Advertisement
E-Paper

বিধির তোয়াক্কা না করার ফলই মিলল হাতেনাতে

পূর্ত দফতর থেকে বারবার নিষেধ করা হয়েছে। কখনও কখনও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বারণ করেছেন রাজ্য প্রশাসনের মুখ্যসচিবও। কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার। মন্ত্রী থেকে আমলারা পূর্ত দফতরের অগ্নি-নির্বাপণ সংক্রান্ত নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইচ্ছেমতো নিজেদের ঘর সাজান। আর খেসারত দিতে হয় তারই। শুক্রবার নব মহাকরণের আগুনও এর জেরেই লেগেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, এমনটাই জানাচ্ছেন রাজ্য পূর্ত দফতরের তাবড় কর্তারা।

অত্রি মিত্র ও সায়নী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৫
মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ভস্মীভূত ঘর। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ভস্মীভূত ঘর। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

পূর্ত দফতর থেকে বারবার নিষেধ করা হয়েছে। কখনও কখনও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বারণ করেছেন রাজ্য প্রশাসনের মুখ্যসচিবও। কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার। মন্ত্রী থেকে আমলারা পূর্ত দফতরের অগ্নি-নির্বাপণ সংক্রান্ত নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইচ্ছেমতো নিজেদের ঘর সাজান। আর খেসারত দিতে হয় তারই। শুক্রবার নব মহাকরণের আগুনও এর জেরেই লেগেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, এমনটাই জানাচ্ছেন রাজ্য পূর্ত দফতরের তাবড় কর্তারা।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরে এ দিন বিকেলে দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে নবান্নে বৈঠক করেন রাজ্যের পূর্তসচিব ইন্দিবর পাণ্ডে। সেখানেই ইঞ্জিনিয়ারেরা মন্ত্রী-আমলাদের ইচ্ছেমতো ঘরের সাজসজ্জা এবং বিদ্যুতের তার টানার প্রবণতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সুব্রতবাবু জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাঁর ঘরে ইলেকট্রিক ওয়্যারিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল ওই দফতরই। পূর্ত দফতরের তরফে আপত্তি জানানো হলেও তা কানে তোলা হয়নি। ওই ঘরে পাঁচটি এসি বসানো রয়েছে। তার মধ্যে দু’টি বসিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরই।’’

পূর্ত দফতরের ওই কর্তা জানান, প্রাথমিক তদন্তের পরে ইলেকট্রিক ওয়্যারিংয়ে গলদ এবং ইউপিএস খোলা থাকাই এ দিনের অগ্নিকাণ্ডের পিছনে প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা। ওই কর্তা বলেন, ‘‘আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার পরে বিকেল ৩টে নাগাদ আমরা যখন মন্ত্রীর ঘরে ঢুকেছি, তখনও একটি ইউপিএস থেকে আওয়াজ বেরোচ্ছিল। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, দু’টি ইউপিএস রাতভর চলেছিল। সকালের দিকে তারই একটি গরম হয়ে গিয়ে ফেটে যায়। সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’’

মন্ত্রী-আমলাদের ঘরে দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি অন্দরসজ্জা এবং সব সরকারি দফতরে ছড়িয়েছিটিয়ে রাখা কাঠের আসবাব ও কাগজপত্র— আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পিছনে এটাও বড় কারণ বলেও মনে করছেন পূর্ত দফতরের কর্তারা। আর একটি বড় কারণ, সংশ্লিষ্ট ঘরের বিদ্যুতের চাপ নেওয়ার ক্ষমতার তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছেমতো এসি মেশিনের সংখ্যা বা়ড়িয়ে যাওয়া।

এই ঘটনা নতুন নয়। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, অতীতে একাধিক বার ইচ্ছেমতো অন্দরসজ্জা এবং ওয়্যারিং করার কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। মহাকরণে ফিরহাদ হাকিমের ঘরেও এসি মেশিন থেকে একই ভাবে আগুন লাগে। সেটিও বসিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা। ঘটনার পরে রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ সমস্ত দফতরের জন্য একটি নির্দেশিকা পাঠান। তাতে বলা হয়, পূর্ত দফতরের অনুমোদন ছাড়া কোথাও কোনও ঘরের সাজসজ্জা করা যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশিকাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই নবান্নেও মন্ত্রী-আমলারা নিজেদের ঘরের সাজসজ্জা তৈরি করেছেন। পূর্ত দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, নবান্নে কয়েক মাস আগেই আগুন লাগে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের অফিসে। পরে তদন্তে দেখা যায়, ওই অফিসের ইলেকট্রিক ওয়্যারিং করেছিল কলকাতা পুলিশ। এবং তা পূর্ত দফতরের নিয়ম না-মেনেই। এই অবস্থায় এ দিন পূর্তসচিবের সঙ্গে বৈঠকে ফের ওই নিয়ম কড়া ভাবে কার্যকর করার দাবি তুলেছেন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা।

যদিও পূর্ত দফতরের নিয়ম না-মানার দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা। এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর কথায়, ‘‘এসএসকেএম হাসপাতালের সব কিছুই তো পূর্ত দফতর করেছে। তা হলে গত দু’বছরে ওই হাসপাতালে কয়েক বার আগুন লাগল কী করে! এ সব বলে লাভ নেই। আমাদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে। সেটা একইসঙ্গে পূর্ত দফতরকেও হতে হবে। তারাও এ সব বলে দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’’

Atri Mitra Shayani Bhattacharya new Secretariat building Kolkata fire Fire department Firefighters Strand road Sky ladder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy