Advertisement
০২ মে ২০২৪

গাড়ির গতি বেশিই ছিল, বিপাকে বিক্রম

প্রাথমিক দাবি থেকে ঘুরে গিয়ে পুলিশের কাছে মদ্যপানের কথা কবুল করেছিলেন বুধবারই। কিন্তু তখনও বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, গাড়ির গতি বেপরোয়া ছিল না তাঁর। বৃহস্পতিবার গাড়ি নির্মাতা সংস্থা এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা কিন্তু পুলিশকে অন্য কথাই জানালেন।

অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০৩:৩২
Share: Save:

প্রাথমিক দাবি থেকে ঘুরে গিয়ে পুলিশের কাছে মদ্যপানের কথা কবুল করেছিলেন বুধবারই। কিন্তু তখনও বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, গাড়ির গতি বেপরোয়া ছিল না তাঁর। বৃহস্পতিবার গাড়ি নির্মাতা সংস্থা এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা কিন্তু পুলিশকে অন্য কথাই জানালেন।

এ দিন বিক্রমের গাড়ির খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে এবং ‘ইভেন্ট ডেটা রেকর্ডার’ (ইডিআর)-সহ কিছু যন্ত্রাংশ বাজেয়াপ্ত করার পর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২৯ এপ্রিল ভোরে বিক্রমের গাড়ির গতি বেশিই ছিল। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় টপ গিয়ারে ছুটছিল অভিনেতার গাড়ি।

পুলিশ সূত্রের দাবি, কলকাতার রাস্তায় চার চাকা গাড়ির সর্বোচ্চ গতি ৬০-৭০ কিলোমিটার। বিক্রমের গাড়ি খুব সম্ভবত ১০০ কিলোমিটারের আশপাশে ছিল। লেক মার্কেটের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নায়ক প্রাণে বাঁচলেও তাঁর পাশের সিটে বসা সোনিকা সিংহ চৌহান মারা যান।

পুলিশ জানিয়েছে, বিক্রমের গাড়িটির প্রযুক্তি প্রথমে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারেননি। এ দিন দুপুরে বিক্রমের গাড়ির নির্মাতা সংস্থার দু’জন কর্তা বেঙ্গালুরু থেকে আসেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে ঢুকে ল্যাপটপে রাখা বিশেষ সফটঅয়্যারের মাধ্যমে বিশেষ কিছু তথ্য এবং যন্ত্রাংশ বাজেয়াপ্ত করেন তাঁরা।

ইভেন্ট ডেটা রেকর্ডার কী

গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটলে সেই সময় গাড়ির কিছু তথ্য রেকর্ড করার যন্ত্র বিশেষ। অনেকটা বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’-এর মতো। কিছু কিছু গাড়িতে এই যন্ত্র লাগানো থাকে। হঠাৎ গাড়ির গতি বেড়ে গেলে বা ইঞ্জিনের কোনও সমস্যা হলে তা আঁচ করাই এর কাজ। কিছু ইডিআর প্রতিনিয়ত তথ্য রেকর্ড করে। সঙ্গে সঙ্গে কিছুক্ষণ আগের তথ্য মুছে ফেলতে থাকে। আবার কোনওটির রেকর্ড করার সীমা নির্দিষ্ট থাকে। তা পূর্ণ হয়ে গেলে তখন সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু ইডিআর আবার গাড়িতে ধাক্কা লাগলে সচল হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিক্রম প্রথমে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং মদ্যপান করার কথা অস্বীকার করেছিলেন। এখন সেগুলি সামনে আসায় জামিন বাতিলের আর্জি জানানো যেতে পারে। এ দিন আলিপুর আদালতের বিচারক মণিকুন্তলা রায়ের কাছে বিক্রম ও সোনিকার চার বন্ধু শিরিন আশফাক, অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃথা গুহ এবং নাজিয়া পরভিন গোপন জবানবন্দি দেওয়ার আবেদন করেন। দু’জন গোপন জবানবন্দি দিয়েওছেন। পুলিশের কাছে তাঁরা আগেই জানিয়েছিলেন, ২৮ এপ্রিল রাতে বিভিন্ন পার্টিতে বিক্রম প্রচুর
মদ্যপান করেছিলেন। আজ, শুক্রবার গোপন জবানবন্দির প্রতিলিপি তদন্তকারীদের কাছে আসবে। যদি সেখানেও তাঁরা একই কথা বলে থাকেন, তা হলে বিক্রমের বিরুদ্ধে মামলায় নতুন ধারা সংযোজন এবং তাঁর জামিন বাতিলের আর্জি জানানো হতে পারে।

লালবাজার অবশ্য এই মামলা নিয়ে সাবধানী মনোভাবই বজায় রেখেছে। এ দিন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ জানান, ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গা়ড়ি এবং বিক্রমের রক্ত পরীক্ষার বিষয়টি ফরেন্সিক বিভাগ দেখছে।

এ দিন তদন্তকারীদের একটি দল ইএম বাইপাসের রুবি মোড়ের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিল। ওই হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিক্রম-সোনিকাকে। কোন কোন চিকিৎসকেরা তাঁদের দেখেছিলেন, কী কী পরীক্ষা করানো হয়েছিল, সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু নথি সংগ্রহ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE