Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ট্যাবলোর গাড়ি রাখা নিয়ে জটের আশঙ্কায় পুলিশ

রাস্তার দু’ধারে মঞ্চ বাঁধা চলছে পুরোদমে। অতিথি তালিকা মোটামুটি পাকা। এ দিকে, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সামিল পুজো কমিটির ট্যাবলো-গাড়ি কোথায় অপেক্ষা করবে, তা নিয়েই চিন্তায় কলকাতা পুলিশ।

বিসর্জনের শোভাযাত্রা উপলক্ষে সাজছে রেড রোড। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

বিসর্জনের শোভাযাত্রা উপলক্ষে সাজছে রেড রোড। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৮
Share: Save:

রাস্তার দু’ধারে মঞ্চ বাঁধা চলছে পুরোদমে। অতিথি তালিকা মোটামুটি পাকা। এ দিকে, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সামিল পুজো কমিটির ট্যাবলো-গাড়ি কোথায় অপেক্ষা করবে, তা নিয়েই চিন্তায় কলকাতা পুলিশ।

প্রায় ৩৮টি পুজো কমিটির তরফে চারটি করে গাড়ির প্রতিমা ও মণ্ডপের রেপ্লিকা বয়ে ওই শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার কথা। ফলে এত সংখ্যক গাড়িকে কোথায় রেখে ট্যাবলো তৈরি করা হবে, সেটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। সেই সঙ্গেই গোল বেধেছে প্রদর্শনীতে সুযোগ না পাওয়া অন্য পুজোর গাড়ি কোন পথে বাবুঘাট বা বাজে কদমতলা ঘাটে বির্সজনে যাবে, তা নিয়েও। কারণ এত দিন মেয়ো রোড, ডাফরিন রোড কিংবা আর আর অ্যাভিনিউ ধরে ওই পুজোগুলি বাবুঘাটে বিসর্জনে যেত। কিন্তু ওই দিন রেড রোডের প্রদর্শনীর কারণে বন্ধ রাখা হবে মেয়ো রোড, ডাফরিন রোডের মতো রাস্তা। এর পাশাপাশিই কাজের দিনে রেড রোড সংলগ্ন রাস্তা প্রদর্শনীর জন্য দুপুর থেকে বন্ধ থাকলে কী করে দক্ষিণ এবং মধ্য কলকাতাকে যানজট মুক্ত রাখা যায়, তা নিয়েও উদ্বেগে পুলিশ।

লালবাজার জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার বিসর্জনের শেষ দিনে অন্তত ৩৮টি পুজো কমিটিকে বিকেলের মধ্যে রেস কোর্সের পাশে খিদিরপুর রোডে হাজির হতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ব বাংলা পুরস্কারে সম্মানিত ‘সেরার সেরা’, ‘সেরা মণ্ডপ’, ‘সেরা প্রতিমা’, ‘সেরা আলোকসজ্জা’র পুজোগুলি থাকবে। থাকবে কলকাতা পুরসভা
ও কলকাতা পুলিশের বিচারে পুরস্কৃত সেরা পুজোগুলিও।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে পুজো কমিটিগুলি খিদিরপুর রোডে হাজির হবে। সেখানেই চারটি করে ট্যাবলো সাজাবে প্রতিটি পুজো। পরে ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে থেকে রেড রোড ধরে পুলিশ মেমোরিয়াল পর্যন্ত শোভাযাত্রা হবে। যা দেখতে রাস্তার দু’ধারে হাজির থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়-সহ ভিভিআইপিরা। রেড রোডে ওই প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ পুজো কমিটির গাড়ি বাজে কদমতলা, দইঘাট বা বাবুঘাটে বিসর্জন দিতে যাবে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি শোভাযাত্রা শেষে নিজেদের এলাকায় বির্সজন দেবে। পুলিশ সূত্রের খবর, সেরার সেরা তালিকায় থাকা দক্ষিণ কলকাতার এক পুজো ওই শোভাযাত্রায় অংশ না নিয়ে চিরাচরিত ভাবে দশমীর দিন তাঁদের প্রতিমা বির্সজন করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে তালিকায় থাকা অন্য একটি ক্লাবেরও শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশকে বেশি চিন্তায় রেখেছে শোভাযাত্রা শুরুর সময়। কারণ অন্তত দেড়শো গাড়ি বা ট্যাবলো ওই শোভাযাত্রায় আসবে। তাদের জন্য নির্ধারিত খিদিরপুর রোডের দৈর্ঘ্য কম করে এক কিলোমিটার। ফলে অত সংখ্যক গাড়ি কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশের একাংশ। কারণ খিদিরপুর রোডের শেষে হেস্টিংস মোড়ের কাছে শোভাযাত্রার কোনও গাড়ি রাখা যাবে না।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, খিদিরপুর রোডের দু’পাশের রাস্তা শোভাযাত্রার গাড়িতে ভরে গেলে আমরা গাড়িগুলিকে সেন্ট জাজেস রোডে পাঠিয়ে দেব। তবে স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে হেস্টিংস মোড়ের দিকে কোনও গাড়িকে আসতে দেওয়া হবে না।

পুলিশ জানায়, একই ভাবে চিন্তায় ফেলছে পুলিশ মেমোরিয়ালের সামনে থেকে গোষ্ঠ পাল সরণি ধরে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত যাওয়া গাড়িগুলি। সাধারণত এক-একটি পুজোর প্রতিমা গাড়ি থেকে নামিয়ে ঘাটে বির্সজন দিতে কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট লাগে। ফলে পুলিশের একাংশের ধারণা, ওই সময়ে পিছনে থাকা শোভাযাত্রার গাড়ি বাধাপ্রাপ্ত হলে রেড রোডে তার প্রভাব পড়তে পারে। বিঘ্নিত হতে পারে প্রদর্শনী।

পুলিশ সূত্রের খবর, সমস্যা সমাধানে বুধবার এলাকা প্রর্দশন করে ট্রাফিক বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুলিশকর্তারা। সেখানে পুলিশের তরফে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া গাড়ির লাইন লম্বা হলে তাদের অপেক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে বঙ্গবাসী কলেজ মাঠ বা পলাশি গেট রোডে। এ ছাড়াও নানা বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আজ, বৃহস্পতিবার পুজো কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে লালবাজারের কর্তারা সব ব্যবস্থা চুড়ান্ত করবেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।

লালবাজার সূত্রে খবর, স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকছে ওই দিনেও। ফলে পুজো কমিটিগুলি নিজেদের প্রতিমা নিয়ে পৌঁছলে বন্ধ করে দেওয়া হবে রেড রোড সংলগ্ন সব রাস্তা। ফলে শোভাযাত্রায় না থাকা পুজো কমিটির গাড়িকে কোন পথে গঙ্গার ঘাটে পাঠানো হবে, তা চুড়ান্ত হয়নি বলেই লালবাজারের খবর।

এই শোভাযাত্রা ঘিরে শুক্রবার যানজটের আশঙ্কা করছে পুলিশেরই একাংশ। কাজের দিন ওই সব রাস্তা বন্ধ থাকলে বিকল্প কোন রাস্তায় গাড়ি চালানো হবে, তা নিয়েও চিন্তায় ট্রাফিক কর্তারা। পুলিশ সূত্রে খবর, দমদম, বেহালা, ঠাকুরপুকুর থেকেও ক্লাবগুলি শোভাযাত্রায় আসবে। এবং তাঁরা কেউ কেউ ফিরে গিয়ে চিরাচরিত ঘাটে বিসর্জন দেবে। ফলে দুপুর থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় যানজট শুরু হবে। যার রেশ থাকবে সন্ধ্যাতেও। এ ছাড়া থাকছে বেশ কিছু সাধারণ পুজোর বিসর্জন। পুলিশ সূত্রের খবর, রেড রোড, খিদিরপুর রোড বন্ধ থাকায় মধ্য কলকাতা থেকে বিদ্যাসাগর সেতু বা এজেসি বসু রোডের দিকে যাওয়া গাড়িকে ঘুরে যেতে হবে। দক্ষিণ কলকাতা থেকে ডালহৌসির দিকে যাওয়া গাড়িকে পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুল দিয়ে ধর্মতলার দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের একাংশের দাবি, পরমা উ়ড়ালপুলের সঙ্গে এজেসি বসু রোডের সংযোগের ফলে হসপিটাল রোড-ডিএল খান রোডের মোড়ের গাড়ির চাপ অত্যাধিক হারে বেড়েছে। যার জেরে ওই উড়ালপুলের গাড়ির লম্বা লাইন থাকছে। শুক্রবার হসপিটাল রোডের একাংশ-সহ রেড রোড সংলগ্ন বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকায় তা যে পুলিশের বাড়তি মাথাব্যথার কারণ হবে, তা মনে করছেন বাহিনীর অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tablo cars traffic jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE