নন্দরাম মার্কেটের পুনরাবৃত্তি আটকাতে দু’জনেই সচেষ্ট হয়েছিলেন। তবুও বিপর্যয় আটকানো গেল না।
এক জন কলুটোলা স্ট্রিটের বাসিন্দা বছর চব্বিশের সেফ আহমেদ, অন্য জন মেহতা বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা ইরফান গনি।
শনিবার রাত সওয়া দুটো নাগাদ এক বন্ধুকে মোটরবাইকে করে চিৎপুর-ক্যানিং স্ট্রিট মোড়ে ছাড়তে এসেছিলেন সেফ। সেই সময়েই বাগড়ি মার্কেটের বাইরের ফুটপাতে কিছু একটা জ্বলছে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন, রাস্তার ঠেলাওয়ালারা আগুন জ্বেলেছেন। দুমদাম পটকা ফাটার আওয়াজের সঙ্গে আগুনের গোলার মতো কিছু এ দিক-ও দিক উড়ছে দেখে সন্দেহ হয়। ভুল ভাঙে কয়েক মুহূর্তে। মোটরবাইক নিয়ে বাগড়ি মার্কেটের সামনে পৌঁছে দেখেন, একের পর এক সুগন্ধীর ডালা দাউদাউ করে জ্বলছে। কিছু কৌটোর টুকরো মার্কেটের শাটারের ফাঁক দিয়ে ভিতরে গিয়েও পড়েছে।
সেফের কথায়, ‘‘পরপর ডালা জ্বলতে দেখে মেহতা বিল্ডিংয়ের ফুটপাতে শুয়ে থাকা অনেকেরই ঘুম ভেঙে গিয়েছে তত ক্ষণে। ডিয়োডোরেন্টের জ্বলন্ত কৌটো যে ভাবে উড়ছিল, তাতে ভয়ে কেউ এগোতে চাননি। পরে কয়েক জন রীতিমতো প্রাণ হাতে মার্কেটের সামনে গিয়ে বাকি ডালা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলেন।’’ এরই মধ্যে কয়েক জন দৌড়ন লালবাজারের কাছে দমকলের অফিসে। গাড়ি আসছে না দেখে সেফ ২টো ৩৫ মিনিটে ১০০ নম্বরে ডায়াল করেন। কারণ আগুন তত ক্ষণে ছড়িয়েছে মার্কেটের দোতলা পর্যন্ত। সেফের অভিযোগ, আগুন লাগার খবর লালবাজারে ফোন করে দেওয়ার পরেও দমকলের প্রথম ইঞ্জিন পৌঁছয় আধ ঘণ্টা পরে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে একটি ছোট গাড়ি আসে। তার জল ফুরিয়ে যায় কিছু ক্ষণের মধ্যেই। পরের গাড়ি আসে আরও ১৫ মিনিট পরে। ৫টার সময়ে যখন দমকলের বড় কর্তারা এসে পৌঁছলেন তত ক্ষণে আগুন ধরে গিয়েছে পাঁচতলা পর্যন্ত।’’
আরও পড়ুন: কোলে ঘুমন্ত শিশু, রক্ষা কোনও রকমে
সেফ যখন লালবাজারে খবর পাঠিয়েছেন, তখন বাগড়ি মার্কেটের বিপরীতে থাকা মেহতা বিল্ডিংয়ের পাঁচতলার ছাদ থেকে লোকজনকে নিয়ে নেমে এসেছেন ইরফান গনি। সুগন্ধীর কৌটো হাউইয়ের মতো এ দিক-ও দিক ছুটে যাচ্ছে দেখেও তিনি এগিয়ে যান আগুন নেভাতে। তাঁর কথায়, ‘‘ডিয়োডোরেন্টের কৌটোগুলো বিকট শব্দে যে ভাবে ফাটছিল তাতে দাঁড়িয়ে থাকতেও ভয় লাগছিল।’’ কয়েকটি সুগন্ধীর কৌটো মেহতা বিল্ডিংয়ের মূল গেটে এসে পড়লে সেখানেও আগুন লেগে যায়। কিছু ব্যবসায়ী এবং মুটেদের সাহায্যে তা নেভান ইরফান।
পরে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখে তিনি আর সময় নষ্ট করেননি। কয়েক জনকে নিয়ে ফের মেহতা বিল্ডিংয়ের ছাদে ফিরে যান। ওই ছাদে ২০টি জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। যা থেকে এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে পাইপ টেনে জল দেওয়া যায়। ইরফান শনিবার রাতে ওই ছাদ থেকে সেই কায়দাতেই অন্যদের নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ইমরানের কথায়, ‘‘দমকল আসার পরে সরে আসি। ছাদ থেকে দেখছিলাম, কী ভাবে শেষ সম্বল বাঁচানোর আশায় আগুন লাগা দোকানের দিকে ধেয়ে যাচ্ছেন কয়েক জন ব্যবসায়ী। তাঁদের ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন দমকল, পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা। কথা কাটাকাটি হচ্ছে। অন্য ব্যবসায়ীরা সঙ্গীদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। পাঁচতলার ছাদ থেকে সেই দৃশ্য দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল। হাজার হোক আমিও তো এক জন ব্যবসায়ী!’’