Advertisement
E-Paper

খুনে যুক্ত কি কিশোরীরাই, সন্দেহ

নীলমণি মিত্র স্ট্রিটে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মহিলা খুনে দুই নাবালিকা জড়িত বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। তাদের অনুমান, কেয়ারটেকার কবিতা রায়ের মাথা নোড়া দিয়ে থেঁতলে, গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে খুন করে ফেরার হয়ে গিয়েছে ওই দুই কিশোরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩

নীলমণি মিত্র স্ট্রিটে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মহিলা খুনে দুই নাবালিকা জড়িত বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। তাদের অনুমান, কেয়ারটেকার কবিতা রায়ের মাথা নোড়া দিয়ে থেঁতলে, গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে খুন করে ফেরার হয়ে গিয়েছে ওই দুই কিশোরী। অথচ, হাড়কাটা গলির যৌনপল্লি থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের উদ্ধার করে এনে বাড়ি ফিরিয়ে দেবে বলে কবিতার হেফাজতেই রেখেছিল।

সোমবার রাতে ওই কিশোরীদের উদ্ধার করা হয়। আর, বুধবার সকালেই মেলে কবিতার দেহ। পুলিশের অনুমান, মঙ্গলবার রাতেই তাঁকে খুন করে পালিয়ে যায় কিশোরীরা। এই খুনে আর কেউ সাহায্য করেছিল কি না, সে বিষয়ে অবশ্য পুলিশ নিশ্চিত নয়। দুই নাবালিকা এখনও নিখোঁজ। পুলিশ জানিয়েছে, কবিতাদেবীর ফোনটি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছে দুই কিশোরী। বুধবার সারা দিনই তা বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে ফোনটি খোলা হলে টাওয়ার লোকেশনে জানা যায়, সেটি উত্তরবঙ্গে রয়েছে। পুলিশের একটি দল সেখানে রওনা দিয়েছে।

এ দিন ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে নোড়া দিয়ে মাথার পিছন দিকে আঘাত করার জেরে মৃত্যু হয় কবিতাদেবীর। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় গামছার ফাঁসও লাগানো হয়। ঘটনাস্থলে তিন জনের জন্য রান্না করা খাবার, ডিম, ভাত, মাছ ছড়িয়েছিটিয়ে পড়েছিল। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, দুই কিশোরী এবং নিজের জন্য রান্নাও করেছিলেন কবিতাদেবী।

পুলিশের এক সূত্র জানায়, কবিতাদেবীর বুকের হাড় ভেঙেছিল। তা দেখেই অনুমান, খুনের সময়ে এক বা একাধিক আততায়ীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তাঁর। সারা শরীরে আঁচড়ের দাগেও প্রতিরোধের ছাপ স্পষ্ট। তদন্তকারীদের অনুমান, দুই কিশোরী হয়তো এক বা একাধিক ব্যক্তির সাহায্য নিয়েছিল।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি জানিয়েছে, বছর পনেরোর ওই দুই কিশোরীকে উদ্ধারের পরে জানা যায়, তারা বনগাঁর গোপালগঞ্জ থেকে এসেছে। রাতেই তাদের আনা হয় সংগঠনের দফতরে। ভাইফোঁটা উপলক্ষে মঙ্গলবার দফতর বন্ধ থাকায় দুই কিশোরীর সঙ্গে একাই ছিলেন কবিতাদেবী। ওই দুই কিশোরী কারও প্ররোচনায় বনগাঁ থেকে কলকাতা এসেছিল কি না, তা নিয়ে খোঁজ চলছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পরিচয় হওয়া এক কাশ্মীরি যুবকের সূত্র মিলেছিল বুধবার। তবে তাঁর সঙ্গে এই খুনের সরাসরি যোগ নেই বলেই মনে করছে পুলিশ।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দফতরের আনাচ-কানাচে অবশ্য এখনও জমাট বাঁধা আতঙ্ক। বুধবার রাতে ঘুমোতে পারেননি কর্মীরা। প্রিয় কবিতাদি নেই, এখনও যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না তাঁদের। বীভৎস ভাবে থেঁতলে যাওয়া দেহটার কথা মনে পড়লেই আতঙ্কে চোখ বুজে ফেলছেন তাঁরা। সংগঠনের সচিব কাজল বসু জানান, কবিতাদেবীর মেয়েকে খবর দেওয়া হয়েছে। গয়ার বাড়ি থেকে আজ, শুক্রবার দুপুরে কলকাতা এসে পৌঁছনোর কথা তাঁর।

কবিতাদেবীর বোনের ছেলে সঞ্জয় দে জানান, আত্মীয়স্বজনদের নিয়মিত দেখভাল করতেন তাঁর মাসি। তাঁদের পরিবারকেও আর্থিক ভাবে সাহায্যও করতেন। সঞ্জয় বলেন, ‘‘কালীপুজোর দিনও আমাদের বাড়ি এসেছিলেন মাসি। আমাদের সব ভাইদের নিজের ছেলের মতো ভালবাসতেন।’’ সংগঠন সূত্রের খবর, গয়ায় মেয়ের বাড়ি হচ্ছে বলে বেশ কিছু দিন ধরে টাকা জমাচ্ছিলেন কবিতাদেবী। সামনের সপ্তাহেই মেয়ের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সে জন্য দিন দশেকের ছুটির আবেদনও করেছিলেন।

সংগঠনের কর্মীদের আশঙ্কা— সাধারণত যে ধরনের কাজ তাঁরা করেন, তার কারণে চারপাশে তাঁদের প্রচুর শত্রু রয়েছে। কবিতাদেবীকে খুন করে সেই শত্রুদের কেউ তাঁদের কোনও বার্তা দিতে চাইছেন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তাই দফতরের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা। তবে সংগঠনের নিরাপত্তায় যে খামতি ছিল, সে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এত বড় সংগঠনের দফতরে প্রায়শই নাবালিকাদের উদ্ধার করে এনে রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে রাতভর নিরাপত্তারক্ষী থাকবেন না কেন, কেনই বা কোনও সিসিটিভি নেই— গোটা দফতরে এ দিন সে প্রশ্নও উঠেছে।

সংগঠন সূত্রের খবর, মাস দুয়েক আগে সিসিটিভি থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লেগে গিয়েছিল দফতরে। তার পর থেকেই বন্ধ সিসিটিভি। তা থাকলে খুনের কিনারা সহজ হতো বলে মনে করছে সংগঠনও।

Minor murder Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy