স্টার টিভির সঙ্গে এমএসওদের গোলমাল চলছেই। এর ফলে কেব্ল টিভি দেখার খরচ মাসে ৩৫-৪০ টাকা করে বাড়ছে।
টেলিভিশনের আদালত ‘টিডিস্যাট’এর নির্দেশ ছিল ১০ নভেম্বরের মধ্যে দেশের সব এমএসও-র সঙ্গে স্টার টিভির প্রস্তাব মতো নতুন চুক্তি করতে হবে। কিন্তু একমাত্র স্টার সংস্থার সহযোগী এমএসও ডেন নেটওয়ার্কস ছাড়া আর কেউই চুক্তি স্বাক্ষরে রাজি হয়নি। স্টারের বণ্টন বিভাগের সহ সভাপতি বিবেক টাকালকর ও আইন বিভাগের সহ সভাপতি পুলক বাগচী কলকাতায় এসে জানিয়ে গেলেন, তাঁরা তাঁদের চ্যানেল থেকে বেছে নেওয়ার অধিকার দিতে চাইছেন দর্শককে। পরে অবশ্য ছবিটা বদলায়।
গত বুধবার সন্ধ্যায় শহরের কিছু এলাকায় হঠাত্ স্টারের কয়েকটি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়। পরে জানা যায়, স্টারের নয়া ব্যবস্থা অনুযায়ী এমএসওগুলি সম্প্রচারে বদল ও ‘আপগ্রেড’ করতে চ্যানেল সাময়িক বন্ধ রেখেছিল। তবে বৃহস্পতিবার এমএসওদের তরফে জানানো হয়, সব মিলিয়ে কেব্ল চ্যানেলের দাম বাড়ছেই। প্রতি এমএসও সংস্থার পক্ষ থেকে দর্শকের জন্য তিনটি প্যাকেজ দেওয়া হয়— ১৮০, ২৩০ এবং ২৮০ টাকার। স্টারের নতুন ব্যবস্থায় প্রতিটি প্যাকেজের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৫-৪০ টাকা যোগ হবে। এ নিয়ে সব এমএসও-র সঙ্গে স্টারের চুক্তি হয়ে গিয়েছে বলে চ্যানেল সংস্থার এক সূত্রের দাবি।
বিবেকবাবুর দাবি, “স্টার দর্শকদের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে চাইছে। দর্শক যে চ্যানেল দেখতে চান, শুধু তারই পয়সা দিন। এত দিন এমএসওরা পছন্দের চ্যানেল নিয়ে প্যাকেজ তৈরি করে দিত। দর্শকের বেছে নেওয়ার উপায় থাকত না। আমরা যে ব্যবস্থা চালু করতে চাইছি, সেখানে দর্শক প্রাধান্য পাবেন। বাঙালি দর্শক না-চাইলে তামিল চ্যানেল দেখতে হবে না।”
এমএসও সংস্থা মন্থনের প্রধান সুদীপ ঘোষ বলেন, “এত দিন স্টারের পরামর্শ অনুযায়ী এমএসও-রা ওদের একগোছা চ্যানেল কিনত প্যাকেজ ব্যবস্থায়। দর্শকদেরও সে ভাবেই দেখাত। তাতে দর্শকদের কম পয়সায় চ্যানেল দেখানো যেত। সোনি এবং জি টিভি সংস্থা এখনও সে ভাবেই লেনদেন চালু রেখেছে। এখন স্টার বলছে, ওদের প্রতিটি চ্যানেল আলাদা ভাবে কিনে সেগুলি নিয়ে প্যাকেজ তৈরি করে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।” নতুন ব্যবস্থায় দর্শকের ঘাড়ে বেশি পয়সার বোঝা চাপবে না বলে স্টার কর্তারা বোঝাতে চেষ্টা করলেও এমএসওরা তা মানতে নারাজ। এমএসওগুলির বক্তব্য, প্যাকেজ করে চ্যানেল দেখানো হচ্ছে বলে লোকে দেখছে। বেছে নেওয়ার ব্যবস্থা হলে তাঁরা নেবেন না।
এত দিন কলকাতার এমএসওগুলির থেকে স্টার ইন্ডিয়া ২১টি চ্যানেল বিক্রি করে বছরে ১৮-১৯ কোটি টাকা পেত। নয়া ব্যবস্থা চালু হলে তা হবে ২৬-২৭ কোটি। টেলিভিশন ব্যবসা মহলে খবর, টিডিস্যাটের রায় মানতে গিয়ে স্টার বার্ষিক প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বিজ্ঞাপন রাজস্ব হারাবে।
ট্রাইয়ের এক সূত্র জানান, সারা বিশ্বে পে চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো নিষিদ্ধ। অনুষ্ঠান দেখার জন্যই দর্শক পয়সা দিয়ে চ্যানেল কেনেন। সেখানে বিজ্ঞাপন দেখানোর অর্থ হল ক্রেতা-দর্শকের অধিকার খর্ব করা। কিন্তু ভারতে এই যুক্তি খাটে না। তাই টেলিভিশন কোম্পানিগুলির কাছে বিজ্ঞাপনের জগত কার্যত সোনার খনি। পে চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো নিষিদ্ধ করতে কয়েক বছর আগে ট্রাই একবার সরকারের কাছে সুপারিশ করেছিল। টিভি কোম্পানিগুলির প্রবল চাপে তা সম্ভব হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy