Advertisement
E-Paper

ধৃত তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ যুবক, চাঁইরা কবে, প্রশ্ন পুলিশেই

পুলিশের ‘সাজানো ঘটনা’ ফাঁস হয়ে গিয়েছিল আগেই। আলিপুর-কাণ্ডে আসলে কী ঘটেছিল, ধামাচাপা দিতে ভুল লোককে গ্রেফতার করে আদালতে ভর্ৎসিত হয়েছিল পুলিশ। এ বার বাহিনীর নিচুতলার চাপে পড়ে মুখরক্ষার চেষ্টা শুরু হয়ে গেল। আলিপুর থানায় হামলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে যোগেশ বোরা নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে সরকারি গাড়ি চালায়। পুলিশ জানাচ্ছে, হামলার সময়ে ঘুষি মেরে যোগেশ আলিপুর থানার জানলার কাচ ভাঙছে বলে থানার সিসি টিভি-র ফুটেজে দেখা গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৯
এই সিসিটিভি ফুটেজ দেখেই ধরা হয় অভিযুক্ত যোগেশ বোরাকে (ডান দিকে)। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

এই সিসিটিভি ফুটেজ দেখেই ধরা হয় অভিযুক্ত যোগেশ বোরাকে (ডান দিকে)। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

পুলিশের ‘সাজানো ঘটনা’ ফাঁস হয়ে গিয়েছিল আগেই। আলিপুর-কাণ্ডে আসলে কী ঘটেছিল, ধামাচাপা দিতে ভুল লোককে গ্রেফতার করে আদালতে ভর্ৎসিত হয়েছিল পুলিশ। এ বার বাহিনীর নিচুতলার চাপে পড়ে মুখরক্ষার চেষ্টা শুরু হয়ে গেল।

আলিপুর থানায় হামলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে যোগেশ বোরা নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে সরকারি গাড়ি চালায়। পুলিশ জানাচ্ছে, হামলার সময়ে ঘুষি মেরে যোগেশ আলিপুর থানার জানলার কাচ ভাঙছে বলে থানার সিসি টিভি-র ফুটেজে দেখা গিয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে যেখানে গোলমালের সূত্রপাত, আলিপুরের সেই বিধানচন্দ্র কলোনিরই বাসিন্দা যোগেশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ঘনিষ্ঠ দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল নেতা তথা বিধানচন্দ্র কলোনির সভাপতি প্রতাপ সাহার ‘কাছের লোক’ এই যোগেশ।

প্রতাপ সাহা কিংবা তাঁর ডান হাত মনোজকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। ধরতে পারেনি থানায় হামলা চালানো আইনজীবীর পোশাক পরা তৃণমূলের এক নেত্রীকেও। তবে আলিপুর থানার নিচুতলা বলছে, যোগেশকে গ্রেফতার করায় হামলার ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ পরিষ্কার হয়ে গেল। কিন্তু প্রতাপ সাহা এবং তাঁর দুই ঘনিষ্ঠকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? পুলিশের দাবি, হামলার সময়ে প্রতাপ থানায় ছিলেন না। সিসি টিভি ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি। অন্য কেউই নিজেদের বাড়িতে থাকছেন না। সিসি টিভি-র ফুটেজে উপস্থিত আইনজীবীর পোশাক পরা এক মহিলা ও দশাসই যুবকের ফোন কিন্তু এখনও খোলা রয়েছে। আজ, শুক্রবার ধৃত যোগেশকে আদালতে পেশ করার কথা। পুলিশ জানাচ্ছে, সেই সঙ্গে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত ১৪-১৫ জনের কথা আদালতে জানানো হবে। সিসি টিভি-র ফুটেজ ঘেঁটে চিহ্নিত আরও পাঁচ জনের ছবিও বিচারকের কাছে জমা দেওয়া হবে।

বাস্তবিক, আদালতে প্রথম পর্যায়ের তদন্তের ‘নাটক’ ভেস্তে গিয়ে মুখ পুড়েছে পুলিশের। পাঁচ জনকে গ্রেফতার করলেও আলিপুর-কাণ্ডে তাঁদের জড়িত থাকার ছিটেফোঁটা প্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি পুলিশ। এর পরেই সিসি টিভি-র ফুটেজের তথ্যপ্রমাণে নজর দিয়েছেন তদন্তকারীরা। আর তাতে যা উঠে আসছে, তা প্রত্যাশিত ভাবেই শাসক দলের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তির। প্রশ্ন উঠছে, আসল দুর্বৃত্তদের দেখেও না-দেখে এত দিন কেন মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন তদন্তকারীরা? পুলিশ এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে যাচ্ছে। লালবাজারের কর্তাদের দাবি, সিসি টিভির ফুটেজে যাদের দেখা গিয়েছে, তারা পলাতক। সুতরাং দুর্বৃত্তদের কাউকে কাউকে চিনলেও ধরা যায়নি। এ দিন দুপুরে যোগেশ বিধানচন্দ্র কলোনির বাড়িতে ফিরতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এলাকার বাসিন্দারা এ দিনও পুলিশকে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। ওই তল্লাটে গোলমালও বাধে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, পুলিশ মারধর করেছে।

আলিপুর-কাণ্ডের তদন্তে গতি আনতে বুধবারই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার বদল হয়েছে। তদন্তের দেখভাল করার দায়িত্ব ওসি-র হাত থেকে নিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই এলাকার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়কে। এই বদলের পরের দিনই পুলিশের জালে ধরা পড়ল যোগেশ। এ দিন ধৃতকে থানায় আনা হলে নিচু তলার পুলিশ কর্মীরা অনেকেই তাকে কটূক্তি করতে থাকেন। প্রতাপ কবে ধরা পড়বে তা-ও জানতে চাওয়া হয় তদন্তকারী অফিসারদের কাছে। এ দিন আলিপুর থানায় গিয়ে দেখা যায়, তদন্ত নিয়ে আলোচনায় বসেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা। যোগেশকে জেরাও করা হচ্ছে। থানায় তাণ্ডবের ঘটনার মুখ টেবিলের তলায় ফাইল দিয়ে মুখ ঢেকে আশ্রয় নেওয়া কনস্টেবলকে এ দিন দেখা যায়নি। সূত্রের খবর, তিনি ছুটিতে গিয়েছেন।

এক সপ্তাহ আগে আলিপুরে অতিরিক্ত জেলাশাসকের বাংলোর পাশে ২০ কাঠা জমিতে পূর্তকর্মীরা কাজ করতে গেলে স্থানীয় বিধানচন্দ্র কলোনির বাসিন্দারা বাধা দিয়েছিলেন। পুলিশ সেই গোলমাল সামলাতে গেলেই হিতে বিপরীত ঘটে। পুলিশ ক’জনকে আটক করলে তাদের ছাড়াতে ক্ষুব্ধ জনতার একাংশ থানায় চড়াও হয়। তারপরই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ দুর্বৃত্তদের হাতে চরম হেনস্থা হয় পুলিশ। সংবাদমাধ্যমের ছবিতে ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য। শাসক দলের কাছে কার্যত আত্মসমর্পণের জন্য নানা মহলে ধিকৃত হয়েছে পুলিশ।

যোগেশকে সাত দিন পরে গ্রেফতার করলেও, কেন বাকিদের পুলিশ ধরছে না তার প্রতিবাদে বিজেপি নেতা রিতেশ তিওয়ারির নেতৃত্বে প্রায় শ’খানেক লোক এ দিন থানায় ঘণ্টাখানেক ধরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, মিথ্যে অভিযোগে যে পাঁচজনকে পুলিশ ফাঁসিয়েছিল, তাঁদের সবাইকে আর্থিক ক্ষতিপুরণ দিতে হবে পুলিশকে। তা ছাড়া, ওই সাজানো তদন্তে জড়িত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহা-সহ শাসক দলের ঘনিষ্ঠ অন্য অভিযুক্তদেরও গ্রেফতার করতে হবে।

TMC alipore case kolkata news online kolkata news yogesh bora police arrest alipore police station agitation big leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy