Advertisement
E-Paper

অনেক বাধা কাটিয়ে সফল মেঘা-মিতালিরা

মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে জগৎপুর আদর্শ বিদ্যামন্দির স্কুলের পড়ুয়া মিতালি জানতে পেরেছিল, তার ঘর পুড়ে গিয়েছে।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০২:২৫
প্রণাম: পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে মায়ের সঙ্গে মিতালি হালদার। বুধবার, নিউ টাউনে। ছবি: শৌভিক দে

প্রণাম: পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে মায়ের সঙ্গে মিতালি হালদার। বুধবার, নিউ টাউনে। ছবি: শৌভিক দে

ফল তো দূর অস্ত্‌। মাধ্যমিক পরীক্ষাটাই ওরা আদৌ দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল চরম অনিশ্চয়তা। কারণ পরীক্ষা চলাকালীন কারও ঘর পুড়ে গিয়েছিল, কারও ঘরে আবার আলো ছিল না। বই-খাতা, অ্যাডমিট কার্ড পুড়ে যাওয়ায় সম্বল ছিল শুধুই মনের জোর এবং প্রতিবেশীদের সাহায্য।

বুধবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে তাদের প্রত্যেকের মুখে হাসি ফুটেছে। নিউ টাউনের সুলংগুড়ির বাসিন্দা মিতালি হালদার, নারকেলডাঙার ইনসা কওসর, মানিকতলার মেঘা দাস শত প্রতিকূলতার মধ্যেও পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে। তাদের প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘‘ওরা কে কত নম্বর পেয়েছে, সেটা বড় কথা নয়। ওরা যে পরীক্ষায় বসেছে এবং পাশ করেছে, সেটাই বড়।’’

মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে জগৎপুর আদর্শ বিদ্যামন্দির স্কুলের পড়ুয়া মিতালি জানতে পেরেছিল, তার ঘর পুড়ে গিয়েছে। বাড়ি ফিরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছিল বই-খাতা, নোট্‌স। স্কুলের পোশাক ছাড়া ছিল না দ্বিতীয় পোশাক। পরের দিনই ছিল ইংরেজি পরীক্ষা। মিতালির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রতিবেশীরা এবং প্রশাসন। মেয়েটিকে বই-খাতা জোগানোর পাশাপাশি, আশ্রয়েরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। সেই অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছে মিতালি। তবে এত দিনেও তার ঘর ঠিক হয়নি। সুলংগুড়ি দক্ষিণ পাড়া এলাকায় ভাড়া
থাকে তারা।

এ দিন মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার পরে খুশির হাওয়া সেই ভাড়ার ঘরে। কিন্তু, কাজে যেতে হয়েছিল মাকে। তিনি ফিরলে রেজাল্ট আনতে যায় মিতালি। সে বলে, ‘‘আরও ভাল ফল হতে পারত। বই-খাতা কিছুই তো ছিল না। তবে পড়া ছাড়ব না।’’ বাবা জীবনকৃষ্ণবাবু জানালেন, পঞ্চায়েত থেকে দশ হাজার টাকা পেয়েছেন তাঁরা। তা দিয়ে ঘর ঠিক করা যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘সংসার চালাতেই হিমসিম খাচ্ছি। মেয়েকে কী করে পড়াব জানি না।’’ রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওই পরীক্ষার্থীর পড়াশোনায় যাতে কোনও বাধা না আসে, তা অবশ্যই দেখা হবে।’’

মাধ্যমিকের মাত্র দশ দিন আগে আগুন লেগেছিল নারকেলডাঙার বাসিন্দা ইনসা কওসরের বাড়িতে। বই-খাতার সঙ্গে পুড়ে যায় অ্যাডমিট কার্ডও। পরে প্রশাসনের সহায়তায় ডুপ্লিকেট অ্যাডমিট কার্ড পায় পেশায় স্কুলশিক্ষক মহম্মদ কওসরের একমাত্র কন্যা ইনসা। বাবা-মায়ের সঙ্গে ইনসাও থাকে ভাড়া বাড়িতে। সেখান থেকেই মাধ্যমিক দিয়ে ৪৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে সে। মেয়ের পাশের খবর জেনে কওসর বলেন, ‘‘আগুন লাগার পরে ভাবতে পারিনি, মেয়ে পরীক্ষায় বসতে পারবে। সকলের সহযোগিতায় মেয়ে পরীক্ষা দিতে পেরেছে, এটাই বড় প্রাপ্তি।’’ অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি ভুলে এখন উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিতে চায় ইনসাও। তার কথায়, ‘‘অতীত ভুলে উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলের আশায় প্রস্তুতি শুরু করেছি।’’

ইংরেজি পরীক্ষার আগের দিন অন্ধকার নেমে এসেছিল মানিকতলার মেঘা দাসের বাড়িতে। বিল মেটাতে না পারায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়ে গিয়েছিল সিইএসসি। খবর যায় মানিকতলা থানায়। পুলিশ ওই ছাত্রীর বাড়ির বিল মেটাতে সাহায্য করে। পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে মেঘা। এ দিন সে বলে, ‘‘বাবা সে বার বিল মেটাতে পারেনি। বড় হয়ে বাবার পাশে দাঁড়াতে চাই। আর কখনও যেন ঘর অন্ধকার না হয়।’’

উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি হোমের চার জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার তাদের সংবর্ধিত করতে পারে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘ওই ছেলেমেয়েদের জন্য গর্বিত।’’ এ দিন জেলা প্রশাসনের তরফে মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের জন্য উপহারও পাঠানো হয়েছে।

Madhyamik result Students Poverty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy