এত্তা জঞ্জাল: খাওয়াদাওয়ার পরে ইডেনের র্যাম্পের তলায় ছিল এমনই অবস্থা। ছবি: শৌভিক দে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনও বক্তৃতা শেষ করেননি। তত ক্ষণে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের বিভিন্ন প্রান্তে ঝাড়ু হাতে ছড়িয়ে পড়েছিলেন কলকাতা পুরসভার ঠিকা শ্রমিকেরা। যদিও তৎক্ষণাৎ নির্দেশ পাঠিয়ে সাফাই অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে অবশ্য সভা শেষের ১২ মিনিটের মধ্যে ব্রিগেড ময়দান, রেড রোডে স্বচ্ছতা অভিযান শুরু হয়ে গিয়েছিল। অথচ সমাবেশে যোগ দেওয়া কর্মী-সমর্থকদের দৌলতে শহরের বিভিন্ন রাস্তার যত্রতত্র পড়ে রইল আবর্জনা!
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিকেল ৩টের সময়ে এ দিনের সভা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তাই ঘড়িতে ৩টে বাজতেই ঝাড়ু হাতে ব্রিগেড পরিষ্কারে নেমে পড়েন সাফাইকর্মীরা। কিন্তু সভানেত্রীই তো তখনও বক্তৃতা দেননি! তাই পুর কর্তারা দ্রুত সাফাইয়ের কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ পাঠান। পরে সভা শেষ হলে প্রায় ৯০০ কর্মী সাফাই অভিযানে নেমে পড়েন। ঝাঁটা, বেলচা নিয়ে হাত লাগান স্বেচ্ছাসেবকেরাও। ধুলোয় ভরা রেড রোড জল ঢেলে পরিষ্কারও শুরু হয়ে যায়।
দ্রুত কাজ করার জন্য সভা শেষের ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই চেনা চেহারায় ফিরে আসে ব্রিগেড ও রেড রোড। কিন্তু শহিদ মিনার সংলগ্ন এলাকার ছবি ছিল উল্টো। মিনারের আশপাশে তখনও মুরগির দেহাবশেষ পড়ে। যত্রতত্র পড়ে থার্মোকলের এঁটো থালা, পেঁয়াজের খোসা, আনাজের অবশিষ্ট, ভাত। শহিদ মিনার চত্বরের যে সব অংশে চড়ুইভাতির ছাপ স্পষ্ট, সেখানে সাফাই হয়েছে কি না, প্রশ্ন করা হলে এক কর্মী বলেন, ‘‘সব পরিষ্কার করে দিয়েছি।’’
বসু বিজ্ঞান মন্দিরের সামনে থার্মোকলের প্লেট। শনিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
ইডেন গার্ডেন্স সংলগ্ন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ইডেনের র্যাম্পের নীচে তাঁদের খিচুড়ি খাওয়ানোর আয়োজন হয়। ইডেন গার্ডেন্সের এক নিরাপত্তারক্ষীর অভিযোগ, শুক্রবার রাত থেকে পাত পেড়ে খাওয়া চলছে। একে তো নির্দিষ্ট জায়গায় কেউই প্লেট ফেলেননি, তার উপরে আবর্জনার পাত্র ভরে গেলেও পরিষ্কার হয়নি। ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। মাটিতে পড়ে থাকা খিচুড়ির প্লেট মাড়িয়ে অনেকেই গ্যালারিতে উঠে পড়েন। স্টেডিয়ামের শৌচালয়ের অবস্থাও তথৈবচ। এক কর্মীর দাবি, শনিবারের মধ্যেই ইডেন গার্ডেন্স আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। ব্রিগেডের আশপাশে অস্থায়ী শৌচাগার রাখা থাকলেও জনসমুদ্রের তুলনায় সেটা যে অপ্রতুল, এ দিন টের পাওয়া গেল। দুপুরের পরে উট্রাম রোড, মেয়ো রোড দিয়ে হাঁটার সময়ে রুমাল চাপা ছাড়া উপায় ছিল না।
এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিষ্কার হয়নি সূর্য সেন স্ট্রিট, এপিসি রোড। আমহার্স্ট স্ট্রিট ও মহাত্মা গাঁধী রোডের ক্রসিংয়ের কাছে রাস্তার উপরে সন্ধ্যাতেও পড়ে রয়েছে বিরিয়ানির প্যাকেট। উচ্ছিষ্ট খাবার সরাতে ঝাড়ু যে পড়েনি, তা স্পষ্ট। সেই নোংরার উপর দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গাড়ি। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের সামনের ছবিও একই। কলেজ সংলগ্ন বাসস্টপের ডাস্টবিন থেকে উঁকি মারছে উচ্ছিষ্ট। পাশেই সপরিবার বাসের প্রতীক্ষায় শিশু কোলে বসে রয়েছেন এক মহিলা। তাঁর পরিজন মহম্মদ আসলাম বলেন, ‘‘অনেক ক্ষণ বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। না পেরে নোংরার পাশেই বসে পড়লাম।’’ শিয়ালদহ, রাজাবাজারের যেখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল, সেখানে খাবারের প্লেটের সঙ্গে এ দিন মদের খালি বোতলও পড়ে থাকতে দেখা গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy