Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ট্যাংরায় গ্রেফতার যুযুধান দুই নেতা

চৌকিতে শুয়ে গল্প করছিলেন দুই ব্যক্তি। পাশে রাখা রিভলভার। দরজা ঠেলে ঢুকলেন পাঁচ যুবক। তাঁরা পুলিশ তা বুঝেই এক প্রভাবশালী নেতাকে ফোন করলেন শুয়ে থাকা এক জন। কথা শেষ হওয়ার আগেই ওই দু’জনকে প্রায় ঘাড় ধরে বাইরে বার করলেন ওই যুবকেরা। গাড়িতে তুলে রওনা দিলেন স্থানীয় থানার উদ্দেশে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৫ ০০:১২
Share: Save:

চৌকিতে শুয়ে গল্প করছিলেন দুই ব্যক্তি। পাশে রাখা রিভলভার। দরজা ঠেলে ঢুকলেন পাঁচ যুবক। তাঁরা পুলিশ তা বুঝেই এক প্রভাবশালী নেতাকে ফোন করলেন শুয়ে থাকা এক জন। কথা শেষ হওয়ার আগেই ওই দু’জনকে প্রায় ঘাড় ধরে বাইরে বার করলেন ওই যুবকেরা। গাড়িতে তুলে রওনা দিলেন স্থানীয় থানার উদ্দেশে।

লালবাজার সূত্রে খবর, এ হেন কায়দায় বৃহস্পতিবার রাতে ধাপা এলাকার দুর্গাপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ট্যাংরা এলাকার তৃণমূল নেতা অলোক খাটুয়া এবং তাঁর শাগরেদ প্রবীর সরকার ওরফে বাপিকে। তাঁদের কাছে মিলেছে একটি গুলিভরা দেশি ছ’ঘরা রিভলভার ও আরও দু’টি কার্তুজ। তার কিছু ঘণ্টা পরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা প্রদীপ গুহকেও ট্যাংরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ দিন অলোক ও বাপিকে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে সরকারি আইনজীবী তপন সাহা আবেদন করেন, ধৃতদের কাছে আরও অস্ত্র মিলতে পারে, তাই তাঁদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ হোক। বিচারক তাদের ২৪ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজত দেন। আজ, শনিবার প্রদীপকে আদালতে হাজির করানো হবে।

পুলিশের দাবি, অলোক ও বাপি গত মঙ্গলবার ট্যাংরার গুলি ও বোমাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত। পরে সেই মামলাতেও তাঁদের গ্রেফতার করা হবে। ধৃত অলোক কলকাতার এক তৃণমূল বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। স্থানীয়েরাই জানিয়েছেন, খুনের মামলাতে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাও-এর দেহরক্ষী ছিলেন বাপি। শম্ভুনাথ গ্রেফতার হওয়ার পরেই ওই বিধায়কের ঘনিষ্ঠ হন বাপি।
প্রদীপ কলকাতার এক তৃণমূল সাংসদের ঘনিষ্ঠ।

পুলিশের নিচুতলার একাংশ জানিয়েছেন, ট্যাংরার গোলমালের পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেট-দ্বন্দ্ব, শাসক দলের স্থানীয় ওই দুই নেতার মদতেই যা চলে। সেই নেতাদের পিছনে রয়েছেন সাংসদ-বিধায়কের মতো প্রভাবশালীরাও। শুধু বিরোধী পক্ষ নয়, থানার অফিসারদের উপরেও আক্রোশ ছিল ওই দুই নেতার। ধৃতেরা পুলিশের উপরে আক্রমণের কথা অস্বীকার করলেও গোলমালের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। ওই ঘটনায় পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছিল। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের ওই দুই গোষ্ঠীর একাধিক নেতা। তাঁরা অবশ্য পুলিশের উপরে হামলার কথা মেনে নিয়েছিলেন। ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, গত কয়েক মাস ধরে ট্যাংরা থানা এলাকায় সিন্ডিকেট-সহ বিভিন্ন বেআইনি কাজে রাশ টানার চেষ্টা করছিলেন ওই থানার অফিসারেরা। তাই হামলার ফাঁকে পুলিশকে ‘নিশানা’ করা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, সে দিন দু’দল দুষ্কৃতীর মাঝে পড়ে ট্যাংরা থানার হাতেগোনা কয়েক জন অফিসার প্রথমে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি।

লালবাজার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলেই গোয়েন্দারা খবর পান ধাপা এলাকায় একটি বাড়িতে রয়েছেন ট্যাংরা কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত অলোক খাটুয়া। সেই মতো লালবাজার থেকে ১২ জনের একটি গোয়েন্দা দল প্রগতি ময়দান থানা এলাকার ধাপা দুর্গাপুরের ভেড়ি এলাকায় পৌঁছন। সেখানে একটি বাড়িতে সকাল থেকে লুকিয়ে ছিলেন দুই অভিযুক্ত। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, এলাকাটি পুরো ভেড়ি।
পাশেই বস্তি। বস্তির পাশের বাড়িটির বাইরে থেকে দু’জনের কথা শুনেই গোয়েন্দারা বুঝে যান তাঁরা ঠিক জায়গাতে এসেছেন।

লালবাজার সূত্রের খবর, অলোক খাটুয়া গ্রেফতার হওয়ায় শাসক দলের একাংশের পক্ষ থেকেই বলা হয় প্রদীপকে গ্রেফতার করার জন্য। না হলে ওই এলাকার ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তাঁরা দাবি করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tangra police lalbazar trinamool clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE