Advertisement
E-Paper

সরকারের মতে চলতেই বেশি আগ্রহী নতুন উপাচার্য

এক উপাচার্য তাঁর কার্যকালের আড়াই বছর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটতে দেননি। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিলে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন শাসক দলের হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। অন্য এক উপাচার্য দায়িত্ব নিয়েছেন চার মাস আগে। এর মধ্যেই শিক্ষক-পড়ুয়া-প্রাক্তনীদের অনেকের চোখে ধরা পড়ছে বদলে যাওয়া চিত্রটা। তাঁদের অভিযোগ, বিকাশ ভবন এবং তৃণমূল ভবনের চাপ বেড়েছে প্রেসিডেন্সির উপরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০০

এক উপাচার্য তাঁর কার্যকালের আড়াই বছর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটতে দেননি। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিলে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন শাসক দলের হামলাকারীদের বিরুদ্ধে।

অন্য এক উপাচার্য দায়িত্ব নিয়েছেন চার মাস আগে। এর মধ্যেই শিক্ষক-পড়ুয়া-প্রাক্তনীদের অনেকের চোখে ধরা পড়ছে বদলে যাওয়া চিত্রটা। তাঁদের অভিযোগ, বিকাশ ভবন এবং তৃণমূল ভবনের চাপ বেড়েছে প্রেসিডেন্সির উপরে। তাই আগের উপাচার্যের সঙ্গী যে দু’জন প্রশাসনিক কর্তা শাসক দলের হামলার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, তাঁদের এক জনকে বদলি হতে হয়েছে। অন্য এক জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন অনুপস্থিত।

শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনীদের একাংশের অভিযোগ, নতুন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যুগলবন্দিতেই এখন চলছে প্রেসিডেন্সি। প্রাক্তনীদের অনেকেরই মনে হয়েছে, পূর্বতন উপাচার্য মালবিকা সরকারকে আরও কিছুকাল দায়িত্বে রাখলে প্রেসিডেন্সির এই অবস্থাটা দেখতে হতো না।

প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমানে দিল্লির কাছে অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইতিহাসবিদ রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এখনকার উপাচার্য কেমন কাজ করছেন বলতে পারব না। তবে আগের উপাচার্যের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানে বাইরের রাজনীতির অনুপ্রবেশ রুখতে বলিষ্ঠ ভাবে প্রতিবাদ জানান। এ জন্য ওঁর অভিনন্দন প্রাপ্য।”

কিন্তু নতুন উপাচার্যকে নিয়ে ক্ষোভ কেন?

অভিযোগ

• বিশ্ববিদ্যালয়-প্রশাসন সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই নতুন উপাচার্যের। যার জেরে রেজিস্ট্রারকে রাতারাতি সরিয়ে দেওয়া থেকে ডিন অব স্টুডেন্টস-এর কাছে আর্থিক গরমিলের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া, সব ক্ষেত্রেই নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠছে।

• উপাচার্যের ব্যবহার বেশ খারাপ।

• বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বশাসিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজকর্মের অধিকাংশই তিনি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে করেন বলে অভিযোগ।

বর্তমান উপাচার্য অনুরাধাদেবী অবশ্য অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছেন। আর, মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন মালবিকাদেবী। অনুরাধাদেবী প্রেসিডেন্সির প্রথম স্থায়ী উপাচার্য। অনুরাধাদেবী আগে বিভিন্ন গবেষণাকেন্দ্রে কাজ করেছেন। মে মাসের গোড়ায় তিনি প্রেসিডেন্সিতে এসেছেন বসু বিজ্ঞান মন্দির থেকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম সম্বন্ধে তাঁর স্বচ্ছ ধারণা নেই বলে অভিযোগ।

গত ৬ অগস্ট প্রেসিডেন্সির তৎকালীন রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্তকে রাতারাতি সরকারি কলেজে বদলি করে দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা গভর্নিং বোর্ড (জিবি)-এর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই স্থায়ী রেজিস্ট্রারকে কী ভাবে উপাচার্য বদলি করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। অনেকের বক্তব্য, জিবি-র চেয়ারম্যান আচার্য-রাজ্যপাল স্বয়ং। জিবি-কে এড়িয়ে গিয়ে উপাচার্য এক দিক থেকে আচার্যকেই আমল দিলেন না।

অনুরাধাদেবীর বক্তব্য, প্রবীরবাবু সরকারি চাকরি থেকে ‘লিয়েন’ নিয়ে রেজিস্ট্রার পদে যোগ দিয়েছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে স্থায়ী করে নেয়। কিন্তু সরকার এখনও তাঁকে ‘রিলিজ’ করেনি। তাই সরকারের কাছ থেকে প্রবীরবাবুর বদলির নির্দেশ এলে তিনি তা মানতে বাধ্য। অনুরাধাদেবীর কথায়, “ঠিক কোন বিষয়টা আমার এক্তিয়ারভুক্ত, কোনটা নয়, তা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা আছেই। তবে সরকারের কাছ থেকে ‘রিলিজ’ না এলে তো আমার বা জিবি-র কিছু করার নেই।”

কিন্তু প্রশ্ন হল, যাঁদের বেতন-প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদি দায়িত্ব বহন করছে বিশ্ববদ্যালয়, তাঁরা কী করে সরকারি কর্মচারী হন? সম্প্রতি বদলির নির্দেশ এসেছে, এমন এক শিক্ষক এ ব্যাপারে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। জিবি-র এক সদস্যও জানান, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে আলোচনা করা বাধ্যতামূলক। জিবি-র অভিযোগ ডিন অব স্টুডেন্টস দেবশ্রুতি রায়চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া নিয়েও।

রেজিস্ট্রার বদলি হওয়ার কয়েক দিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয় হস্টেলের আর্থিক গরমিলের ব্যাখ্যা চেয়ে ডিনকে চিঠি পাঠান অনুরাধাদেবী। দেবশ্রুতিদেবী চিঠির জবাব দিয়েছেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের সাহায্যে। তার পর থেকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না তিনি। জিবি-কে এড়িয়ে উপাচার্য কী করে তাঁকে চিঠি দেন, সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে। উপাচার্যের দাবি, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই যা করার করছেন। ডিনের চিঠির জবাব অবশ্য এখনও দেননি।

প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকের মতে, কলেজ থেকে আচমকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার ফলেই কিছু পদ্ধতিগত সমস্যা হচ্ছে প্রেসিডেন্সিতে। কিন্তু শিক্ষক-আধিকারিকদের অনেকের অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্তদের এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার রাশ পুরোটাই নিজের হাতে রাখতে চান উপাচার্য। আলোচনা তো দূর, নানা কারণে দুর্ব্যবহার ও অপমান করেন তিনি। প্রেসিডেন্সির একটা বড় অংশের বক্তব্য মালবিকাদেবীর কাছে কখনও এ ভাবে অপমানিত হতে হয়নি তাঁদের। দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের এড়িয়ে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের হাতে রাখার প্রবণতাও তাঁর ছিল না। তাঁদের বক্তব্য, নতুন উপাচার্য বরং অনেক বেশি যোগাযোগ রাখেন সরকারের সঙ্গে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কথা বলে নেন সরকারের সঙ্গে।

কী রকম? মাসখানেক আগে স্নাতকোত্তরে ছাত্রভর্তি নিয়ে প্রেসিডেন্সির এক দল পড়ুয়া বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেন। প্রথমে আন্দোলনকারীদের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাসও দেন উপাচার্য। কিন্তু পরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাত্রছাত্রীদের দাবিকে অনৈতিক বলে চিহ্নিত করায় উপাচার্যেরও সুর পাল্টে যায়। প্রবীরবাবু বদলি হওয়ার দিন দুয়েক আগে অনুরাধাদেবী বিকাশ ভবনে যান বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। সেই সময় দুর্গাপুর সরকারি কলেজে ফোন করে শূন্য শিক্ষক পদের হিসেব চাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সূত্রটি। অনেকেরই প্রশ্ন, অনুরাধাদেবী কি প্রবীরবাবুকে ওই কলেজে বদলির জন্য তদ্বির করতে গিয়েছিলেন?

উপাচার্যের দাবি, “এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। অন্য উপাচার্যদের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে বিকাশ ভবনে গিয়েছিলাম।” শিক্ষামন্ত্রীও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বর্তমান উপাচার্য যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়ে এগোনোর চেষ্টা করছেন। দফতর থেকে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না।”

অনুরাধাদেবী দুর্ব্যবহারের অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “আমি কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করিনি। কারও অভিযোগ থাকলে নির্দিষ্ট ভাবে বলুন!” তাঁর মতে যখন যেমন প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-আধিকারিকদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। দরকারে আলোচনা করেন মালবিকাদেবীর সঙ্গেও।

presidency university vice chancellor kolkata news online kolkata news follow government rule and regulation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy