দেওয়াল ভাঙতে দেওয়ালেই লেখা! তা-ও আবার ভরা ভোটের মরসুমে। মনের ভিতরে প্রথম দেওয়াল প্রতিনিয়ত বয়ে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। সেখানে অনুপ্রবেশ ঘটেছে মানসিক স্বাস্থ্যের। আর সেই দেওয়াল ভাঙতে উত্তর দমদমের বিভিন্ন ওয়ার্ডের দেওয়ালে মনকে জানার বার্তা দিচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
উত্তর দমদম পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বড় ফিঙা এলাকায় কাজী মৌলানা মহম্মদ নাসিরুদ্দিনের বাড়ির দেওয়ালে চোখ যেতেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন পথচলতিরা। মুক্তমনা মনকে বোঝাতে সেখানে আঁকা হয়েছে ছবি। পাশে লেখা, ‘মনকে চিনুন, মনকে জানুন, মনের যত্ন নিন’। সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর। আশপাশের দেওয়ালে প্রতীক, প্রার্থীর নাম, তাঁদের ভোটে জেতানোর বার্তার ফাঁকে মনের হদিস পাওয়ার কথা বলছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। এই কাজে তাদের সহযোগী উত্তর দমদম পুর কর্তৃপক্ষ।
কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। সম্প্রতি পুর এলাকার বাসিন্দাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। এর পরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৫৫ জন মহিলাকে প্রশিক্ষিত করে তাঁদের মধ্যে থেকে এই কাজের জন্য ১৪ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের নিয়ে ১, ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে সমীক্ষার পরে কাজ চলছে ২ নম্বর ওয়ার্ডে। সমীক্ষার লক্ষ্য— সচেতনতা বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কী প্রয়োজন তা বোঝা, রেফারাল এবং কাউন্সেলিং।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যৌথ প্রকল্পের প্রচারে দেওয়াল লিখন চেয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার রত্নাবলী রায়। তাঁর কথায়, “মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ছাড়া যে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, সেটা উপলব্ধি করানোর জন্য দেওয়াল লিখন জরুরি ছিল। এ নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা জানতে চেয়েছেন কেন এমন একটা সময়ে দেওয়ালে প্রচার চাইছি। শেষ পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন কেন জরুরি তা বুঝে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ।” পুর চেয়ারম্যান সুবোধ চক্রবর্তী এবং ভাইস চেয়ারম্যান লোপামুদ্রা দত্তচৌধুরীর সহযোগিতার প্রশংসাও করছেন রত্নাবলী।
এমন অভিনব উদ্যোগের শরিক হতে পেরে উচ্ছ্বসিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্মী সাগরিকা কুন্ডু- মঞ্জিমা চট্টোপাধ্যায়- পিয়ালী বিশ্বাসেরা। আগে দেওয়াল লিখেছেন? সাগরিকা বলেন, ‘‘আঁকা শিখেছি। তবে কারও বাড়ির দেওয়ালে এমন কাজ আগে করিনি।” এ ক্ষেত্রে তাঁদের মাস্টারমশাইয়ের ভূমিকায় ছিলেন চিত্রশিল্পী নবেন্দু সেনগুপ্ত। উৎসাহ দিতে হাজির ছিলেন স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দিদিরা। ‘‘দেওয়ালে মানুষের ছবি আঁকা নিয়ে বাড়ির মালিকের আপত্তি ছিল। আমরা বলি, মনের দুঃখ-বেদনা বোঝানোর জন্য মানুষের ছবি আঁকা হয়েছে। উনি তা শুনে সম্মতি দেন।”— বলেন সাগরিকা। নাসিরুদ্দিনও বলছেন, ‘‘এমন
উদ্যোগ খুবই ভাল। তাই সব শুনে অনুমতি দিয়েছি।’’
দেওয়াল লিখনের এই তালিকায় আছে ছ’নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাড়ি, চার নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতাল এবং পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের একটি স্কুল। লোপামুদ্রার কথায়, ‘‘শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আমরা সকলে ভাবি। কিন্তু এর সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যও যে ঠিক রাখা প্রয়োজন, সেটা বোঝা দরকার। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির তরফে আমাদের কাছে এই প্রকল্পের প্রস্তাব আসার পরে তাই সম্মতি দিতে দ্বিতীয় বার ভাবিনি।’’