Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ

অগ্নিকাণ্ডেও হুঁশ ফেরেনি কর্তাদের

ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে চার দিন। পুড়ে গিয়েছে সংগ্রহশালায় রাখা প্রাণীর দেহাবশেষ। কিন্তু বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগই দায়ের করেনি কেউ! কী ভাবে আগুন লেগেছিল তা নিয়েও সদুত্তর নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দমকল-পুলিশ, একে অন্যের উপরে দায় চাপাচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০২:১৮
Share: Save:

ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে চার দিন। পুড়ে গিয়েছে সংগ্রহশালায় রাখা প্রাণীর দেহাবশেষ। কিন্তু বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগই দায়ের করেনি কেউ! কী ভাবে আগুন লেগেছিল তা নিয়েও সদুত্তর নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দমকল-পুলিশ, একে অন্যের উপরে দায় চাপাচ্ছেন।

সোমবার পুড়ে যায় বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একটি বড় অংশ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্ট্রাল ইনস্ট্রুমেন্ট রুমও। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে দাবি, ওই ঘরে কনফোকাল মাইক্রোস্কোপ, স্পেকটোমিটার, জেলডকের মতো বহু মূল্যবান যন্ত্র ছিল। সেগুলির কী অবস্থা, জানেন না শিক্ষক-গবেষকেরা। প্রাণিবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান পার্থিব বসু শুক্রবার বলেন, ‘‘আগুন কী ভাবে লেগেছিল, কী ভাবে ছড়িয়েছিল, দমকল কিছুই জানায়নি। ফরেন্সিক দলও যোগাযোগ করেনি।’’

পুলিশ জানায়, নিয়ম অনুযায়ী কোনও অগ্নিকাণ্ডে কর্তৃপক্ষ বা দমকলের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করার কথা। তার ভিত্তিতে ফরেন্সিক দলকে পরিদর্শন করতে আর্জি জানানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অভিযোগ দায়ের হয়নি। প্রাথমিক ভাবে দমকল জানায়, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল। সে তরফেও দায়ের হয়নি অভিযোগ। ফলে ফরেন্সিক দল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুনের উৎস খুঁজতে যায়নি। যদিও দমকলের ডিজি সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আগুনের কারণ জানানোর কথা ফরেন্সিক দলের। আমরা বড়জোর অনুমান করতে পারি, কিন্তু সেটা জানানোর নিয়ম নেই।’’

বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ করল না কেন? পার্থিববাবু জানান, প্রাথমিক ভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে পঠনপাঠন শুরুর বিষয়ে জোর দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। আজ, শনিবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার পরে দমকলকে বিস্তারিত জানানো হবে।

অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অন্দরে পরিকাঠামোর বেহাল দশা নিয়েও অভিযোগ উঠছে। পড়ুয়া-শিক্ষক-গবেষকদের অনেকেই বলছেন, যথাযথ অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ওই ক্যাম্পাসে নেই। প্রশাসনিক ও পরিকাঠামোগত ত্রুটির কথা মেনে নিয়ে বিভাগের অধ্যাপিকা এনা রায় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাসায়নিক নিয়ে কাজ করতে হয়। তাই আগুন লাগার আশঙ্কা থাকে। ঘটনার দিন মূল ফায়ার অ্যালার্ম কাজ করেনি, স্প্রিঙ্কলারও নেই। স্মোক ডিটেক্টর কাজ করলেও আগুন তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনা যেত।’’ পরিকাঠামোগত ত্রুটির অভিযোগ এড়াতে পারছেন না বিভাগীয় প্রধানও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আগুনের কথা যে সব সময়ে মাথায় থাকে তা নয়। তবে আমাদের অবশ্যই আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’’

এ দিন ওই কলেজে গিয়ে দেখা গেল, বিভাগের একাংশে বৈদ্যুতিক সংযোগ ঠিক করার কাজ চলছে। মেরামতির কাজ চলছে পুড়ে যাওয়া গবেষণাগারেও। পার্থিববাবু জানান, ধীরে ধীরে অবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাশে রয়েছেন। ২৮ মার্চ থেকে নিয়মিত পঠনপাঠন শুরু হবে বলে জানান তিনি। তবে গবেষণাগারের কাজ আপাতত বন্ধই থাকছে। ওই দিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল অডিটরকে ডেকে যাবতীয় ক্ষতির হিসেব-নিকেশও করা হবে। অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা বসানো নিয়েও সে দিন আলোচনা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

university fire unconscious
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE