Advertisement
E-Paper

গাড়িচালককে ‘হেনস্থা’ পুলিশেরই

সূত্রের খবর, গত ২৫ মে ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুর চিড়িয়াখানার সামনে। রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখা (এসিবি)-র পুলিশ সুপার অঞ্জন চক্রবর্তীর গাড়ি চালান ওই কনস্টেবল।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০২:৩০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ট্র্যাফিক অফিসারের গালমন্দের মধ্যেই এক কনস্টেবল বারবার বলার চেষ্টা করেছিলেন, তিনি পুলিশের গাড়ির চালক। ডিউটিতে আছেন। মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন না। কিন্তু অভিযোগ, সে কথায় কর্ণপাত না করে চালককে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনেন ওই অফিসার। তাঁর কাছে টাকাও দাবি করা হয়। এর পরেই আটক করা গাড়ির ‘পুলিশ’ স্টিকারে চোখ পড়তে খানিকটা দমে যান অফিসার। ছেড়ে দেন চালককে। কিন্তু ওই কনস্টেবল এক জন সিনিয়র সহকর্মীর আচরণে এতই মর্মাহত হয়ে পড়েন যে পরের দিনই লিখিত অভিযোগ করেন তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

সূত্রের খবর, গত ২৫ মে ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুর চিড়িয়াখানার সামনে। রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখা (এসিবি)-র পুলিশ সুপার অঞ্জন চক্রবর্তীর গাড়ি চালান ওই কনস্টেবল। নিজের গাড়ির চালকের থেকে এহেন অভিযোগ পেয়ে যথাযথ তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে অঞ্জনবাবু সেটি পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের কাছে পাঠিয়ে দেন বলে লালবাজার সূত্রের খবর। যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অঞ্জনবাবু। আর পুলিশ কমিশনারকে এসএমএস করলে তিনি ডিসি (ট্র্যাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারকে বিষয়টি দেখতে বলেন।

পরে ডিসি (ট্র্যাফিক) বলেন, ‘‘আমি ভবানীপুর ট্র্যাফিক গার্ডের অতিরিক্ত ওসি-র সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিজে ওই দিন অভিযানে ছিলেন। তিনি জানান, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’ অর্থাৎ যে গার্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারই এক জন পদাধিকারীর সঙ্গে কথা বলে তদন্ত গুটিয়ে দিল কলকাতা পুলিশ। অভিযুক্ত বা অভিযোগকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ তো দূরের কথা, সিসিটিভি ফুটেজও পরীক্ষা করা হল না— বলছেন লালবাজারেরই এক পুলিশকর্তা।

আরও পড়ুন: সোনিকার মৃত্যুর পিছনে বিক্রমের বেসামাল ও বেপরোয়া আচরণই দায়ী

লালবাজার সূত্রের খবর, ২৫ মে অফিস ছুটির পরে পুলিশ সুপারকে তাঁর হাওড়ার বাড়িতে নামিয়ে টালিগঞ্জ ফিরছিলেন ওই কনস্টেবল। চিড়িয়াখানার সামনে তাঁর গাড়ি দাঁড় করান এক পুলিশ অফিসার। চালকের অভিযোগ, গাড়ি দাঁড় করানো মাত্রই অকথ্য গালিগালাজ শুরু হয়। ওই অফিসারের নির্দেশে তাঁকে নামিয়ে মুখে ব্রেথ অ্যানালাইজার পুরে দেওয়ার চেষ্টা করেন অফিসারের এক অধস্তন। চালকের অভিযোগ, তিনি যে পুলিশে চাকরি করেন ও পুলিশের গাড়ি চালান, সে কথা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনও কথা শোনেনি ওই অফিসার। উল্টে ধমকের মাত্রা বেড়ে যায়। শেষে গাড়িতে পুলিশ লেখা স্টিকারই বাঁচিয়ে দেয় চালককে। ওই অফিসার ভবানীপুর ট্র্যাফিক গার্ডে কর্মরত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে ওই চালক পুলিশকর্মী হওয়ার সুবাদে অভিযোগ লালবাজার পর্যন্ত পৌঁছেছে। কিন্তু অভিযোগ, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ব্রেথ অ্যানালাইজার নিয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের একাংশের বাড়াবাড়িতে হয়রানি বাড়ছে সাধারণ মানুষের। হাওড়ার ডোমজুড়ের বাসিন্দা শৌভিক দলুই বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে বিদ্যাসাগর সেতুতে ওঠার মুখে ব্রেথ অ্যানালাইজার নিয়ে পরীক্ষা করছিল পুলিশ। এক জনের পরীক্ষার শেষে সেটি আমার মুখে ঢোকাতে গেলে প্রতিবাদ করি।’’ শৌভিকের বক্তব্য, এই পরীক্ষা হলে দুর্ঘটনা কমবে অবশ্যই। কিন্তু স্বাস্থ্যের দিকটি এড়ালে চলবে না। এ ক্ষেত্রেও ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মতো এক বার পরীক্ষার পরে সেটি বাতিল করা উচিত।

শৌভিকের কথা মানছেন পুলিশকর্তারাও। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের কাছে একাধিক ব্লো পাইপ দেওয়া থাকে। এক বার পরীক্ষার পরে সেটি ফেলে দেওয়ার কথা। এমনটা হওয়ার কথা নয়।’’ এই অভিযান শুরুর পরে অনেকেই পানশালা থেকে গাড়ি ডেকে বাড়ি ফিরছেন। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমেছে, মানছেন সার্জেন্টরা।

Harassment Traffic Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy