শুভব্রত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
তিন বছর ধরে মৃতা মায়ের পেনশন ছেলে কী ভাবে তুলে নিলেন, তা নিয়ে বিভ্রান্ত খোদ ব্যাঙ্ক-কর্তারাই।
বেহালার বাড়িতে ফ্রিজারে রাখা মৃতা বীণা মজুমদারের লাইফ সার্টিফিকেট প্রতি বছর কী ভাবে শুভব্রত ব্যাঙ্কে জমা দিতেন, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। পেনশন পেতে যেখানে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের লোকেদের নানা ভাবে হেনস্থা হতে হয়, সেখানে এক জন কী উপায়ে টানা তিন বছর মৃতা মায়ের পেনশন হস্তগত করলেন, তা নিয়ে অনেক গ্রাহকই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন।
স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র নিউ আলিপুর শাখা থেকে শুভব্রত মায়ের পেনশন তুলতেন। স্টেট ব্যাঙ্কের তরফে দাবি করা হয়েছে, বীণাদেবীর বুড়ো আঙুলের ছাপ দেওয়া লাইফ সার্টিফিকেট ব্যাঙ্কের ওই শাখায় জমা দিয়েছিলেন তাঁর ছেলে। তার ভিত্তিতেই প্রতি মাসে পেনশন তোলা হত কি না, সেটা কিন্তু পরিষ্কার জানায়নি ওই ব্যাঙ্ক। গ্রাহকদের পাল্টা প্রশ্ন, গত তিন বছরই কি শুভব্রত ওই লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন, না কি এক বারই জমা দেওয়া সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে তিনি প্রতি মাসে পেনশন পেয়ে যেতেন?
যে কেউ ওই সার্টিফিকেট নিয়ে ব্যাঙ্কে জমা দিলেই কিন্তু পেনশন পাবেন না। পেনশন-প্রাপক বৃদ্ধ বা অশক্ত হলেও তাঁকে বছরে এক বার ব্যাঙ্কে গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম ভরে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককর্মীর সামনে সই করতে হয় বা বুড়ো আঙুলের ছাপ দিতে হয়। কেউ অসুস্থ থাকলে চিকিৎসকের শংসাপত্র জমা দিতে হয়। তার ভিত্তিতে কোনও ব্যাঙ্ককর্মী সংশ্লিষ্ট পেনশন-প্রাপকের বাড়ি গিয়ে সই বা বুড়ো আঙুলের ছাপ নিয়ে আসেন। সঙ্গে নিয়ে যেতে হয় ওই পেনশন-প্রাপকের ছবি। এক জনের পেনশন যাতে অন্য কেউ না তুলতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতেই পেনশন-প্রাপক যে জীবিত কিংবা ঠিক ব্যক্তি, তার প্রমাণ দিতে হয়।
এখানেই গ্রাহকদের প্রশ্ন, বীণাদেবী জীবিত না মৃত, পেনশন দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কি তা যাচাই করে নেয়নি? ব্যাঙ্কের কোনও কর্মীর যোগসাজশ ছাড়া এমনটা হওয়া সম্ভব কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও।
তবে স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ না হলে সরকারি ভাবে কিছু বলা যাবে না। এক ব্যাঙ্ককর্তা জানান, ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি নিজে পেনশন-প্রাপককে না দেখলে কেবল ডাক্তারের সার্টিফিকেট কিংবা গেজেটেড অফিসারের সইয়ের ভিত্তিতে লাইফ সার্টিফিকেট জমা নেওয়া যায় না। তাতে প্রতারণার সুযোগ থেকে যায়।
ওই ব্যাঙ্ককর্তা বলেন, ‘‘আমরা কাজের চাপে অনেক সময়েই লাইফ সার্টিফিকেটের সব রকম নথি খুঁটিয়ে দেখার সময় পাই না। এ সব ক্ষেত্রে প্রতারণার সুযোগ থেকে যায়।’’
তবে শুভব্রতের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল, সেটা কিন্তু এখনও রহস্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy