Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Corona

কোভিড সার্টিফিকেট ছাড়াই শহরে, ক্ষুব্ধ রাজ্য

যে চার রাজ্যের উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানকার বিমানবন্দরে বিমানের গেটের সামনে কলকাতামুখী যাত্রীদের কাছে কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখতে চাওয়া হবে।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১ ০৫:৪৮
Share: Save:

কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়াই কিছু যাত্রী শহরে চলে আসায় প্রবল ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার।

চার রাজ্যের ছ’টি শহর থেকে বিমানে কলকাতায় এলে এ বার কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে আনতে হবে— ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের জারি করা ওই নির্দেশ বেশির ভাগ বিমানযাত্রীই মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই ঠিক হয়েছে, যে চার রাজ্যের উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানকার বিমানবন্দরে বিমানের গেটের সামনে কলকাতামুখী যাত্রীদের কাছে কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখতে চাওয়া হবে।

অভিযোগ, সার্টিফিকেট ছাড়াই কলকাতায় উড়ে আসছেন ওই যাত্রীরা। মঙ্গলবার একটি ভিডিয়ো বৈঠক করে প্রতিটি উড়ান সংস্থাকে রাজ্য কড়া ভাষায় সতর্ক করে জানিয়েছে, এ বার কেউ কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া কলকাতায় এলে সংশ্লিষ্ট উড়ান সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সেই ব্যবস্থা কী, তা অবশ্য পরিষ্কার করে বলা হয়নি। উড়ান সংস্থাগুলি পাল্টা জানিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই যাত্রীরা নিয়ম মানছেন না। দলবল মিলে বিমানবন্দরে গন্ডগোল পাকাচ্ছেন। এমনকি, শেষ মুহূর্তে জরুরি কারণ দেখিয়ে টিকিট কেটে বিমানে উঠে পড়ার ঘটনাও ঘটছে।

উড়ান সংস্থাগুলির এই দাবি মানতে অবশ্য নারাজ রাজ্য। রাজ্যের যুক্তি, ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ জারি করা হলেও তা কার্যকর করা হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। অর্থাৎ, মাঝে চার দিন সময় পেয়েছিল উড়ান সংস্থাগুলি। তখন যাত্রীদের সেই নিয়মের কথা জানিয়ে দেওয়া যেত। রাজ্যের অভিযোগ, সেটা ঠিক ভাবে করা হয়নি। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, একই কারণে ওড়িশা সরকারও বেশ কিছু রাজ্য থেকে ভুবনেশ্বরে যাওয়া বিমানযাত্রীদের ক্ষেত্রে ওই বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বলে বিমান মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে।

রাজ্য সরকারের বক্তব্য, করোনার প্রকোপ বেশ কিছু রাজ্যে বাড়ছে। তার মধ্যে রয়েছে কেরল, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটক। এই চার রাজ্যের ছ’টি শহর (বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, কোচি, মুম্বই, পুণে ও নাগপুর) থেকে সরাসরি কলকাতার উড়ান রয়েছে। রাজ্যের নিয়ম, ওই ছ’টি শহর থেকে উড়ানে চেপে সরাসরি কলকাতা, বাগডোগরা বা অন্ডালে আসতে হলে কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে থাকতেই হবে। একমাত্র ছাড় দেওয়া হয়েছে দু’বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে।

উড়ান সংস্থাগুলি সূত্রের খবর, চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি প্রয়োজনে সত্যিই অনেককে কলকাতায় আসতে হতে পারে। এক উড়ান সংস্থার কর্তার কথায়, ‘‘কলকাতায় বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বেঙ্গালুরু থেকে ছেলে আসতে চাইলে কী হবে?’’

অভিযোগ, এ দিন সে কথা জানতে চাইলে রাজ্যের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, চূড়ান্ত জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে কি না, তা ভেবে দেখা হচ্ছে। তার বাইরে নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া কোনও অবস্থাতেই কাউকে আসতে দেওয়া হবে না। উড়ান সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ওই ছ’টি শহরের বিমানবন্দরে তাদের চেক-ইন কাউন্টারে কোনও যাত্রী কলকাতায় যাওয়ার টিকিট নিয়ে দাঁড়ালেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছ থেকে কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখতে চাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু, এখন তো অনেকেই একটিমাত্র হাতব্যাগ নিয়ে আগে থেকে ওয়েব চেক-ইন করে সোজা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে পৌঁছে যান। তাঁদের অনেকেরই সঙ্গে কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকছিল না।

একটি উড়ান সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘এ বার বিমানে ওঠার মুখে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ওই সার্টিফিকেট দেখতে চাওয়া হবে। আগেও অবশ্য তা করা হচ্ছিল। তাতে যাত্রীরা বেজায় খেপে গিয়ে বিমানবন্দরে দল বেঁধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে দিচ্ছিলেন। ফলে, তাঁদের নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি আমরা।’’ যদিও ২৮ তারিখ বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় আসা প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে সেখানে গিয়ে এই নিয়মের গেরোয় পড়ে যাই। ওখানেই পরীক্ষা করাই। আমি, আমার স্বামী এবং সাত বছরের মেয়ে। কলকাতায় ফেরার দিন বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে গিয়ে দেখি, বিমানে ওঠার আগে বোর্ডিং গেটে উড়ান সংস্থার এক অফিসার চিৎকার করে বলছেন, ‘সবাই হাতে করে কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আসুন’। আমাদের মতো জনা কয়েক যাত্রী সার্টিফিকেট বার করে হাতে রেখেছিলাম। কিন্তু দেখলাম, বেশির ভাগ যাত্রীর হাতেই সেই সার্টিফিকেট নেই। তাঁদের আটকানও হয়নি। বেমালুম বিমানে উঠে পড়েন তাঁরা।’’

প্রশ্ন উঠেছে, যাঁরা সার্টিফিকেট নিয়ে আসছেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে কলকাতায় নামার পরে বিমানবন্দরেও তো সেই পরীক্ষা করানো যায়! এখন তো কলকাতা বিমানবন্দরে
আরটিপিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে! কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর পরীক্ষা শুধুমাত্র বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রেই করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারই তার আয়োজন করেছে। রাতের দিকে কোনও দিন একটা, কোনও দিন দু’টো উড়ান আসছে বিদেশ থেকে। সেই যাত্রীদেরই পরীক্ষা হচ্ছে। এত বেশি সংখ্যক দেশীয় যাত্রীর জন্য সেই ব্যবস্থা করতে গেলে তো ২৪ ঘণ্টা ধরে পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Kolkata Airport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE