Advertisement
E-Paper

কে বলল এ শহর শুধু সেলফিতেই মজে? হৃদয়টা আবার চেনালো ভাঙা উড়ালপুল

একটা শহর। যে শহরের বুকে ভেঙে পড়া একটা উড়ালপুলের সামনে কিছু ছিন্নভিন্ন লাশ আর কিছু দোমড়ানো মোচড়ানো গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলেন কেউ কেউ। আর সেই শহরেই, ওই একই ভেঙে পড়া ফ্লাইওভারের সামনে নিজের সব টুকু দিয়ে আহত, রক্তাক্তদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, অনেকে, হ্যাঁ, অনেকেই।

রায়া দেবনাথ

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ১৬:৫৩

একটা শহর। যে শহরের বুকে ভেঙে পড়া একটা উড়ালপুলের সামনে কিছু ছিন্নভিন্ন লাশ আর কিছু দোমড়ানো মোচড়ানো গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলেন কেউ কেউ। আর সেই শহরেই, ওই একই ভেঙে পড়া ফ্লাইওভারের সামনে নিজের সব টুকু দিয়ে আহত, রক্তাক্তদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, অনেকে, হ্যাঁ, অনেকেই। পুলিশ আসার ঘণ্টা দুই আগে থেকেই যাঁরা ওই ভয়ঙ্কর ধ্বংসাবশেষ থেকে যে কোনও ভাবে প্রাণ বাঁচাবার চেষ্টায় মাতেন। মধ্য বয়সী কোনও প্রৌঢ় বেলচা দিয়ে, প্রাণপন চেষ্টা চালান দানবাকৃতি সিমেন্টের চাঁই সরানোর। ব্যর্থ হন বা ব্যর্থ হবেন জেনেও চেষ্টাটা কিন্তু থামান না। আহতদের ধরাধরি করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিতে হুড়োহুড়ি পরে যায়। যদি বাঁচান‌ো যায়। সেই আশায় চাপা পড়া কোনও এক মুমূর্ষুর মুখে জল তুলে দেন। আবার ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া সেই শরীরটার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ওঠেন। উদ্ধারকাজে পুলিশ, সেনা জওয়ানের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাত জাগেন বহু মানুষ। ভোরেও একই উদ্যমে জড়ো হন, মানুষের জন্য, প্রাণের টানে।

এই শহরের যারা, দিনের বেশিরভাগ সময়টাই ব্যস্ত থাকেন ফেসবুকে এটা ওটা সেটা শেয়ারে, বিভিন্ন ছবি পোস্ট করতে, তারাও ওই সেই ফেসবুকেরই আপাত অকিঞ্চিত্কর ছোট্ট পোস্টের ডাকে সাড়া দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে শয়ে শয়ে ভিড় জমান মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর হাসপাতাল, সেন্ট্রাল ব্লা়ড ব্যাঙ্কের সামনে। কেউ বা ছুটে যান মারোয়ারি হাসপাতালের সামনে। আহতদের জন্য রক্ত দিতে। কোনও ভাবে যদি, কোনও সাহায্যে আসা যায় ওই মানুষগুলোর, সেই কমিটমেন্টে। এই ভীষণ সময়ে ইমারজেন্সিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও এক জুনিয়র ডাক্তার ফেসবুকে নিজের ওয়ালে পোস্ট করেন নিজের আর বন্ধুদের ফোন নম্বর। আহ্বান জানান রক্ত দেওয়ার, আহ্বান জানায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার। সে‌ই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে এক দেওয়াল থেকে অন্য দেওয়ালে। এই গরমে, এই ভোটের বাজারে এমনিতে ব্লাডব্যাঙ্কগুলোতে রক্তের বড় হাহাকার থাকে। কিন্তু সেই ঘাটতি যাতে আর একটাও প্রাণ নষ্ট করতে না পারে, তার টানেই জড়ো হন মানুষ। কালকের ব্ল্যা়ডব্যাঙ্কের পর আজও শুধু ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্ক, মেডিক্যল কলে়জের সঙ্গেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয় যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে, দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ায়। কোনও কোনওটির দায়িত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা, কোনওটির দায়িত্বে নিছকই কোনও রাজনৈতিক দল। সারা বছর যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মত নিয়ে একে অপরের সঙ্গে ঝগড়ায় মাতেন, আজ তারাও সেই সব ভুলে এক সঙ্গে পাশা পাশি বেডে শুয়ে হাসি মুখে রক্ত দেন।

আরও পড়ুন-সংখ্যাটা শুধুই ২৩! বিশ্বাস করি না

খবর দিও আমার বডি পেলে…

ক্রিকেট প্রেমী এই শহর চাইলেই সহজে ভুলে যেতে পারে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ভারতের হাইভোল্টেজ সেমি ফাইনালের সব উন্মাদনাকে। কেয়ার করে না ধোনির ব্যর্থতা বা বিরাটের ট্র্যাজিক হিরো হওয়ার মুহূর্তকে। সেই সময়টুকু সবটুকুনিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচানোর লড়াইয়ে। কেউ বা ফেটে পড়ে ক্ষোভে। সেই ক্ষোভের টানেই ছুটে যায় এক হাসপাতাল থেকে আর একটাতে।

প্রযুক্তির গাফিলতি না প্রশাসনিক ব্যর্থতা, সে হিসেবটার জবাব সম্ভবত মিলবে কিছু দিনের মধ্যেই। কিন্তু তার আগে, কয়েক ঘণ্টায় সবকিছু এলোমেলো করে দেওয়া মন খারাপের সময়টা প্রমাণ করে এই শহরে আজও মানবিকতার শিকড়টা গভীরে ছড়িয়ে আছে।

প্রমাণ করে, আজও এ শহরে ধ্বংসস্তূপের সামনে সেলফি তোলেন কেউ কেউ, আর নিজেদের সবটুকু নিয়ে সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দেন অনেক‌ে, অনেকেই।

vivekananda flyover collapse flyover collapse
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy