প্রতীকী ছবি।
রোগটা জানা। তাতে এ বার নতুন মোড়কে দাওয়াই প্রয়োগে সচেষ্ট হল স্বাস্থ্য ভবন। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যবহারের অভিযোগ নতুন নয়। যা আটকাতে পুরো প্রক্রিয়াকেই আক্ষরিক অর্থে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। তারই অঙ্গ হিসেবে আপাতত শহরের তিনটি হাসপাতালকে বেছে নিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা।
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বছর ছ’য়েক আগে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে প্রথম নিখরচায় ওষুধ দেওয়া শুরু হয়। ২০১৫ সালে সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ঘটে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির। এই ব্যবস্থার হাত ধরে নিখরচায় দামি ওষুধ পান রোগীরা। তবে একই সঙ্গে সুযোগের অপব্যবহার ও অপচয়ের অভিযোগও মাঝেমধ্যেই ওঠে। সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বহির্বিভাগে প্রতিদিন যত রোগীর ভিড় হয়, তাতে তাঁরা সকলেই রোগী কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ থেকে যায়। কাউকে রোগী সাজিয়ে বিনামূল্যে ওষুধ নিয়ে তা বিক্রি করার চক্র গড়ে উঠতে পারে।’’ আর এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘ওষুধ নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পড়ে। অনেক সময়ে রোগীদের অনুরোধে প্রয়োজন না থাকলেও বাড়তি ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসকেরা। তাতে অপচয়ের আশঙ্কা থাকে।’’
স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কোন হাসপাতাল থেকে কোন রোগীকে কত ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, নতুন ব্যবস্থায় সব জানতে পারব। অপব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি ওভার-প্রেসক্রিপশন হচ্ছে কি না, তা-ও দেখা হবে।’’ কী সেই ব্যবস্থা? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, হাসপাতালের বহির্বিভাগ, রোগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ প্রাপ্তি— গোটা প্রক্রিয়াকে এক সুতোয় গাঁথাই হল সেই পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, গার্ডেনরিচ স্টেট জেনারেল এবং বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে মহড়ার মাধ্যমে ওই পরিকল্পনার খামতিগুলিকে চিহ্নিত করতে চাইছে স্বাস্থ্য ভবন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নতুন ব্যবস্থায় প্রত্যেক রোগীর ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ (ইউআইএন) সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে। তা খাদ্যসাথী কার্ড হতে পারে অথবা মোবাইল নম্বর। রোগীর একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বরও থাকছে। তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সার্ভারে তোলা থাকবে। যাতে ইউআইএন-এর সাহায্যে রাজ্যের যে কোনও হাসপাতাল থেকে ওই তথ্য পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, পরিকল্পনার মূল দু’টি ভাগ রয়েছে। ইউআইএন এবং ই-প্রেসক্রিপশন।
স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক জানান, বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে যে মহড়া চলছে, সেখানে বহির্বিভাগে প্রত্যেক চিকিৎসকের পৃথক ‘লগ-ইন আইডি’ রয়েছে। রোগীর নাম, ঠিকানার পাশাপাশি কোন চিকিৎসক তাঁকে দেখেছেন, সব তথ্যই অনলাইনে নথিভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রেসক্রিপশনে ‘কিউ আর’ কোড রয়েছে। ফার্মাসিতে ‘কিউ আর’ কোড স্ক্যান করার সঙ্গে কী কী ওষুধ, মোট কত ওষুধ দেওয়া হয়েছে, তার রেকর্ড রাখছে স্বাস্থ্য ভবন।
বছর দু’য়েক আগে নিখরচার ওষুধের অপচয় ও অপব্যবহার রোধে কী করণীয়, তা নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। স্বাভাবিক ভাবে নতুন ব্যবস্থা কতখানি বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সন্দিহান স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের একাংশ। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রত্যেক পরিকল্পনার ভাল এবং খারাপ, দুটো দিকই রয়েছে। সেই জন্য পাইলট প্রকল্প করে ভুল-ত্রুটি দেখে নিতে চাইছি। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বছরে একশো কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy