শহরের রাজপথ। নিজস্ব চিত্র।
ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে কলকাতার রাজপথ— তৃণমূলের ডাকে মোদী বিরোধী ঝড় উঠল সর্বত্রই। এক দিকে যখন মঞ্চ থেকে বিরোধী শিবিরের ভাষণে বিদ্ধ হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী, তখন ব্রিগেডের জনসমুদ্র স্লোগান দিচ্ছে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’, ‘মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও’। শনিবার তৃণমূলের এই ঐতিহাসিক জনসভার সৌজন্যে গোটা দেশ শুনল, ‘চলো পাল্টাই, এ বার আমরা দিল্লি চাই’।
এ দিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’-র পক্ষে দাঁড়ানো নেতাদের ভাষণ শুনতে হাজির হয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। ভোর থেকেই দলে দলে ব্রিগেডমুখী হতে শুরু করে মিছিল। কিছু দলছুট বাদ দিলে, বিগত বেশ কয়েকটি ব্রিগেড সমাবেশে এমন ভিড় দেখা যায়নি। মোদী এবং অমিত শাহ বিরোধী স্লোগানের ঝাঁঝ যেমন ছিল, তেমনই তাঁদের কার্টুন আঁকা কার্টআউটও সমাবেশের রং বদলে দিয়েছে।
মিছিলে যেতে যেতে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি কর্মী-সমর্থকেরা। কলকাতা পুরসভার ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীরা ভ্যানরিকশা করে ‘মোদী টি স্টিল’ নিয়ে হাজির হন। অমিত শাহ এবং মুকুল রায়কে চা করে খাওয়াতে দেখা গিয়েছে মোদীকে! তাতে লেখা ‘২০১৯, বিজেপি ফিনিস’। কর্মীদের কথায়, “লোকসভা নির্বাচনের পর মোদীকে আবার চা-ই বিক্রি করতে হবে।’’
শহরের রাজপথে ছিল বিভিন্ন কাটআউট। ছবি: পিটিআই।
ধর্মতলা থেকে মিছিল কিছুটা এগিয়েছে, তখন আর একটি জনস্রোতের মধ্যে দিয়ে কার্টআউটে দেখা গেল অমিত শাহের ঘাড়ে চড়েছেন মোদী। তাতে লেখা ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’। চাকদহ থেকে আসা মিছিলের ‘ট্যাবলো’-তে লেখা ‘চলো পাল্টাই, এ বার আমরা দিল্লি চাই।’ শুধু তাই নয়, মোদীকে একটি চেয়ারে বসিয়ে, তাতে ব্যঙ্গ করে লেখা হয়েছে, ‘আমি ৫৬ ইঞ্চি ছাতিওয়ালা’।
পাহাড় থেকে সুন্দরবন, জঙ্গলমহল থেকে কলকাতা— ধামসা-মাদলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল স্লোগান। বিরোধীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, যেখানেই তৃণমূলের সভা হয়, সেখানে মমতার বড় বড় কার্টআউট লাগানো হয়। এ বার কিন্তু শহরে আসা ভিন্ রাজ্যের নেতাদের সমান ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কাটআউটে।
মিছিল, স্লোগানের পাশাপাশি ব্রিগেড-কে কেন্দ্র করে এ দিন যেন কলকাতায় হাট বসেছিল। সেখানে যেমন খাবারের স্টল ছিল, তেমনই জামা-কাপড় থেকে শুরু করে জুতো, ফল, এমনকি মোবাইলের বিভিন্ন সামগ্রীও বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে। ব্রিগেডে আসা অধিকাংশই মানুষ ফেরার পথে চুটিয়ে কেনাকাটাও করেছেন। দামও ছিল সাধ্যের মধ্যে।
এক জায়গায়, খাবারের দাম এত কম ছিল, যে সেখানে উপচে পড়েছিল ভিড়। ওই দোকানদারকে চার দিক থেকে ঘিরে ধরেছে কয়েক ডজন হাত। ভিড়ের মধ্যে থেকেই শোনা গেল, একটা চিকেন লেগ পিস মাত্র ২০ টাকা, তার সঙ্গে মিলবে দু’পিস পাউরুটিও। ভেটকি মাছের বাটার ফ্রাই— মাত্র ১০ টাকা, গরম গরম।
২০ টাকা মিলছিল দু’পিস পাউরুটি আর এক টুকরো মাংস। নিজস্ব চিত্র।
দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন কর্মী-সমর্থকেরা। পেটে খিদেও রয়েছে। এত সস্তায় খাওয়ার কেউ হাতছাড়া করননি। ভিড়ের মধ্য থেকে এক জন বলে উঠলেন, ‘‘আমি তো আগে টাকা দিয়েছি। আমি পাব না?’’ তাঁকে থামিয়ে আর এক জন বললেন, ‘‘কী হল আমাকে দিলেন না?’’ তার মধ্যেই এক জন হঠাৎ হাজির হয়ে বললেন, ‘‘আমার ১০০ প্লেট লাগবে।’’
জানবাজারের বাসিন্দা ওই দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করা গেল, এত কম দামে রান্না করা খাবার দিচ্ছেন কী করে? প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘দিদির ব্রিগেডের জন্যে আমার কপাল খুলে গেল। ৭০ কেজি চিকিন বানিয়েছিলাম। সব শেষ।’’ রাস্তায় পাওয়া যাচ্ছিল, ডিম-ভাত, মাংস-ভাত থেকে বিরিয়ানি, ফ্রায়েড রাইসও। সবেই কম দামে। কিন্তু কোন যাদুতে, তা রহস্যই থেকে গেল!
(দিনের বাছাই খবর থেকে ব্রেকিং নিউজ - কলকাতার সব খবর পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy