Advertisement
E-Paper

কষ্ট ভুলে বেঁচে থাকার গান

ছোট্ট শরীরগুলোয় অসুখ বাসা বাঁধে প্রকৃতিরই নিয়মে। চিকিৎসাও চলে নিজের মতো। এই দুই লড়াইয়ে কখনও অসুখ জিতে যায়, ছিনিয়ে নেয় প্রাণ। কখনও বা চিকিৎসার জয়ে হাসি ফোটে ম্লানমুখে।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০১
নাচে-গানে মঞ্চ মাতালো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তেরা। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নাচে-গানে মঞ্চ মাতালো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তেরা। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ছোট্ট শরীরগুলোয় অসুখ বাসা বাঁধে প্রকৃতিরই নিয়মে। চিকিৎসাও চলে নিজের মতো। এই দুই লড়াইয়ে কখনও অসুখ জিতে যায়, ছিনিয়ে নেয় প্রাণ। কখনও বা চিকিৎসার জয়ে হাসি ফোটে ম্লানমুখে। কিন্তু এই দুইয়ের টানাপড়েনে যেন কম না পড়ে যায় বেঁচে থাকার আনন্দ-ধারায়, বাদ না পড়ে যায় জীবনের উচ্ছ্বলতা। এই চিন্তা থেকেই শনিবার রবীন্দ্র সদনের মঞ্চে আয়োজিত হল এক অনুষ্ঠান। লিউকোমিয়া, থ্যালাসিমিয়া, হিমোফিলিয়া— এই তিন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত খুদেরা হাসি-গান-নাচ-নাটকে চেখে নিল ‘কোয়ালিটি অব লাইফ’। নতুন বছরকে জানাল আহ্বান।

যোগেশ দত্ত মূকাভিনয় দলের সদস্যেরা কিছু উপস্থাপনার মাধ্যমে বার্তা দিয়ে গেল শান্তির, সবুজের, প্রাণের। থ্যালাসিমিয়ায় আক্রান্ত খুদেরা আয়োজন করল সুন্দর নাটক ‘আজব বিচার’। তার পরেই মঞ্চে এল আর এক খুদের দল। কেউ সেজেছে চুলবুল পাণ্ডে, কেউ বা মুন্নাভাই। কেউ বা গোলাপী ফ্রকে আর ডানায় আকাশ থেকে নেমে আসা খুদে পরীটি। ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’-য় অংশগ্রহণ করা এই খুদেদের মুখের মাস্ক জানিয়ে দিল, ভাল নেই তারা।

এই অনুষ্ঠান আয়োজনকারী সংগঠন কলকাতা হেম্যাটোলজি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (‌খেরি)-র প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর অনামিকা চৌধুরী বলছিলেন, ‘‘লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত এই বাচ্চাগুলোর কেমোথেরাপি চলছে এনআরএস হাসপাতালে। সেখান থেকেই এদের নিয়ে অনুষ্ঠানের মহড়া করানো হয়েছে, আয়োজন করা হয়েছে অনুষ্ঠান।’’ খেরির দীর্ঘ দিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই আজ এ ভাবে মঞ্চ মাতাচ্ছে তারা। তিনি জানালেন, থ্যালাসিমিয়ার মতো মারণ-অসুখ রোখার একমাত্র উপায় সচেতনতা। এই রোগের কেরিয়ার যে কোনও কেউ হতে পারে, বিয়ের আগে রক্তপরীক্ষা ছাড়া যে এই রোগ এড়ানোর কোনও উপায় নেই, সেটা মানুষকে বোঝানোটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আজও।

২০১২-এ যে মানুষটার হাত ধরে খেরি পথ চলতে শুরু করেছিল, সেই প্রান্তর চক্রবর্তী বলছিলেন, দীর্ঘ দিনের অসুখের একটা বড় খারাপ দিক হয়ে ওঠে, হতাশা। ‘‘আমার বয়সি বাচ্চারা খেলছে, ঘুরছে, স্কুলে যাচ্ছে, আর আমি হাসপাতালের ঠান্ডা ঘরে দিনের পর দিন শুয়ে থাকছি’— এই অনুভূতিটাকে হারিয়ে দেওয়া সহজ নয়। ওদের একটু ভাল রাখার জন্য হাসিমুখটুকু দেখার জন্যই আমাদের এত চেষ্টা।’’

বছর ৩৫-র সুস্মিতা নাথ নিজে থ্যালাসিমিয়ায় আক্রান্ত। দিন পনেরো ছাড়া ছাড়া রক্ত নিতে হয় তাঁকে। কিন্তু এই মারণ-অসুখের কাছে হার মানেনি মনের জোর। নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করে, প্রয়োজনীয় ডিগ্রি অর্জন করে আজ এনআরএস হাসপাতালের হেম্যাটোলজি বিভাগে শিশু ও শিশুর বাবা-মায়েদের কাউন্সেলিং করাচ্ছেন তিনি। ‘‘আমি আট বছর বয়সেই জেনে গিয়েছিলাম, আমার এই অসুখ সারার নয়। ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু উঠেও দাঁড়িয়েছি। হারার আগেই হেরে যেতে চাইনি,’’ বললেন সুস্মিতা।

আর ছিলেন রোগক্লিষ্ট খুদে শিশুদের ততোধিক ক্লিষ্ট বাবা-মায়েরা। অসুখের কথা শুনেই যাঁদের চোখে পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, তাঁরাই আজ ঝিকিমিকি চোখে দেখলেন, কেমন মঞ্চ আলো করে রইল তাঁদের সন্তানেরা। যাঁরা আর পাঁচ জন শিশুর মতোই হাসি-খেলার অধিকার নিয়ে জন্মেছে। যাদের শরীরে অসুখ বাসা বাঁধলেও, মনের ভিতর শুধুই বেঁচে থাকার গান।

Rabindra Sadan Thalassemia Leukemia dance and drama
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy