স্কুলের পরে এ বার কারিগরি শিক্ষার সিলেবাসেও আসতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প। হাতে-কলমে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মানসিক ভাবে সচেতন করার পাঠ দেওয়া হবে রাজ্যের ৫০টি কারিগরি শিক্ষা কলেজে। সম্প্রতি পরিবহণ দফতরের সঙ্গে এক বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতর।
কলকাতার রাস্তায় বেড়ে চলা একের পর এক পথ-দুর্ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে প্রশাসনের। দুর্ঘটনা কমাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পথ-নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে পুলিশ ও পরিবহণ দফতর। কিন্তু তাতেও কমছে না বেপরোয়া গাড়ির দাপট। দিন কয়েক আগেই জেলা থেকে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে কয়েক জনের। সোমবারও শহর জুড়ে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেপরোয়া গাড়ি ছোটানোর এই প্রবণতা
রুখতেই তাই পথ-নিরাপত্তাকে কারিগরি শিক্ষার পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির এই সিদ্ধান্ত।
স্কুলশিক্ষায় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সিলেবাসে ইতিমধ্যেই পথ-নিরাপত্তা রয়েছে। সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার জানান, রচনা হিসেবে এবং শারীর-শিক্ষার সিলেবাসে থাকছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’। পাশাপাশি, অনেক পাঠ্যবইয়ের পিছনের পোস্টারেও থাকছে এই সচেতনতার প্রচার। এ বার কারিগরি শিক্ষার সিলেবাসে বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত হলেও তাতে কী কী থাকবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিলেবাস কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘সিলেবাসের রূপরেখা তৈরি হয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যেই সবিস্তার সিলেবাসও তৈরি হবে।’’
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, খারাপ ভাবে গাড়ি চালিয়ে পথ-দুর্ঘটনার তুলনায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জেরেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তাই মোটর ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নিলে এবং পরিবহণ দফতরের ‘টেস্ট ড্রাইভিং’–এ গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেলেই দুর্ঘটনা কমবে না। এর জন্য চাই
মানসিক সচেতনতা।
কারিগরি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) অসীমা পাত্র বলেন, ‘‘পুলিশ সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চালাচ্ছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে আমাদের সিলেবাসে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর অন্তর্ভুক্তি হবে। নিজের চেয়ে অন্যের প্রয়োজনকে বাড়তি গুরুত্ব দিলেই বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা কমে। ওই মানসিকতা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’’ মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘স্কুলস্তর থেকে পথ-নিরাপত্তা নিয়ে শিখলে তার সুফল মিলবে বলেই মনে
করা হচ্ছে।’’
এক পরিবহণকর্তা বলেন, ‘‘ট্রাফিক আইন মানার উপরেই সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। তা সে স্কুলে পড়াশোনার মাধ্যমে হোক, বা রাস্তায় নাগরিকদের আইন মানতে বাধ্য করেই হোক। সে কারণে ট্রাফিকের পরিকাঠামোকে আরও উন্নত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’