Advertisement
E-Paper

ভাগ্যিস দেখলেন মন্ত্রী, ঠাঁই জুটল পড়ে থাকা রোগীর

মাঝরাত থেকে এসএসকেএম চত্বরে পড়ে ছিলেন হাওড়ার আমতার তুষারকান্তি ঘোষ। জটিল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত। সোমবার সারা রাত হত্যে দিয়ে থেকেও শয্যা জোটেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে হাসপাতাল আরও ব্যস্ত। কারণ, খোদ মুখ্যমন্ত্রী সফরে আসছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০২:৫০
পিজিতে রাস্তায় শোয়ানো সেই রোগী। পাশে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। — নিজস্ব চিত্র।

পিজিতে রাস্তায় শোয়ানো সেই রোগী। পাশে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। — নিজস্ব চিত্র।

মাঝরাত থেকে এসএসকেএম চত্বরে পড়ে ছিলেন হাওড়ার আমতার তুষারকান্তি ঘোষ। জটিল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত। সোমবার সারা রাত হত্যে দিয়ে থেকেও শয্যা জোটেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে হাসপাতাল আরও ব্যস্ত। কারণ, খোদ মুখ্যমন্ত্রী সফরে আসছেন। তাই যত বার তুষারবাবুর পরিবারের লোকেরা ইমার্জেন্সিতে গিয়েছেন, তত বারই শুনতে হয়েছে, ‘আধ ঘণ্টা অন্তর খোঁজ নিন। মুখ্যমন্ত্রী ঘুরে যাওয়ার আগে কিছু করা যাবে না।’

শেষমেশ দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী যখন হাসপাতালের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছেন, তখন ক্ষোভে ফেটে পড়েন তুষারবাবুর পরিজনেরা। বৃদ্ধের ছেলে সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘যত বার ইমার্জেন্সিতে যাচ্ছি, আমাদের বলা হচ্ছে আধ ঘণ্টা পরে খোঁজ করুন। মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে কিছু করা যাবে না। কেন এক জন রোগীর এমন হয়রানি হবে?’’

চেঁচামেচিতে আশপাশে ভিড় জমে যায়। ওই সময়েই সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়। সব শুনে মন্ত্রী এক হাসপাতাল কর্মীকে ট্রলি আনতে বলেন। কিন্তু মিনিট কয়েক পরে সেই কর্মী ফিরে এসে জানান— ট্রলি নেই, পাঁজাকোলা করে নিতে হবে। অপ্রস্তুত মন্ত্রী তখন নিজের গাড়ি ডাকিয়ে আনেন। তাঁর গাড়িতে তুলেই ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হয় তুষারবাবুকে। তখন দুপুর সওয়া একটা। হাসপাতালে ঢোকার ১২ ঘণ্টা পরে শয্যা পেলেন বৃদ্ধ, তা-ও মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। মন্ত্রীর নির্দেশ ছিল বলেই সাধারণ শয্যা নয়, তাঁর বরাতে জুটল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের শয্যা।

এ দিকে, তুষারবাবুর পরিবার যখন তাঁকে নিয়ে অশেষ ভোগান্তি পোয়াচ্ছেন, তখনই হাসপাতালের অন্য এক প্রান্তে সভা করে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা— হাসপাতালকে মানবিক হতে হবে। এই কি হাসপাতালের মানবিক চেহারা? প্রশ্ন তুলেছেন, তুষারবাবুর মতো আরও বেশ কিছু রোগীর পরিজনেরা।

কী বলছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম? তাঁর জবাব, ‘‘কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছিল। সাধারণ ভাবে এমন হওয়ার কথা নয়। আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কেন ভর্তি নেওয়া হয়নি, খোঁজ নেব।’’

এ দিন এসএসকেএমে একইসঙ্গে দু’টি বিভাগের মোট তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা ছিল মমতার। কিন্তু তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, হাসপাতালে বড় অনুষ্ঠান হলে রোগীদের অসুবিধা হয়, তাই তিনি হাসপাতালে খুব বেশি আসতে চান না। কিন্তু তাঁর এই ‘সংক্ষিপ্ত’ সফরেও কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য রীতিমতো ওলোটপালোট হয়ে যায় সুপার স্পেশ্যালিটি ওই হাসপাতালের পরিষেবা।

বেলা ১২টা নাগাদ হাসপাতালে ঢোকেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম অনুষ্ঠানটি ছিল কার্ডিওলজি ভবনের পাশে। ফলে সেখানে রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত হয় বহুক্ষণ আগে থেকেই। সে নিয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন অনেকেই। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী হেঁটে উডবার্ন ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি-র দিকে এগিয়ে যান। মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে যাওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই উডবার্নের অদূরে পড়ে থাকা তুষারবাবুর পরিবার ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

এ দিন সেখানে পেডিয়াট্রিক ক্যাথ ল্যাব, ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি-র নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন এবং স্লিপ ল্যাবের উদ্বোধন করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লির এইমস ছাড়া আর কোনও সরকারি পরিকাঠামোয় পেডিয়াট্রিক ক্যাথ ল্যাব নেই। শিশুসাথী প্রকল্পে নবজাতক থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের হার্টের অস্ত্রোপচার নিখরচায় করা যাচ্ছে। ক্যাথ ল্যাব চালুর ফলে হার্টের আরও কিছু সমস্যা মেটানো সম্ভব।’’

এ দিনের অনুষ্ঠানে চিকিৎসক, নার্স-সহ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সমস্ত কর্মীদেরই কাজে মনোযোগী হওয়ার উপরে জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ওয়ার্ডবয়দের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘অনিয়ম করবেন না। আমরা সব নজরে রাখছি। ভাল ভাবে কাজ করুন। মনে রাখবেন, গ্রামগঞ্জ থেকে বহু মানুষ সরকারি হাসপাতালে আসেন। তাঁদের যেন হয়রান হতে না হয়।’’

pg sskm complicated patient sskm patient firhad hakim neurological patient amta patient tusarkanti ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy