অগ্নিকাণ্ডের পরে কাজের জায়গায় তালা। চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের সামনে। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে আগুন লাগাকে কেন্দ্র করে নড়েচড়ে বসল দমকল দফতর। বুধবার নবান্নে দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান জানান, এত দিন শহরে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা দেখভালের জন্য দু’টি পৃথক কমিটি ছিল। কিন্তু কাজ ছিল একই। যে কারণে সমন্বয়ের অভাব হত। তিনি বলেন, “এ বার ফায়ার সেফটি কমিটি-ই শহরের সব রকম অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবে। প্রতি মাসে এক বার করে আমার সঙ্গে ওই কমিটি বৈঠক হবে। সেখানে সব কিছু নিয়েই আলোচনা হবে।” আগের মতো এ বারও কমিটিতে থাকবে দমকল, কলকাতা পুলিশ, পুরসভা ও সিইএসসি-র প্রতিনিধিরা।
এ দিকে, বুধবার দুপুর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে হতাশা তৈরি হয়েছে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের ২২৫টি কোম্পানির কর্মীদের মধ্যে। এ দিন ভবনের গেটে কর্তৃপক্ষের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে বলা হয়, সিইএসসি এবং দমকলের ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল।
যদিও এ দিন বিকেলে নবান্নে দমকলমন্ত্রী জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের পনেরো, ষোলো এবং সতেরোতলায় কোনও অফিস খোলা যাবে না। কিন্তু অন্যান্য তলায় যে সব সংস্থার অফিস রয়েছে, সেগুলি খুললে দমকলের কোনও আপত্তি নেই। মন্ত্রী বলেন, “ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি তলার সব অফিস বন্ধ থাকবে। তদন্তের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই ওই ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ফলে কোনও ভাবেই কাজ শুরু করা সম্ভব নয় বলে দাবি কর্তৃপক্ষ কমিটির। তবে এ দিন সন্ধ্যায় সিইএসসি জানিয়ে দেয় দমকল ছাড়পত্র দিলে তারাও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেবে। এর পরে ‘চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার সোসাইটি’-র সম্পাদককে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে তিনি ফোন তোলেননি। কমিটির অন্য এক সদস্য ভক্তহরি নায়েক বলেন, “সিইএসসি বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দিলেই নোটিস খুলে নেওয়া হবে।” কিন্তু কবে, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
এ দিন কেমন ছিল চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের চিত্র?
সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় ভবন চত্বর। বাইরে প্রথমে বেশ কয়েক জনকে পরিচয়পত্র দেখে অফিস থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্য ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ তা বন্ধ করে দেন।
ভবনের এক নিরাপত্তারক্ষী শক্তিপদ দাস জানান, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার সোসাইটির তরফ থেকেই ১৬ ও ১৭ তলা পরিষ্কার করা হচ্ছে। যে কারণে কোনও ব্যক্তি ভিতরে ঢুকলে কাজের অসুবিধা হতে পারে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় জেনারেটর চালানো হয়েছে। তবে বারোতলা পর্যন্ত কোনও রকমে টিমটিম করে আলো জ্বলছে। তার উপরে কোনও আলো নেই। করিডর জলে থই থই করছে। প্রায় ১০তলা পর্যন্ত পোড়া গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। লিফ্ট বন্ধ থাকায় সিঁড়িই ভরসা। কিন্তু সেখানেও ছাই ও জল মিশে কাদা হয়ে গিয়েছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার দমবন্ধ করা পরিবেশের মধ্যে দিয়ে কোনও রকমে উপরে পৌঁছেছিলেন কয়েক জন কর্মী।
কিন্তু কবে থেকে সব কিছু স্বাভাবিক হবে, তা নিয়েই চিন্তায় কর্মীরা। একটি মোবাইল কোম্পানির কর্মী শোভন ভট্টাচার্য বলেন, “উপরে উঠতেই দিল না। কাস্টোমার বারবার ফোন করছেন। সব নথি অফিসে আছে। কোনও ভাবেই বার করে আনতে পারলাম না। কবে খুলবে, তা-ও জানি না। কী করে কাজ করব, বুঝতেই পারছি না।” যদিও একটি সংস্থার জনসংযোগ আধিকারীক অজয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই অসুবিধা আমরা বুঝি। আমরাও চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সব ঠিক করা যায়।”
এই ভবনের সঙ্গে পরোক্ষে জড়িয়ে রয়েছে স্থানীয় খাবার বিক্রেতাদের পরিবার। তেমন এক বিক্রেতা সমীর বৈরাগী বলেন, “দিনের মোট আয়ের ৬০ শতাংশ নির্ভর করে ওই বাড়ির কর্মীদের উপরে। বুধবার বেশির ভাগ খাবার নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
এই অগ্নিকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দমকলমন্ত্রী এ দিন সাংবাদিকদের জানান, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে মোট ২২৫টি বাণিজ্যিক সংস্থার অফিস রয়েছে। এর মধ্যে পঁয়ত্রিশটি সংস্থার কোনও ট্রেড লাইসেন্স নেই। এই বহুতলের প্রতি তলাতেই অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল। আগুন লাগার পরে তা আংশিক কাজ করেছে। ওদের জলাধার থেকে জল নেওয়া হয়েছে। তবে দমকলের ইঞ্জিন দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ বুধবার কার্যত খারিজ করে দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন “আমরা তদন্ত করে দেখেছি ঘটনাস্থলে গাড়ি পৌঁছতে এক মিনিটও দেরি করেনি।”
দমকলের শক্তি আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে এ দিন জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, তেরো কোটি টাকা খরচ করে ৫৪ এবং ৪২ মিটারের দু’টো ল্যাডার আনা হচ্ছে ফিনল্যান্ড থেকে। শহরের অনেক ছোট রাস্তা রয়েছে যেখানে গাড়ি ঢুকতে পারে না। তার জন্য ৩৬টি নতুন গাড়ি কেনা হয়েছে। গ্রামীণ এলাকাতেও আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিটি ব্লকের জন্য একটি করে পোর্টেবল পাম্প এবং ১০০ মিটার করে হোর্স পাইপ কেনা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy