Advertisement
২০ মে ২০২৪
Spinal Muscular Atrophy

১৭ কোটির জিন থেরাপি বিনামূল্যে মিলল সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে 

হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা রণজিৎ পাল পেশায় সোনার কারিগর। রণজিৎ জানান, ছেলের বয়স যখন তিন মাস, তখনই তিনি ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ করেন, পা তুলছে না সৌম্যজিৎ।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৪ ০৭:৪১
Share: Save:

জিনঘটিত বিরল রোগ এসএমএ (স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি)-র চিকিৎসায় পূর্ব ভারতে এই প্রথম সরকারি হাসপাতালের প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ নিখরচায় জিন থেরাপির প্রয়োগ হল এক শিশুর শরীরে। এসএমএ টাইপ টু-তে আক্রান্ত, এক বছর ন’মাসের সৌম্যজিৎ পালকে দিন পাঁচেক আগে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রচেষ্টায় এই থেরাপি দেওয়া হয়েছে। আপাতত সেখানেই চিকিৎসকদের নজরদারিতে রয়েছে সে।

হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা রণজিৎ পাল পেশায় সোনার কারিগর। রণজিৎ জানান, ছেলের বয়স যখন তিন মাস, তখনই তিনি ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ করেন, পা তুলছে না সৌম্যজিৎ। ছেলেকে এন আর এস হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক মাসের মধ্যে ধরা পড়ে, এসএমএ টাইপ টু-তে আক্রান্ত সে। ওই হাসপাতালের নিউরো-মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক যশোধরা চৌধুরীর প্রচেষ্টায় নথিপত্রের দীর্ঘ জটিলতা পেরিয়ে থেরাপি পাওয়ার প্রক্রিয়ায় সাফল্য আসে।

বিদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার উদ্যোগে সাড়ে ১৭ কোটি টাকার জিন থেরাপি বিনামূল্যে দেওয়ার প্রকল্পের (কম্প্যাশনেট ইউজ় প্রোগ্রাম) আওতায় হাতে গোনা যে ক’টি শিশু আছে, তাদেরই এক জন সৌম্যজিৎ। রণজিৎ জানান, পা-হাত তুলতে পারে না শিশুটি। খাবার খাওয়াতেও বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এন আর এসের মাধ্যমেই এসএমএ রোগীদের সংগঠন, ‘কিয়োর এসএমএ’র সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল। শিশুর চিকিৎসায় বিভিন্ন ভাবে ওই সংগঠন পাশে থেকেছে বলেও জানান রণজিৎ।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বৌদ্ধিক বিকাশ ঠিক থাকলেও হাঁটাচলা, বসার ক্ষমতা কমে যায় এসএমএ আক্রান্তদের। এর জন্য দায়ী সার্ভাইভাল মোটর নিউরন (এসএমএন) জিনের জন্মগত ত্রুটি। মঙ্গলবার চিকিৎসক যশোধরা চৌধুরী জানান, অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী এই প্রয়াসে পাশে থেকেছেন। এ ছাড়া, সুপার ইন্দিরা দে-সহ বিভাগের সব চিকিৎসক ও নার্সের সহায়তা না পেলে এই কাজ সম্ভব হত না। যশোধরা বলেন, ‘‘বাচ্চাটি বসতে পারে না। ঘাড়ও শক্ত হয়নি। আশা করছি, এই থেরাপির ফলে সৌম্যজিতের রোগ-বৃদ্ধির প্রকোপ আটকানো যাবে। পাশাপাশি, তার ফিজ়িক্যাল থেরাপি-সহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসাও চলবে। এই প্রচেষ্টায় সফল হলে বিরল রোগের চিকিৎসায় আরও পদক্ষেপ করতে পারব আমরা।’’

রাজ্যের সব এসএমএ রোগীদের তরফে এন আর এস হাসপাতাল ও চিকিৎসক যশোধরা চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ‘কিয়োর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মৌমিতা ঘোষ বলেন, ‘‘সরকার ও সরকারি হাসপাতাল এ ভাবে বিরল রোগীদের পাশে থাকলে পরিবারগুলি আগামী দিনের জন্য আশার আলো দেখবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Spinal Muscular Atrophy NRS Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE