Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জামিনের শর্ত নিয়ে গোপালের হলফনামা তলব

বছর এগারো আগে-পরের দু’টি ফৌজদারি মামলা। এবং দু’টিতেই মূল অভিযুক্ত বড়বাজারের দাগি দুষ্কৃতী গোপাল তিওয়ারি। পুরনো মামলাটিতে শর্তাধীন জামিন পাওয়ার বছর চারেক পরে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৯
Share: Save:

বছর এগারো আগে-পরের দু’টি ফৌজদারি মামলা। এবং দু’টিতেই মূল অভিযুক্ত বড়বাজারের দাগি দুষ্কৃতী গোপাল তিওয়ারি। পুরনো মামলাটিতে শর্তাধীন জামিন পাওয়ার বছর চারেক পরে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে। সেই পুরনো মামলায় সে জামিনের শর্ত ভেঙেছে কি না, হলফনামা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে তা জানাতে হবে ওই অভিযুক্তকেই।

পুরনো মামলাটি বড়বাজারের পোস্তা এলাকার। খুনের চেষ্টার সেই মামলায় গোপালকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার সময় শীর্ষ আদালত বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছিল। কিন্তু জামিনে মুক্ত থাকাকালীন আবার একটি অপরাধের ঘটনায় তার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় পুলিশের তরফে অভিযোগ ওঠে যে, সে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া শর্ত লঙ্ঘন করেছে। সে সত্যিই সেগুলো লঙ্ঘন করেছে কি না, চার সপ্তাহের মধ্যে তা জানানোর জন্য শুক্রবার গোপালকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

২০০৫ সালে পোস্তা এলাকার এক চায়ের দোকানদারকে উচ্ছেদ করার জন্য তাঁকে খুনের চেষ্টা হয়। মিষ্টি ও ভুজিয়ার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ‘সুপারি’ পেয়ে গোপাল এবং তার শাগরেদরাই ওই চায়ের দোকানদারকে মেরে তুলতে গিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যার বিরুদ্ধে সুপারি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, সেই ভুজিয়া ব্যবসায়ী প্রভুশঙ্কর অগ্রবালকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। খুনের চেষ্টার সেই মামলায় ধরা পড়ে প্রায় ছ’বছর শ্রীঘরে কাটাতে হয়েছিল গোপালকে। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্তি পায় সে।

কিন্তু তার প্রায় সাড়ে চার বছর পরে, ২০১৫ সালের এপ্রিলে কলকাতায় পুরভোটের দিন বিকেলে গিরিশ পার্কে এক সাব-ইনস্পেক্টরকে গুলি চালিয়ে জখম করার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে ফের জড়িয়ে যায় গোপালের নাম। গা-ঢাকা দেয় সে। সেই ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পরে ফের গ্রেফতার হয় গোপাল। সেই থেকে ওই অভিযুক্ত জেলেই আছে।

গিরিশ পার্কের ঘটনার পরে গোপালকে ঘিরেই দু’টি মামলার মধ্যে যোগসূত্র তৈরি হয়। এসআই-কে গুলির ঘটনা তুলে ধরে কলকাতা পুলিশের তরফে সুপ্রিম কোর্টে গোপালের জামিন খারিজের আবেদন করা হয়। কলকাতা পুলিশের বক্তব্য, পোস্তার মামলায় যে-সব শর্তে গোপাল জামিনে মুক্তি পেয়েছিল, সেগুলো সে লঙ্ঘন করেছে। তাই ওই মামলায় তার জামিন বাতিল করা হোক। পুলিশের সেই আবেদনেরই শুনানি ছিল শুক্রবার। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি প্রফুল্ল পন্থের বেঞ্চ গোপালকে এই ব্যাপারে হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে।

পুরভোটের বিকেলে পুলিশকে গুলি করার ঘটনায় গোপালের নাম জড়ানোর পর থেকে উঠে আসছিল তৃণমূলের এক নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়কের নামও। গিরিশ পার্কের সেই মামলায় বুধবার গোপালকে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে গোপাল সে-দিন দাবি করেছিল, এসআই-কে গুলি করার ঘটনায় সে কোনও ভাবেই জড়িত নয়। তার একদা আশ্রয়দাতা, শাসক দল তৃণমূলের এক প্রাক্তন বিধায়ক ওই ঘটনায় জড়িত বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল সে। তবে সে নিজে ওই প্রাক্তন বিধায়কের নাম করেনি। কিন্তু গোপালের স্ত্রী কামিনী তিওয়ারি দিল্লি থেকে সরাসরি ওই তৃণমূল নেতার নাম করেন। গোয়েন্দাদের একাংশ অবশ্য ওই দিনই জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের মামলার প্রেক্ষিতেই গোপাল আট ঘাট বেঁধে ওই সব দাবি করেছে। আসলে সে তদন্তের অভিমুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। গোয়েন্দাদের ওই অংশের বক্তব্য, গোপালের অভিযোগ মিথ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gopal tiwari summon affidavit supreme court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE