Advertisement
E-Paper

চার খোপের বিশেষ ব্যাগ কেটে ফেলছে দুই ব্লাড ব্যাঙ্ক

রক্তের বিভিন্ন উপাদানের উৎপাদন ও সংগ্রহ বাড়াতে রাজ্যে চার প্রকোষ্ঠ-যুক্ত ‘কোয়াড্রোপল’ ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ করেছিল ‘জাতীয় এড্‌স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’ বা ন্যাকো। কাজ এড়াতে সেই ব্যাগের অর্ধেকটা বেমালুম কেটে ফেলে ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে কলকাতার একাধিক সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
কেটে ফেলা ব্যাগ। — নিজস্ব চিত্র

কেটে ফেলা ব্যাগ। — নিজস্ব চিত্র

রক্তের বিভিন্ন উপাদানের উৎপাদন ও সংগ্রহ বাড়াতে রাজ্যে চার প্রকোষ্ঠ-যুক্ত ‘কোয়াড্রোপল’ ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ করেছিল ‘জাতীয় এড্‌স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’ বা ন্যাকো। কাজ এড়াতে সেই ব্যাগের অর্ধেকটা বেমালুম কেটে ফেলে ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে কলকাতার একাধিক সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। ফলে এক দিকে যেমন ওই ব্যাগে হাওয়া ঢুকে সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, অন্য দিকে তেমনই মারাত্মক ভাবে কমে গিয়েছে প্লেটলেট এবং ক্রায়ো প্রেসিপিটেট-এর মতো রক্তের জরুরি উপাদানের উৎপাদন। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে পূর্বাঞ্চলের মডেল ব্লাড ব্যাঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত হওয়া মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক।

কোয়াড্রোপল ব্যাগে চারটি খোপ বা প্রকোষ্ঠ থাকে। তার একটিতে প্লাজমা, একটিতে লোহিত রক্তকণিকা, একটিতে প্লেটলেট এবং একটিতে লোহিত কণিকা বেশি দিন সংরক্ষণ করার বিশেষ একটি তরল রাখার ব্যবস্থা থাকে। অভিযুক্ত দুই ব্লাড ব্যাঙ্কে সরবরাহ করা কোয়াড্রোপল ব্যাগগুলির প্লেটলেট সংরক্ষণের প্রকোষ্ঠ এবং লোহিত রক্তকণিকা বেশি দিন সংরক্ষণে ব্যবহৃত তরল রাখার প্রকোষ্ঠ দু’টি কেটে বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। লোহিত রক্তকণিকার সঙ্গে ওই তরল মেশানোর পরে খালি হয়ে যাওয়া প্রকোষ্ঠে ক্রায়ো প্রেসিপিটেট তৈরি করে রাখার কথা। এটি হিমোফিলিয়া রোগীদের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু সেটাও করা হচ্ছে না।

এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানদের একাংশ দাবি করছেন— প্রথমত, প্লেটলেটের এখন চাহিদা নেই এবং দ্বিতীয়ত, বিশেষ তরল মেশানো লোহিত কণিকা শিশু, বৃদ্ধ ও কিডনির রোগীদের দেওয়া যায় না। কিন্তু এই ঘটনা জানাজানি হতে ক্ষুব্ধ রাজ্য এড্‌স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (স্যাক্স) কর্তারা জানান, স্রেফ কাজে ফাঁকি মারার তাগিদেই এক শ্রেণির চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান ব্যাগ কাটায় ইন্ধন জোগাচ্ছেন। এতে এক দিকে যেমন রক্তের অত্যন্ত জরুরি উপাদান প্লেটলেট তৈরি ধাক্কা খাচ্ছে, তেমনই ৪২ দিনের বদলে লোহিত রক্তকণিকা মাত্র ৩৫ দিন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। তাঁদের কথায়, ‘‘শিশু-বৃদ্ধদের জন্য তো ডবল-ট্রিপল ব্লাড ব্যাগ রয়েছে। তা হলে কোয়াড্রোপল ব্যাগ কাটতে হবে কেন?’’

মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, শুধু জুন মাসেই তাদের ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রায় ১৭০০ কোয়াড্রোপল ব্লাড ব্যাগকে কেটে ডবল ব্যাগে পরিণত করে তাতে রক্ত সংরক্ষিত হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সেখানকার অধিকর্তা কুমারেশ হালদার।

ক্যানসার, ডেঙ্গি, কিছু রক্তের অসুখ ও কিছু যকৃতের রোগে প্রচুর প্লেটলেট লাগে। বর্ষার শুরুতেই শহরে ব্যাপক হারে ডেঙ্গি শুরু হয়েছে। বেড়েছে প্লেটলেটের চাহিদাও। স্যাক্স সূত্রের খবর, মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রতিদিন অন্তত ২৫০ প্লেটলেট লাগে, কিন্তু তৈরি হচ্ছে মেরেকেটে ১০০। গত ১৪ জুলাই ওই ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেট তৈরিই হয়নি। ১৫ জুলাই হয়েছে ৮০ ইউনিট। ওই দিন প্রায় ২০০ ইউনিট প্লেটলেটের রিক্যুইজিশন এসেছিল। কিন্তু ৮০ ইউনিটের বেশি মেলেনি।

আর জি করের ব্লাড ব্যাঙ্কেও একই ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন সেখানকার চিকিৎসকেরা। এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘প্লেটলেটের এখন একেবারেই চাহিদা নেই। আমরা স্বাস্থ্য ভবনকে কোয়াড্রোপল ব্যাগ ফিরিয়ে নিয়ে ডবল ব্যাগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। ওরা কান দেয়নি। অগত্যা আমরা কোয়াড্রোপল ব্যাগ কেটে ফেলছি।’’ এ দিকে স্যাক্সের হিসেব,আর জি করে ১৪ জুলাই মাত্র ৬০ ইউনিট প্লেটলেট ছিল, ১৫ জুলাই ছিল ১৩ ইউনিট। অনেকেই প্লেটলেট না পেয়ে ফিরে গিয়েছেন।

রক্ত আন্দোলনের অন্যতম কর্মী দীপঙ্কর মিত্র জানিয়েছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছেন। আর ন্যাকো-র অধীন স্বেচ্ছা রক্তদান সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির অন্যতম সদস্য অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘এ ভাবে ব্যাগ কাটা ন্যাকো-র টেকনিক্যাল কমিটির নির্দেশের সম্পূর্ণ বিরোধী। এতে সংক্রমণের ব্যাপক আশঙ্কা থাকে। ন্যাকো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।’’

blood bank blood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy