শাস্তি: যান নিয়ন্ত্রণ করছেন আইনভঙ্গকারীই। ছবি: শৌভিক দে
শুধু জরিমানা করাই যথেষ্ট নয়। যিনি নিয়ম ভাঙছেন, তাঁর আইন না-মানার মানসিকতাতেও আঘাত হানতে চাইছে পুলিশ।
ট্র্যাফিক আইন ভাঙার জেরে যাঁর লাইসেন্স তিন মাসের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে, তাঁকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে সেই মানসিকতায় পরিবর্তন আনার। আর সেটা দেওয়া হচ্ছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানশাসন করার মাধ্যমে।
বিধাননগর কমিশনারেট চালু করেছে এই নতুন নিয়ম। তাদের হিসেব বলছে, গত তিন মাসে প্রায় ১২৫ জন আইনভঙ্গকারী এ ভাবে রাস্তায় নেমে যান নিয়ন্ত্রণে অংশ নিয়েছেন। বিধাননগর পুলিশের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘নিয়ম ভাঙার জন্য ৪০০ টাকা জরিমানা করলে অনেকেই তা দিয়ে দেন। হয়তো গায়েও লাগে না। সেই চালকদেরই অনেকে পরে আবার নিয়ম ভাঙেন। স্টিয়ারিং-এ বসে ৭০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাতে হয়তো তাঁদের খুব মজা লাগে, কিন্তু রাস্তায় নেমে তাঁরাই যদি ওই গতির গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করতে যান, তখন বিপদের দিকটি বুঝতে পারেন।’’ পারছেনও।
বাগুইআটির বাসিন্দা, ২৪ বছরের তথ্যপ্রযুক্তি-কর্মী আরণ্যক ঘোষ সম্প্রতি বিমানবন্দরের কাছে গতি বাড়িয়ে ধরা পড়েন। পরে মাইকেলনগরের মোড়ে
৬ ঘণ্টা ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের ডিউটি করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন ডিউটি করার পরে সতর্ক হয়ে গিয়েছি। এখন অ্যাপ-ক্যাবে বা ট্যাক্সিতে উঠলেও চালককে সতর্ক করছি। সত্যিই তো, গাড়ি চালানোর সময়ে পায়ের চাপে গতি বেড়ে যায় ইচ্ছামতো। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে যখন দেখছিলাম, তখন রীতিমতো ভয় করছিল। বিরক্ত হচ্ছিলাম সেই বেশি গতির গাড়িচালকদের উপরে। তার মানে আমি যখন বেশি গতিতে গাড়ি চালাই, তখন ট্র্যাফিক অফিসারদেরও একই রকম লাগে।’’
নিলয় বসুও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করেন। মাস দুই আগে তিনিও ধরা পড়েছিলেন ট্র্যাফিক আইন ভাঙার অভিযোগে। তার পরে চারটে রবিবার যশোর রোডের চার মোড়ে ডিউটি করে তাঁর উপলব্ধি, ‘‘এটা দারুণ উদ্যোগ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে বুঝেছি, ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোটা কত জরুরি।’’
নিয়মভঙ্গকারীদের এই তালিকায় রয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। বিধাননগর কমিশনারেটের কোনও এক মোড়ে তাঁরাই পুলিশের জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে হাত তুলে দাঁড় করাচ্ছেন বেপরোয়া গতির গাড়ি বা হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের। যানশাসন করার পরে তাঁদের বেশির ভাগেরই উপলব্ধি, ‘‘ভুল করেছি। গাড়ির স্টিয়ারিং-এ বসে তো সহজেই নিয়ম ভাঙা যায়। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিয়ম ভাঙা গাড়ি সামলানো কতটা কঠিন, তা আগে বুঝতে পারিনি।’’
ইদানীং হাতে স্পিড গান নিয়ে প্রতিদিন বিধাননগরের কোথাও না কোথাও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সেই রাস্তায় পুলিশ যে সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়েছে, তা ছাড়ালেই স্পিড গান তা ধরে ফেলছে। লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করার পরে নোটিস পাঠিয়ে তলব করা হচ্ছে চালককে। অমিত জাভালগির কথায়, ‘‘যদি অতিরিক্ত গতির পিছনে চালক যুক্তিগ্রাহ্য কারণ দেখাতে পারেন, তা হলে ৪০০ টাকা জরিমানা করে তাঁর লাইসেন্স ফেরত দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় ৪০০ টাকা জরিমানা করে তিন মাসের জন্য বাতিল করা হচ্ছে লাইসেন্স।’’
যাঁদের লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে, তাঁদেরই ডেকে পাঠানো হচ্ছে যানশাসনের জন্য। বলা হচ্ছে, যদি আগে লাইসেন্স ফেরত পেতে চান, তা হলে এসে আট ঘণ্টা ডিউটি
করতে হবে। কেউ একটানা ছ’-সাত ঘণ্টা, কেউ তিন দিনে ভেঙে ভেঙে আট ঘণ্টা ডিউটি করছেন। তার পরে লাইসেন্স ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজের অফিস বা কাজকর্ম সামলে চালক কবে সেই ডিউটি করবেন, সেই দিন স্থির করার সুযোগও তাঁকে দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে অগস্ট— এই আট মাসে বাতিল করা হয়েছিল ২৪৪ জন গাড়িচালকের লাইসেন্স। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অগস্ট পর্যন্ত সেই সংখ্যাটা দশ গুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ২৬১৮। বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনে রয়েছে ন’টি ট্র্যাফিক গার্ড। প্রতিটি গার্ডের কাছেই রয়েছে একটি করে আধুনিক স্পিড গান। এ ছাড়াও সল্টলেক, নিউ টাউন এবং ভিআইপি রোডে গাড়ির গতি মাপার অনেকগুলি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। সেই সব এলাকায় বেঁধে দেওয়া গতিসীমা লঙ্ঘন করলে সরাসরি সেই গাড়ির ছবি (নম্বর প্লেট-সহ) চলে যাচ্ছে কন্ট্রোল রুমে। ঠিক যেমন কলকাতা পুলিশ এলাকায় রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy