কলেজের বাইরে শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী।
বেসরকারি সংস্থার এক নিরাপত্তা কর্মীকে সরানো নিয়ে বাদানুবাদ। তার জেরে পড়ুয়াদের হাতে অধ্যক্ষ ঘেরাও। পুলিশ ডেকে ঘেরাওমুক্তি। পুলিশের কাছে ছাত্রদের নামে এফআইআর এবং পাল্টা প্রতিবাদে রাতভর শিক্ষকদের অবস্থান-ধর্না।
এখানেই শেষ নয়। মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধের নোটিসও ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। বুধবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে কলেজ খুলল ঠিকই। কিন্তু শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্যের জেরে মাঝে মাঝেই খবরে উঠে আসা কলেজটিতে এ বারের ঘটনা যে নজিরবিহীন চেহারা নিল, তাতে মুখ পুড়েছে সব পক্ষেরই। শিক্ষামন্ত্রী বুধবার বলেন, ‘‘এ ভাবে চলতে পারে না! ছাত্র, শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী, তিন পক্ষকে নিয়েই আমি বৈঠক ডাকব।’’ রাতে এক অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও বলেন, ‘‘ঘটনাটি উদ্বেগজনক। শিক্ষকদের গায়ে হাত দেওয়া উচিত হয়নি।’’
ঘটনার শুরু মঙ্গলবার দুপুরে। নিরাপত্তা কর্মীকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে টিএমসিপি নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংসদ। অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা কয়েক জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীকে নিগ্রহ করে। তবে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অর্ণব বিশ্বাসের দাবি, তাঁদের কথা কর্তৃপক্ষ শুনতে চাননি। তাই তাঁরা অবস্থানে বসেন। নিগ্রহের অভিযোগ ঠিক নয়।
আরও পড়ুন: রাতপথে অ্যাপ-ক্যাবে চড়ে ডাকাতের হানা
রাতে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা পুলিশ পাহারায় বেরিয়ে এসে ঘেরাওকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। এর পর কলেজের সামনে অবস্থানে বসে পড়েন। গভীর রাতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কলেজ বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘শিক্ষকদের যদি নিরাপত্তাহীনতার এত অভিযোগ থাকে, তা হলে তাঁরা শিক্ষা দফতরকে জানাচ্ছেন না কেন? সরকার যখন ঘেরাও-অবস্থান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করতে চাইছে, তখন শিক্ষকরা এই ভূমিকা নিলে কী বলা যায়?’’ কাউকে কিছু না জানিয়েই কর্তৃপক্ষ কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মন্ত্রীর দাবি।
কিন্তু কলেজ সূত্রের খবর, ঘেরাও চলাকালীন শিক্ষামন্ত্রীকে ফোন করা হলে ফোন বেজে যায়। কলেজের শিক্ষক সংসদের সম্পাদক বিমলশঙ্কর নন্দ শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘শিক্ষকের গায়ে হাত দেওয়াও দেখলাম। হয়তো আমরাই পড়ুয়াদের কিছু শেখাতে পারিনি। এই হতাশায় অবস্থানে বসে গিয়েছিলাম।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, শাসক দল-সরকার কেউই তাঁদের মঙ্গলবার রাতে সাহায্য করেনি।
শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে বুধবার বিকেলের দিকে কলেজ খোলে। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘যারা গন্ডগোল করেছে, তাদের নাম দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এখনও পর্যন্ত যে দু’জনের নাম পাওয়া গিয়েছে, তারা বহিরাগত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy