ছোট পরিবারে বাজারে যাওয়ার ফুরসত নেই চাকুরিজীবী কর্তা-গিন্নির। এই পরিস্থিতির সুরাহা করতে ইতিমধ্যেই টাটকা মাছ অনলাইনে মিলছিল রাজ্য সরকারের উদ্যোগে। কিন্তু অনেক সময়ে ফ্রিজে মাছ থাকলেও, অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরে হেঁসেলে যেতে মন চায় না। তাই এ বার শুধু কাঁচা মাছ নয়, রান্না করা হরেক রকম মাছের পদও ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে মোবাইলের একটা ক্লিকেই। সৌজন্যে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম। সূত্রের খবর, আগামী ১ বৈশাখ আসতে চলেছে নয়া অ্যাপ, যার মাধ্যমে শহর ও শহরতলি এলাকায় মিলবে এই সুবিধা।
অ্যাপের নাম ‘স্মার্ট ফিশ’। গত ৫ জানুয়ারি এই নয়া অ্যাপের মাধ্যমেই শহরে তাজা মাছ বিক্রি শুরু করেছে মৎস্য নিগম। এই অ্যাপের মাধ্যমে নিগমের নিজস্ব জলাশয়ে চাষ করা ২৭ রকমের কাঁচা মাছ ও ১৫ রকমের হিমায়িত প্যাকেট-বন্দি অর্থাৎ ফ্রোজেন মাছ বিক্রি শুরু হয়েছে। নিগমের দাবি, গত তিন মাসে অনলাইনে এ ভাবে মাছ বিক্রি করে ভাল সাড়া মিলেছে। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌম্যজিৎ দাস বলেন, ‘‘অনলাইনে ইতিমধ্যেই ২৭০০ ক্রেতা আমাদের অ্যাপে নাম নথিভুক্ত করেছেন। রোজ ৩০-৪০টি করে অর্ডার আসে। এখনও অবধি প্রায় সাত লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে।’’ রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘অনলাইনে মাছ বিক্রিতে ভাল সাড়া মেলায় মৎস্যপ্রিয় বাঙালিকে খুশি করতে এ বার রান্না করা মাছের পদ বিক্রির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাংলা নববর্ষ থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।’’
নিগম সূত্রের খবর, নিগমের চাষ করা রুই, কাতলা, পাবদা, পার্শে, ট্যাংরা, চিংড়ি, শিঙি, ফ্যাসা, ভেটকির নানা পদের পসরা থাকবে ওই অ্যাপে। থাকবে ইলিশ থেকে শুরু করে বাসা মাছের বিরিয়ানিও। চিংড়ির মধ্যে থাকবে পোস্ত চিংড়ি, লাউ চিংড়ি, মোচা চিংড়ি, গলদা চিংড়ির মালাইকারি, বাগদার কালিয়া, ডাব চিংড়ি, চিংড়ির টক। ইলিশের মধ্যে থাকবে ইলিশ ভাজা, ইলিশ ভাপা, দই ইলিশ, কালোজিরে-কাঁচালঙ্কা দিয়ে ইলিশের পাতলা ঝোল, সরষে ইলিশ। সৌম্যজিৎ বাবুর দাবি, ‘‘নিগমের জলাশয়ে চাষ করা ওই সব মাছের গুণমান অনেক ভাল হবে। পাশাপাশি দামও হবে ন্যায্য।’’ তবে সব মাছ নিজস্ব জলাশয়ে চাষ হলেও, ইলিশ মাছ বাংলাদেশ থেকে আনা হবে বলে জানান নিগমের কর্তারা। নিগমের জেনারেল ম্যানেজার বিজন মণ্ডলের কথায়, ‘‘নলবনে, নিগমের জলাশয়ের পাশেই বিশাল মাপের রান্নাঘর তৈরি হয়েছে। নিগমের রাঁধুনিদের শহরের নামী রেস্তোরাঁয় নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এঁদের হাতে তৈরি রান্না করা মাছের পদ অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়ে বা়ড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে।’’
নিগমের কর্তারা জানিয়েছেন, ১ বৈশাখ সকাল দশটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে নিগমের অ্যাপ ডাউনলোড করে খাবারের অর্ডার দিতে পারবেন নাগরিকেরা। অর্ডার দেওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে খাবার পৌঁছে যাবে বাড়িতে। এখনকার ব্যস্ত সময়ে ঘরে বসে অনলাইনে চাল-ডাল-তেল-মশলা থেকে শুরু করে আনাজপাতি বাজার করার চাহিদা বেশ বেড়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে অনলাইনে এ সব বিক্রি শুরু হয়েছে আগেই। তবে সরকারি উদ্যোগে, অনলাইনে এ রকম রান্না করা মাছের পদ বিক্রির উদ্যোগ প্রথম বলে দাবি করছেন মৎস্য নিগমের কর্তারা। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমাদের এই উদ্যোগ। এখন কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও, আগামী দিনে কলকাতার বাইরেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই সুবিধা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy