জীবে-প্রেম: এই পার্কেই বেজির লালন-পালন করেন বিপ্লববাবু। দমদম পার্কে। —নিজস্ব চিত্র।
আবেদন ছিল একটাই, ‘‘ওদের মারিস না। ধরে এনে আমাকে দে।’’
এমনি এমনি তো দেবে না। বিশেষ করে, যেখানে পায়রা ধরে খেয়ে নিচ্ছে ওরা। পিটিয়ে মারা সেই আক্রোশ থেকে। তাই, এক-এক জনকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়ার জন্য ১০০ টাকা মূল্য ধরে দেওয়া। এই ভাবে ১৫ জনের জীবন রক্ষা পেল।
তবে শুধু জীবন রক্ষা নয়, পুনর্বাসনও দরকার। দমদম পার্কে, বাগজোলা খাল সংলগ্ন ১০০ ফুট বাই ৩০ ফুট জায়গা জুড়ে তৈরি ফুল-ফল গাছের বাগানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ওদের। চার বছর ধরে ওটাই ঠিকানা ১৫টি বেজির। হ্যাঁ, বেজি। যাদের নেউলও বলে।
এক-একটি বেজিকে রক্ষা করার জন্য ১০০ টাকা খরচ করেছেন যিনি, তিনি পরিবেশকর্মী বা পরিবেশপ্রেমী হিসেবে খ্যাত নন মোটেই। তাঁর নাম বিপ্লব চন্দ। পাড়ায় পরিচিতি অবশ্য কালু নামে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা, মাধ্যমিকে না বসা বিপ্লব এখন পঁয়তাল্লিশ ছুঁয়েছেন। আট বছরের এক মেয়ের বাবার দিন গুজরান হয় জেনারেটর ভাড়া দিয়ে। এক দিন শুনলেন, যশোহর রোড লাগোয়া গ্যারাজপাড়ার এক দল ছেলে ফাঁদে বেজি ধরে বস্তায় ভরে পিটিয়ে মেরে ফেলছে।
কেন?
পাড়ার ছেলেরা পায়রা পোষে। বেজি সেই পায়রা ধরে খাচ্ছে। ওই তল্লাটে যখন অনেকটা জায়গা জুড়ে আগাছার জঙ্গল, বেজিরা আসছে সেখান থেকে।
‘‘ছেলেবেলা থেকে ভাল লাগে পশুপাখি, গাছপালা। বেজিদের মেরে ফেলা হচ্ছে শুনে মনের ভিতরে কেমন যেন হল, ব্যথা লাগল,’’ বলেন বিপ্লব। তত দিনে গোটা দশেক বেজি মেরে ফেলা হয়েছে। বিপ্লবের কথায়, ‘‘আমি ওদের সঙ্গে সমঝোতা করলাম। বললাম, বেজি ধরে না মেরে আমাকে দে। বেজি পিছু ১০০ টাকা তোদের দেব। ওরা রাজি হল।’’
আরও পড়ুন:গ্রাহকের তথ্য কতটা সুরক্ষিত, ফের প্রশ্ন
স্থানীয় বাসিন্দা, পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা পরিবেশবিদ কল্যাণ রুদ্রের বক্তব্য, বাস্তুতন্ত্রে প্রতিটি প্রাণ একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে, একে অপরের অস্তিত্বের সহায়ক। নগরায়ণের ফলে বেজির মতো প্রাণীরা বিপন্ন হয়ে পড়ছে, যার ফলে মানুষেরও সমস্যা। ‘‘এই অবস্থায় নিজের উদ্যোগে বেজিদের রক্ষা করার মতো অসাধারণ কাজ করেছেন নিতান্ত সাধারণ এক জন,’’ বলেন কল্যাণবাবু।
কখনও বাগজোলা খাল থেকে মাছ উঠলে বিপ্লব ওই বাগানে একটি পাত্রে করে বেজিদের খাওয়ার জন্য রেখে দেন।
স্থানীয় কাউন্সিলর, দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত ও চেয়ারম্যান-পারিষদ সমীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছেলেটা সারা দিন পরিবেশ নিয়ে পড়ে আছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন কাজ ভাবা যায় না।’’ রাজ্যের বন্যপ্রাণ বিভাগের বনপাল (সদর) শুভঙ্কর সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘শহর এলাকায় বন্যপ্রাণের মধ্যে বেজি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য রক্ষায় বেজির অবদান আছে। বেজিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে রক্ষা করার জন্য বন দফতর ওই ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy