়ে আমরা মসজিদে নমাজ পড়ছি। রাজ্যের পঞ্চাশ হাজার মসজিদে এই বার্তাই গিয়েছে।’’

বেশ কয়েকটি ধর্মস্থানই এখনও দরজা খুলতে পিছপা। যেমন দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক, ডালা আর্কেড থেকে গর্ভগৃহ পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রেখে দর্শন-বিধি ঠিক করা হয়েছে। মন্দিরের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরী বলেন, ‘‘বুধবার পুরো ব্যবস্থার মহড়া করে দেখব। তার পরেই মন্দির খোলার দিন ঠিক হবে।’’

শহরের গির্জাগুলিও এখনই পুরনো আচার-অনুষ্ঠানে ফিরতে রাজি নয়। কবে সম্মিলিত প্রার্থনা শুরু হবে তার আভাস দেননি ক্যাথলিকদের আর্চবিশপ টমাস ডিসুজ়া। কলকাতা ডায়োসিসের প্রোটেস্ট্যান্ট বিশপ পরিতোষ ক্যানিং বলেন, ‘‘জুলাইয়ের আগে কিছুই হবে না।’’ বড় গির্জাগুলির দরজা এ দিন কার্যত বন্ধই ছিল।

সোমবার শহরের পুরনো আমেজ অনেকটা ফিরলেও তুলনায় নির্জন ছিল উপাসনালয়গুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Religious Places
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE