Advertisement
E-Paper

উন্নয়ন থেকে সরে মুসলিম সংরক্ষণ! ভোট ঘোষণার পরে ১১১টি সভায় কী কী পরিবর্তন মোদী-বচনে?

ভোটপ্রচারের প্রথম পর্যায়ে তাঁর সরকারের জমানায় উন্নয়ন ও আর্থিক অগ্রগতি ছাড়াও অন্য বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দিয়েছেন মোদী। কিন্তু এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই সেই সুর বদলে যেতে শুরু করে।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ২৩:৪৭
মুম্বইয়ে প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মুম্বইয়ে প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত ১৬ মার্চ নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা ইস্তক ১৫ মে পর্যন্ত ১১১টি প্রচার কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেই প্রচারসভাগুলিতে তাঁর বক্তৃতার বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ খুঁজে পেয়েছেন বিস্তর বৈপরীত্য!

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি, ১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ভোটপ্রচারের প্রথম পর্যায়ে তাঁর সরকারের জমানায় উন্নয়ন ও আর্থিক অগ্রগতি, ‘মোদী কি গ্যারান্টি’, ‘ভারত এখন বিশ্বগুরু’, ‘চারশো পার’, ‘রামমন্দির নির্মাণে’র মতো বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দিয়েছেন মোদী। কিন্তু এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই সেই সুর বদলে যেতে শুরু করে। পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘মুসলিম তোষণ’ এবং ‘ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি’র অভিযোগ।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি, এপ্রিলের গোড়ায় কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশের পর থেকেই ধীরে ধীরে বদল আসতে থাকে মোদীর বক্তৃতায়। বিরোধীদের অভিযোগ, গত ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটের পরে পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝেই মোদী-সহ বিজেপি নেতারা ক্রমশ মেরুকরণের তাস খেলছেন। গত ২১ এপ্রিল মোদী রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় বিজেপির সভায় বলেন, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অতীতে বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সর্বাগ্রে অধিকার মুসলিমদের। সেই কারণেই সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। যাতে দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়।’’

এর পরে ২২ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে। কাদের বিলিয়ে দেবে, তা আপনারা জানেন।’’ গত ৩০ এপ্রিল তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের প্রচারে মোদী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করলে কংগ্রেস তফসিলি জাতি ও জনজাতি এবং ওবিসিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়ে দেবে। তেলঙ্গানার জাহিরাবাদে তিনি বলেন, “যত দিন আমি বেঁচে আছি, দলিত জনজাতিদের সংরক্ষণকে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের হাতে তুলে দেব না, দেব না, দেব না! কংগ্রেস এবং তাদের যত সহযোগী রয়েছ, তারা কান খুলে এটা শুনে নাও।”

এর পর কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরলে তফসিলি জাতি-জনজাতির কোটা ছেঁটে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে, বাজেটের ১৫ শতাংশ মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ করবে বলেও দাবি করেন তিনি। এমনকি, জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল সংক্রান্ত বিতর্ক এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) প্রসঙ্গে বিরোধীদের খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তিনি। গত ১৬ মে উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা আজমগড়ে ভোটপ্রচারে গিয়ে বলেছেন, ‘‘দেশে এমন কোনও ‘মাই কা লাল’ (চলতি বাংলায় ভাবানুবাদে ‘বাপের বেটা’) জন্মেছে যে সিএএ বাতিল করতে পারে?’’

প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ১৬ মার্চ আদর্শ নির্বাচন বিধি চালু হওয়ার পর থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মোদী ১০টি জনসভা করেছেন। সেখানে তিনি তুলে ধরেছিলেন তাঁর সরকারের উন্নয়নমুখী চরিত্র। এরই পাশাপাশি দাবি করেছেন, কী ভাবে তাঁর আমলে ভারত গোটা বিশ্বের সমীহ আদায় করে ‘বিশ্বগুরু’র মর্যাদা পেয়েছে। কংগ্রেস ও বিরোধীদের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও অপশাসনের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এসেছে রামমন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গও।

কিন্তু সেই ছবি কিছুটা বদলে যায় ৬ এপ্রিল থেকে। কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশের পরে। রাজস্থানের অজমেরে মোদী অভিযোগ করেন, কংগ্রেসের ইস্তাহারে মুসলিম লিগের ছায়া স্পষ্ট! এর পর ২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোট ৩৪টি জনসভায় যোগ দেন। তার মধ্যে বেশ কয়েকটিতেই বলেন কংগ্রেসের ইস্তাহারে মুসলিম লিগের ছায়ার কথা। রামমন্দির উদ্বোধনে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেদের অনুপস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকে ‘হিন্দুবিরোধী’ বলার সূচনাও এই পর্বেই। ২১ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত মোদী ভাষণ দিয়েছেন ৬৭টি জনসভায়। এই পর্বে উন্নয়নের প্রসঙ্গ কিছুটা বাড়তি গুরুত্ব পেলেও সমানতালে মেরুকরণের প্রয়াসও চলছে বলে ওই প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

Lok Sabha Election 2024 Narendra Modi BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy