Advertisement
১৬ মে ২০২৪

ভুয়ো নথি দিয়ে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি

ভুয়ো নথি দিয়ে বদলে ফেলা হয়েছিল ব্যাঙ্কে দেওয়া এক গ্রাহকের ফোন নম্বর। ঠিক একই ভাবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের নতুন চেক বই তুলে তাঁর সই জাল করে সেখান থেকে পাঁচ দফায় তুলে ফেলা হয়েছিল প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১৭
Share: Save:

ভুয়ো নথি দিয়ে বদলে ফেলা হয়েছিল ব্যাঙ্কে দেওয়া এক গ্রাহকের ফোন নম্বর। ঠিক একই ভাবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের নতুন চেক বই তুলে তাঁর সই জাল করে সেখান থেকে পাঁচ দফায় তুলে ফেলা হয়েছিল প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা। বাগুইআটির একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ওই টাকা তুলে তা দিয়ে বেঙ্গালুরুর দু’টি সোনা বিক্রেতা সংস্থার কাছ থেকে কেনা হয় দু’কেজি সোনা। এখানেই শেষ নয়, পুলিশের নজর থেকে বাঁচতে বেঙ্গালুরু থেকে ওই সোনা সড়কপথে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়।

গত ডিসেম্বরে তাঁর অ্যাকাউন্টের নতুন চেকবই ইস্যু করে ৫৪ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী রাজা সাহা। তদন্তে নেমে সোমবার দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম অভিষেক অগ্রবাল ওরফে সুমন দত্ত এবং আশিস জায়সবাল। এই চক্রের পাণ্ডা অভিষেক বড়তলা থানা এলাকার বাসিন্দা। এ ছাড়া বাগুইআটি এলাকার ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীরা ওই চক্রে জড়িত বলে অনুমান তদন্তকারীদের।

রাজার অভিযোগের পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, তাঁরই সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে প্রতারক ভুয়ো নথি দিয়ে টাকা তোলে। এর পরে ওই টাকা দু’দফায় গিয়েছে বেঙ্গালুরুর দুই স্বর্ণ বিক্রেতা সংস্থার অ্যাকাউন্টে। গোয়েন্দারা জানান, আদালতের নির্দেশে ওই দুই স্বর্ণ বিক্রেতা সংস্থার অ্যাকাউন্টের লেনদেন বন্ধ করার পরে দেখা যায়, ভুয়ো প্রতিনিধিই ওই দুই সংস্থা থেকে ২ কেজি সোনা কেনে। এর পরেই পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে একটি অ্যাপ নির্ভর ক্যাবে তা বেঙ্গালুরু থেকে সড়ক পথে কলকাতায় নিয়ে আসে। আর রাস্তা দিয়ে আসায় কোন জায়গার সিসিটিভিতে স্পষ্ট ভাবে কিছু ধরা পড়েনি।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, কোনও সূত্র না মেলায় হেয়ার স্ট্রিট থানার সাব ইনস্পেক্টর রাহুল বন্দোপাধ্যায় অভিযোগকারী সংস্থার সব কর্মীদের মোবাইলের তথ্য খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। তাতেই এক মহিলা কর্মীর নম্বরে নজর পড়ে তদন্তকারীদের।

দেখা যায়, ওই কর্মী প্রতি রাতে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেছেন এক ব্যক্তির সঙ্গে। কিন্তু নিয়মিত নম্বর বদল হয়েছে ওই ব্যক্তির। ওই ব্যাক্তির মোবাইলের টাওয়ার দেখে পুলিশ জানতে পারে বাগুইআটির ব্যাঙ্কে চেক জমা দেওয়া এবং বেঙ্গালুরুর স্বর্ণ বিক্রেতা সংস্থার অফিস থেকে সোনা সংগ্রহ করার দিন সে-ও ওই একই জায়গায় ছিল। এর পরেই অভিষেককে শনাক্ত করে তাকে ধরা হয়। ধরা হয় তার সঙ্গে আশিসকেও।

পুলিশ জানায়, অভিষেক অভিযোগকারীর পূর্ব পরিচিত। ওই ব্যবসায়ীর অফিসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ওই মহিলা কর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার। অভিযোগকারী মাস কয়েক আগে সই করা একটি চেক জমা করতে দেয় অভিষেককে।

ধৃতকে জেরা করে পুলিশজানতে পেরেছে, ওই মহিলার সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরে সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ সব বিষয়ে প্রথমে জেনে নেয় সে। এর পরে রাজার ভুয়ো নথি সংগ্রহ করে তা জমা দিয়ে তাঁর ফোন নম্বর বদলে দেয় ব্যাঙ্কের নথিতে। রাজার সই জাল করে তাঁর অ্যাকাউন্টের চেকবইও সংগ্রহ করে অভিষেক।

পুলিশের দাবি, এর পরেই সে সোনা কেনে এবং পুলিশ যাতে তার খোঁজ না পায় তাই আশিসকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় দু’হাজার কিমি রাস্তা পেরিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা আসে। সমস্ত নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bank forgery forgery arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE