Advertisement
E-Paper

খুনের অভিযোগে ধৃত তৃণমূলের কাউন্সিলর

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে তেলকল ঘাটের কাছ থেকে শৈলেশবাবুকে ধরা হয়। দুপুরে তাঁকে হাওড়া আদালতে আনার পরে কংগ্রেসের এক দল সমর্থক শৈলেশবাবুর উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে ধৃত কাউন্সিলরের অনুগামীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বেধে যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ০২:০৯
ধৃত শৈলেশ রাই। নিজস্ব চিত্র

ধৃত শৈলেশ রাই। নিজস্ব চিত্র

পুলিশের দাবি, তিনি ‘প্রভাবশালী’। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর হলেও শুরু থেকেই খুব সাবধানে পা ফেলতে হয়েছে তাদের। জোগাড় করতে হয়েছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ। তাই খুনের পরে অভিযুক্তকে ধরতেই লেগে গেল গোটা একটা বছর।

মঙ্গলবার ধৃত ওই ব্যক্তির নাম শৈলেশ রাই। তিনি হাওড়া পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। পুলিশ জানিয়েছে, বছরখানেক আগে খুন হয়েছিলেন একটি আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী। সেই ঘটনায় পাঁচ জনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ বার খুনের মূল চক্রান্তকারী অভিযোগে শৈলেশবাবুকে ধরা হল। বছর তিনেক আগে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে শৈলেশবাবুর নাম পাওয়া গিয়েছিল আগেই। কিন্তু তিনি যথেষ্ট প্রভাবশালী বলে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই কারণেই এতটা সময় লেগে গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে তেলকল ঘাটের কাছ থেকে শৈলেশবাবুকে ধরা হয়। দুপুরে তাঁকে হাওড়া আদালতে আনার পরে কংগ্রেসের এক দল সমর্থক শৈলেশবাবুর উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে ধৃত কাউন্সিলরের অনুগামীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বেধে যায়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে আগে থেকেই আদালত চত্বরে বিশাল পুলিশবাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়েছিল। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ দফায় দফায় লাঠি চালিয়ে এলাকা ফাঁকা করে দেয়। পরে দু’জন কংগ্রেস সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়। বিচারক শৈলেশবাবুকে তিন দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের ১৭ জুন হাওড়ার রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনের এক আবাসনে রাত পৌনে ন’টা নাগাদ খুন হন নিরাপত্তারক্ষী বিজয় মল্লিক। আবাসনের সিসিটিভি-তে সেই খুনের ছবি ধরা পড়ে। দেখা যায়, সাদা জামা পরা এক ব্যক্তি বছর ষাটেকের বিজয়বাবুকে একেবারে সামনে থেকে গুলি করে পালিয়ে যাচ্ছে। আপাতনিরীহ ওই নিরাপত্তারক্ষীকে কে বা কারা, কী কারণে ওই ভাবে খুন করল, তা ভাবিয়ে তোলে পুলিশকে। তদন্তে নেমে পুলিশে জানতে পারে, সম্পত্তি সংক্রান্ত গোলমালকে কেন্দ্র করেই ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে তাঁকে খুন করা হয়েছে।

সেই সূত্র ধরে এলাকার এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একে একে পাকড়াও করা হয় আরও চার জনকে। যার মধ্যে এক সময়ে শৈলেশবাবুর ঘনিষ্ঠ প্রহ্লাদ সিংহ নামের এক যুবকও রয়েছে। তদন্তের শেষ পর্যায়ে গ্রেফতার করা হয় ভাড়াটে খুনি সঞ্জয় যাদবকে। ধৃত সঞ্জয় ইন্দো-টিবেটান বর্ডার ফোর্সের এক জওয়ান। জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, টাকার লোভে ওই জওয়ানই বিজয়বাবুকে মারার ‘সুপারি’ নিয়েছিল। তদন্তকারীরা জানান, সঞ্জয়কে জেরা করতেই সে জানিয়ে দেয়, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈলেশবাবু তাকে খুনের বরাত দিয়েছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই শৈলেশবাবুকে গ্রেফতারের দাবিতে কংগ্রেস দফায় দফায় বিক্ষোভ-আন্দোলন চালায়। তা সত্ত্বেও পুলিশ ধৃত পাঁচ জনের বিরুদ্ধেই আদালতে চার্জশিট জমা দেয়।

এই খুনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে হাওড়ারই এক ব্যক্তি কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দাখিল করেছিলেন। তার ভিত্তিতে আদালত হাওড়া সিটি পুলিশকে ভর্ৎসনা করে অবিলম্বে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পান খোদ হাওড়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার তথাগত পাণ্ডে। শৈলেশবাবুর নাম দিয়ে ফের অতিরিক্ত চার্জশিট তৈরি হয়। পুলিশ জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে তদন্ত চালানোর পরে উপযুক্ত প্রমাণ পেয়ে এ দিন সকালে তথাগতবাবুই শৈলেশবাবুকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন।

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের হাতে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আসার পরেই শৈলেশবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে খুন ও খুনের ষড়যন্ত্র-সহ অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে।’’

এ দিকে, দলের এক জন কাউন্সিলরের গ্রেফতারির ব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে বলেছেন। পুলিশ তদন্ত করে মনে করেছে, গ্রেফতার করা দরকার। তাই করেছে। তা ছাড়া, উনি তৃণমূলের কোনও দলীয় পদে নেই। কংগ্রেসের টিকিটে জিতে এসে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।’’

Murder TMC Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy