প্রতীকী ছবি।
তল্পিতল্পা গুছিয়ে হইহই করে এসি গাড়িতে উঠে বসলেন সকলে। গন্তব্য এক কিলোমিটার দূরের হোটেল। আগামী আট দিন সেখানেই কাটবে ছুটি। আক্ষরিক অর্থেই হাওয়া বদলের আয়োজন হয়েছে যে সেখানে। ঢিমে তালে চলা পাখার হাওয়া, টিমটিমে আলো থেকে সোজা এসি হোটেল।
বাড়ি ছাড়ার সময়ে মনে কিছুটা যে আশঙ্কা ছিল না তেমন নয়। ৪২ স্ট্র্যান্ড রোডের চারতলার বাসিন্দা কল্যাণী সোনকার তো এক বার বলেই ফেললেন, ‘‘বাড়ি ছাড়তে কার ভাল লাগে!’’ কপালে তখন খানিক দুশ্চিন্তার ছাপও ছিল। সামান্য দূরত্বের হোটেলে ঢুকে মুহূর্তেই বদলে গেল মেজাজ। ৩১২ নম্বর ঘরে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তখন গল্পে ব্যস্ত কল্যাণী। তিনি যে ঘরে থাকেন, সেখানে ফ্যানের হাওয়াটুকুই সম্বল। গরমের দুপুরে সে ঘরে টেকা দায়। আর বিনা পয়সার এই ঠিকানায় প্রতিটি ঘরে এসি। ভোজের ব্যবস্থাও জমিয়ে। সকাল-দুপুর-রাতে মিষ্টি, আইসক্রিম, ফলের রসের ছড়াছড়ি। সে সব বুঝে খোশমেজাজে এসি চালিয়ে কল্যাণী বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে, কোথাও যেন বেড়াতে এসেছি।’’
স্ট্র্যান্ড রোড ও উডবার্ন স্ট্রিটের দু’টি বহুতলের ১৬০ জন বাসিন্দার জন্য এমন ‘জামাই আদরের’ ব্যবস্থা করেছেন কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ। ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলের নীচে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই সুড়ঙ্গ খোঁড়া শুরু হবে। তার আগে ওই এলাকার কয়েকটি বাড়ির বাসিন্দাদের সরানোর নির্দেশ ছিল। তার আগে, বুধবার সকাল থেকে সেখানে হাজির হয়ে এম জি রোডের একটি হোটেলে তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন কেএমআরসিএলের ইঞ্জিনিয়ারেরা।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের যত্নে এমন হাওয়া বদলের ঠিকানা পেয়ে খুশি কল্যাণীদেবীর পড়শিরাও। স্ট্র্যান্ড রোডের বিপজ্জনক বাড়ির দোতলায় এক চিলতে ঘরে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন পার্কিং লটের কর্মী রাজকুমার সোনকার। হোটেলে বসে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কয়েক দিনের জন্য এমন হোটেলে থাকতে পেরে বেশ লাগছে। ভাবছি, এই ক’দিন সকলে মিলে শহরে ঘুরে বেড়াব। নিক্কো পার্ক যাব, সিনেমা দেখব।’’ আর এক ব্যবসায়ী রাজু সোনকার বলেন, ‘‘ব্যবসার কাজে পরিবারকে সময় দিতে পারি না। ঠিক করেছি, আগামী রবিবার বাড়ির সকলকে নিয়ে দিঘা যাব। এখন টেনশন ভুলে পরিবারকে নিয়ে সময়টা উপভোগ করতে চাই।’’
হোটেলে যাওয়ার জন্য স্ট্র্যান্ড রোড ও উডবার্ন স্ট্রিটের বাসিন্দারা মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন। বুধবার দুপুরে এম জি রোডের ওই হোটেলে স্ট্র্যান্ড রোড ও উডবার্ন স্ট্রিটের বাসিন্দাদের জন্য একটি বড় হলঘর খুলে দেওয়া হয়। কেএমআরসিএল-এর নোটিস দেখে সেখানেই সকলে বুঝে নেন নিজের নিজের ঘর।
৪২, স্ট্র্যান্ড রোডের ব্যবসায়ী ও ভাড়াটে সংগঠনের সম্পাদক নীলকমল ঘোষ বলেন, ‘‘এই হোটেলে ৫০টি ঘর বুক করেছে কেএমআরসিএল। মেট্রোর পুনর্বাসনের প্যাকেজে আমরা খুশি।’’ ২, উডবার্ন স্ট্রিটের বাসিন্দা সরস্বতীদেবী সোনকারও মেট্রোর ভূমিকায় উচ্ছ্বসিত। তাঁর কথায়, ‘‘মেট্রো কর্তৃপক্ষ আট দিনের জন্য বড়বাজারের হোটেলে আমাদের সকলের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এত ভাল পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে বড় কাজের জন্য এগিয়ে না এসে কি থাকা যায়?’’
নীলকমলবাবু বলেন, ‘‘সোমবার কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। ওঁরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, সুড়ঙ্গ তৈরির সময়ে বাড়ির কোনও ক্ষতি হলে তাঁরা সারিয়ে দেবেন।’’ সংগঠনের সহকারী সম্পাদক রাজকুমার রায় বলেন, ‘‘জিএসটি-র কোপে ব্যবসা বেশ মার খেয়েছে। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যে ভাবে বোঝাপড়া করেছেন, তাতে আট দিনের জন্য ব্যবসা বন্ধ রাখতে রাজি হয়েছি।’’
মেট্রো সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ বি বা দী বাগ পৌঁছনোর জন্য কয়েক দফায় সুড়ঙ্গ খোঁড়া হবে। তার জন্য দফায় দফায় ব্রেবোর্ন রোড, বিপ্লবী রাসবিহারী বসু রোড, পুরুষোত্তম রায় রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, আর্মেনিয়ান স্ট্রিট, নেতাজি সুভাষ রোডের প্রায় কুড়িটি বাড়ি খালি করতে নোটিস পাঠানো হবে। প্রথম দফায় ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলের নীচের ওই অংশের কাজ চলবে ৬ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy