Advertisement
০৮ মে ২০২৪

গন্তব্য বদলে অন্যত্র যেতে হচ্ছে পর্যটকদের

অর্ণববাবুরা তো কলকাতা থেকে দার্জিলিং পাড়ি দেওয়ার আগেই অশান্তির খবর জেনে গন্তব্য বদল করে বেঁচেছেন। কিন্তু এ শহর থেকে যাওয়া অনেকেই দার্জিলিং যাওয়ার পথে আটকে গিয়েছেন।

পুড়ছে গাড়ি। দূরে হোটেল থেকে এমনই দৃশ্য ধরা পড়ল।

পুড়ছে গাড়ি। দূরে হোটেল থেকে এমনই দৃশ্য ধরা পড়ল।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ০২:০৫
Share: Save:

পুলিশের চাকরির শত ব্যস্ততার মধ্যেই মেরেকেটে দিন চার-পাঁচেকের ছুটি জোগাড় হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেনে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য ব্যাগপত্রও গুছিয়ে নিয়েছিলেন পুলিশ অফিসার অর্ণব শুক্ল। স্ত্রী ও এক বছরের মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আনন্দের তাল কাটল টিভি খুলতেই!

টিভিতে অশান্ত দার্জিলিংয়ের ছবি দেখে বেজায় চিন্তায় পড়ে অর্ণববাবু ফোন করলেন ভ্রমণ সংস্থায়। জানালেন, এত ছোট বাচ্চাকে নিয়ে তিনি কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতে পড়তে চান না। তাই উত্তরবঙ্গেই অন্য কোথাও ব্যবস্থা করে দিক ভ্রমণ সংস্থা। অগত্যা ভ্রমণ সংস্থার তরফে অর্ণববাবুদের জন্য লাটাগুড়িতে ব্যবস্থা করা হল। সন্ধ্যায় স্টেশনে যাওয়ার সময়ে তিনি বললেন, ‘‘হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাচ্চাকে নিয়ে কোনও ঝামেলায় গিয়ে কী লাভ। কিন্তু অনেক কষ্ট করে ছুটি পেয়েছি, তাই কোথাও তো একটা যেতেই হবে।’’

শুধু নয়াবাদের বাসিন্দা অর্ণববাবুই নন। এ দিন দুপুরের পরে এমন ভাবেই কলকাতা থেকে জেলা, বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার মালিক-প্রতিনিধিদের কাছে অসংখ্য ফোন গিয়েছে বিভ্রান্ত পর্যটকদের। বলা মাত্রই সকলকে যে অন্যত্র ব্যবস্থা করে দেওয়া গিয়েছে, তেমনটা নয়। তবে ভ্রমণ সংস্থাগুলির তরফে জানানো হয়েছে, যতটা সম্ভব পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই অন্যত্র ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে এখনও। যেমন শিলিগুড়ির এক ভ্রমণ সংস্থার কর্তা অনিমেষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অনেককেই শিলিগুড়িতে রেখে কিংবা আশপাশে কোথাও পাঠিয়ে আপাতত সামাল দিচ্ছি।’’

অর্ণববাবুরা তো কলকাতা থেকে দার্জিলিং পাড়ি দেওয়ার আগেই অশান্তির খবর জেনে গন্তব্য বদল করে বেঁচেছেন। কিন্তু এ শহর থেকে যাওয়া অনেকেই দার্জিলিং যাওয়ার পথে আটকে গিয়েছেন। যেমন হেদুয়ার বাসিন্দা অঞ্জন রায় পরিবারের চোদ্দো জনকে নিয়ে বুধবার সকালেই পৌঁছে গিয়েছিলেন কালিম্পংয়ের ইচ্ছেগাঁও-তে। এ দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ মালপত্র বোঝাই করে রওনা হয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের পথে। কিন্তু রাস্তায় তীব্র যানজট। বেশ কিছুক্ষণ লম্বা গাড়ির লাইনে আটকে থেকে জানতে পারেন দার্জিলিং অশান্ত। গাড়ি এগোনো মুশকিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়িতেই বসে থাকতে হয় তাঁদের। বিভ্রান্ত অঞ্জনবাবু ফোনে বলেন, ‘‘পাহাড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে। সঙ্গে তিনটি বাচ্চা, কয়েক জন বয়স্কও আছেন। কী করব বুঝতেই পারছি না!’’ তিনি জানালেন, ইচ্ছেগাঁও-তে যেখানে তাঁরা ছিলেন, সেখানেই আবার ফোন করে থাকতে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সেখানে আর জায়গা নেই। জানা যাচ্ছে, দার্জিলিংয়ে ওঠার রাস্তায় সেনা ক্যাম্পেও বসে রয়েছেন বহু বাঙালি পর্যটক। কেউ আবার বারবার ভ্রমণ সংস্থায় যোগাযোগ করছেন উত্তরবঙ্গের অন্যত্র ব্যবস্থা করে দেওয়া বা পাহাড় থেকে নামিয়ে আনার জন্য।

এ দিকে শহরের এক ভ্রমণ সংস্থার মালিক বাচ্চু চৌধুরীর অন্য চিন্তা। বলেন, ‘‘আচমকা অশান্তিতে দার্জিলিংয়ের ব্যবসা একেবারে গেল। এ বার যদি সেবক রোডও বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে সিকিম নিয়েও সমস্যা হবে। কী করে যে ব্যবসা চলবে!’’

তা নিয়ে অবশ্য পর্যটকেরা আপাতত চিন্তিত নন। বরং যাঁরা আজ কোনওমতে শিলিগুড়ি নেমে এসেছেন, ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন তাঁরা। যেমন বালির বাসিন্দা শ্রেষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘দুগ্গা দুগ্গা করে এখন বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tourists Travel Scuffle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE