এক সময়ে দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে নামডাক ছিল দমদমের।
নয়ের দশকের গোড়ার দিকে সন্ধ্যার পরে দমদমে পারতপক্ষে বাইরে বেরোতেন না গৃহস্থেরা। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-বোমাবাজি-খুন এ সবই ছিল দমদমের সমার্থক। তখন দমদম ছিল উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশের অধীনে। সেই জেলার দায়িত্বে আসার পরে এক পুলিশকর্তা নব্বই দশকের মাঝামাঝি অনেকটাই ঠান্ডা করে দেন দমদমকে।
পুরনো বাসিন্দাদের প্রশ্ন, দমদম কি আবার ফিরছে নয়ের দশকে? গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক চুরি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসতে শুরু করেছে দমদম এলাকা থেকে। দিনে ছিনতাই, দুপুরে বাড়িতে ঢুকে গলা থেকে সোনার হার ছিনিয়ে চলে যাওয়া, ফাঁকা বাড়ি পেয়ে ঢুকে তার আগাপাশতলা সাফ করে দেওয়া — পরপর এই ধরনের খবরে উদ্বিগ্ন পুলিশও।
দমদম এখন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অধীনে। সেই কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (জোন ২) ধ্রুবজ্যোতি দে অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে তেমন সমস্যা নেই। কড়া নজরদারি রয়েছে পুলিশের। তবে কোনও পকেটে দু’-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটছে। খতিয়ে দেখছি।’’
তারই একটি ঘটেছে এই পুজোয়। খবরটি জানাজানি হয়েছে রবিবার। দমদম থানার অধীনে ক্যান্টনমেন্টের সুভাষনগরের দোতলা বাড়িতে সস্ত্রীক থাকেন মার্চেন্ট নেভির প্রাক্তন অফিসার ক্যাপ্টেন সুভাষ চন্দ্র পাল। পঞ্চমীতে দিল্লিতে ছেলে সোহমের কাছে বেড়াতে যান। ১৬ অক্টোবর বাড়ি ফিরে দেখেন, সদর দরজা ভাঙা।
পরের দিন দমদম থানায় যে অভিযোগ সুভাষবাবু জানিয়েছেন, তাতে লেখা রয়েছে, একতলা ও দোতলা পুরোপুরি লণ্ডভণ্ড করে গিয়েছে দুষ্কৃতীর দল। বাড়ির সব আলমারিগুলি ভেঙেছে তারা। দম্পতির অভিযোগ অনুযায়ী, বাড়ি থেকে ১৩-১৪ ভরি সোনার গয়না এবং নগদ ৭০ হাজার টাকা চুরি হয়ে যায়। সুভাষবাবুর আশঙ্কা, একতলারই পিছনের দিকের একটি জানলার গ্রিল ভেঙে সেখান দিয়ে পালিয়েছে চোরের দল। খবর পেয়ে এসেছেন ছেলে সোহম।
এক না একাধিক চোরের এই কুকীর্তি, তা এখনও জানাতে পারেনি পুলিশ। শুধু বলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় ওই সময়ে আরও কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশকে জানানো হয়নি। বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, বলে কী লাভ! চুরির মাল তো ফেরত পাওয়া যাবেই না, উল্টে অভিযোগ জানালে তাঁদেরই বারবার করে থানায় ও আদালতে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। তাতে হয়রানি আরও বাড়বেই।
গত শুক্রবার ওই দমদম এলাকায় এমনই এক ঘটনার কথা জানা গিয়েছে। ঘটনাটি থানায় নথিভুক্ত করা হয়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ। যদিও ওই সুভাষনগরেরই বাসিন্দা প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য দাবি করেন যে, তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। শুক্রবার তিনি স্ত্রীর সঙ্গে কলকাতার বাইরে যান। সে রাতেই ফিরে আসেন তাঁরা। এই সময়ে বাড়িতে তাঁর ৮৩ বছরের মা অনিমাদেবী একা ছিলেন।
প্রসেনজিৎবাবু জানান, তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত দুর্গাপুজো হয়। এ বারেও হয়েছে। ডেকরেটারের লোকজন মণ্ডপের সামগ্রী খুলে নিয়ে চলে গিয়েছেন। এ দিন প্রসেনজিৎবাবুদের অনুপস্থিতিতে এক যুবক বৃদ্ধা অনিমাদেবীর কাছে এসে বলেন, ডেকরেটারের ভাড়া বাবদ এখনও দেড় হাজার টাকা বাকি রয়েছে। ওই টাকা ডেকরেটারের মালিক চেয়ে পাঠিয়েছেন। অনিমাদেবী প্রসেনজিৎবাবুকে ফোন করেন। প্রসেনজিৎবাবু ডেকরেটারের মালিককে ফোনে ধরলে সেই মালিক আকাশ থেকে পড়েন। জানান, যা টাকা পাওনা ছিল সব মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর নাম করে কেউ যদি টাকা চাইতে যায়, তা হলে সে প্রতারক।
মা-কে সে কথা জানিয়ে দেন প্রসেনজিৎবাবু। দুপুরে আবার ফিরে আসে সেই যুবক। অনিমাদেবীর কাছে আবার টাকা চায়। অনিমাদেবী তখন জানান, তিনি ছেলের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছেন। ডেকরেটারের কোনও টাকা বকেয়া নেই। এই কথা বলার সময়েই অনিমাদেবীর গলায় থাকা সোনার চেন টান মেরে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় ওই যুবক। আটকাতে গিয়ে বাঁ হাতের আঙুল কেটে যায় অনিমাদেবীর।
পুলিশের কথায় ‘বিক্ষিপ্ত’ আরও একটি ঘটনা সেই শুক্রবারেই ঘটেছে, ইটালগাছা রোডে। সেখানে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা পাপিয়া কর। একটি মোটরবাইকে করে এসে দুই দুষ্কৃতী তাঁর গলা থেকে সোনার হার ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। কোনও একটি ঘটনাতেও ধরা পড়েনি দুষ্কৃতীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy