Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Calcutta national medical college & hospital

আছিয়া-মৃত্যুতে নজরদারির গলদ প্রকট রিপোর্টে

সোমবার ন্যাশনালের বিষয়টি সামনে আসতেই পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য ভবন। পরে সেই কমিটিতে আরও চার জন নতুন সদস্য যুক্ত হন।

আছিয়া বিবি। নিজস্ব চিত্র।

আছিয়া বিবি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২৪
Share: Save:

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের নজরদারিতে গাফিলতি ছিল। আছিয়া বিবির রহস্য-মৃত্যুর ঘটনার কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে এমনই তথ্য সামনে এল ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটির। ওই তথ্য সহ অন্য সমস্ত বিষয়ই জানিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যালের তদন্ত কমিটি।

জানা যাচ্ছে, নজরদারিতে গাফিলতির অভিযোগে, হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থাকে শোকজ় করেছে স্বাস্থ্য ভবন। ৩০ অক্টোবর দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিলেন আছিয়া। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ যে বিল্ডিংয়ে, তার পিছনে পরিত্যক্ত জায়গা থেকে সোমবার সকালে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায়, উপর থেকে নীচে পড়ে পাঁজর, মেরুদণ্ড ভেঙে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃত্যু ঘটেছে দুপুর ২টো থেকে আড়াইটের মধ্যে। এই জায়গাতেই প্রশ্ন তুলেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। দুপুর দেড়টা নাগাদ ওয়ার্ড থেকে নিখোঁজ হয়ে ছিলেন ওই তরুণী। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় দেহ উদ্ধার হয়। অর্থাৎ প্রায় কুড়ি ঘণ্টা কেন তাঁর খোঁজ মিলল না?

সোমবার ন্যাশনালের বিষয়টি সামনে আসতেই পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য ভবন। পরে সেই কমিটিতে আরও চার জন নতুন সদস্য যুক্ত হন। হাসপাতালের সুপার, ডেপুটি সুপার, মানসিক রোগ, স্ত্রী রোগ সহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, যে চিকিৎসকের অধীনে আছিয়ার চিকিৎসা চলছিল সকলেই ছিলেন ওই তদন্ত কমিটিতে। মঙ্গলবারের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট জমা করার নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। সেই মতো এ দিন সকাল থেকে কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। সূত্রের খবর, চিকিৎসক, নার্স সহ নিরাপত্তারক্ষী সকলে দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখে তদন্ত কমিটি। পরীক্ষা করা হয় রোগীর বেড সাইড টিকিটও। পুলিশের তদন্তে কী উঠে এসেছে সেটিও খতিয়ে দেখেন কমিটির সদস্যরা।

পাশাপাশি যে শৌচাগারের জানলার পাশের লোহার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আছিয়া গলে কার্নিসে নেমেছিলেন বলে পুলিশের অনুমান, সেখানে যায় হাসপাতালের তদন্ত কমিটি। আবার প্রসূতি বিভাগে যে নার্স ডিউটিতে ছিলেন তাঁর সঙ্গেও কথা বলে কমিটি। এর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, নিরাপত্তারক্ষীদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া রয়েছে,নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাসপাতালের প্রতিটি বিল্ডিং সহ পুরো চত্বর পরিদর্শন করতে হবে।

সেই সূত্র ধরে প্রশ্ন তোলা হয় যে, সেই নির্দেশ কি আদৌ মেনে চলেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। কারণ যদি নির্দেশ পালন হয়ে থাকে, তা হলে রবিবার বিকাল বা সন্ধ্যার পরিদর্শনে বিল্ডিংয়ের পিছনে আছিয়াকে কেউ দেখতে পেলেন না কেন। আবার এও জানতে চাওয়া হয়, ওয়ার্ড থেকে রোগী নিখোঁজের খবর পাওয়ার পরেও নিরাপত্তা রক্ষীরা কি পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছিলেন? ওয়ার্ডের বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কি তারা পরীক্ষা করেছিলেন? এই সমস্ত বিষয়ে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে বলে খবর। আবার রিপোর্টে রোগীর পরিজনদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

সূত্রের খবর, ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স এ দিন দাবি করেছেন, দুপুরে রোগীকে তিনি শয্যায় দেখতে না পেয়ে জানতে চান কোথায় গিয়েছে। তখন আছিয়ার সঙ্গে থাকা আত্মীয় জানান, তিনিও অনেকক্ষণ ধরে দেখতে পাচ্ছেন না। এ সবের পাশাপাশি শৌচাগারের জানলা, লোহার গ্রিলে তারের জাল লাগানো সহ হাসপাতালের সমস্ত বারান্দায় আরও বেশি সংখ্যক সিসি ক্যামেরা লাগানোর বিষয়েও এ দিন পরিকল্পনা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE