Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ফণীতে সর্বহারাদের পাশে ওঁরাও

এক সময়ে ফুটপাত‌ই ছিল সকলের ঠিকানা। সেই তাঁরাই ওড়িশায় ফণীর দাপটে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া মানুষগুলির পাশে দাঁড়ালেন। নিজেদের পোশাক, খাবার ভাগ করে নিলেন ওঁদের সঙ্গে।

 সহমর্মী: দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

সহমর্মী: দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০২:৩৪
Share: Save:

বিভাজনের পথে আর নয়। অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর সহজ পাঠ দিলেন ঝর্না সাহা, শম্পা সাহু, কিরণ দর্জিরা। অন্যের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছেশক্তি কতটা প্রবল, তা বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা। সঙ্গে জানান দিলেন, ওঁরাও পারেন।

সমাজের চোখে ওঁরা অনেকেই ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে পরিচিত ছিলেন। থাকেন চেতলা হাট রোডের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারা পরিচালিত সামাজিক ও মানসিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তৈরি আবাসে। এক সময়ে ফুটপাত‌ই ছিল সকলের ঠিকানা। সেই তাঁরাই ওড়িশায় ফণীর দাপটে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া মানুষগুলির পাশে দাঁড়ালেন। নিজেদের পোশাক, খাবার ভাগ করে নিলেন ওঁদের সঙ্গে।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কমিউনিকেশন অ্যান্ড ফান্ড রেজিং অফিসার নয়নিকা দাস জানান, আবাসিকদের জন্য অনেকে জামাকাপড় দেন। প্রয়োজনের তুলনায় প্রচুর পোশাক জমা হয়ে থাকে। সে সব বাড়তি পোশাক যাতে ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গতদের সাহায্যে দেওয়া যায়, সে জন্য একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। নয়নিকার কথায়, “যাঁদের পোশাক, তাঁদের অনুমতি ছাড়া এই কাজ করা যায় না। তাই দোতলার বড় ঘরে সকলকে ডেকে ওড়িশার পরিস্থিতি বোঝানো হয়েছে। ছবি দেখানো হয়েছে।” সেই ছবি দেখেই ঝর্না, শম্পা, কিরণেরা ঠিক করেন, পোশাকের পাশাপাশি নিজেদের খাবার‌ও ভাগ করে নেবেন ফণী-দুর্গতদের সঙ্গে।

প্রোজেক্টরের সাহায্যে দেখানো ছবিগুলির মধ্যে একটিতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খোলা আকাশের নীচে বসেছিলেন কয়েক জন মহিলা। ঝর্নার কথায়, “আমরাও তো অসহায় ছিলাম। দয়া করে কেউ এখানে পৌঁছে দিয়েছেন। দরকার থাকলেও মুখ ফুটে কার‌ও কাছে কিছু চাওয়া সহজ হয় না। কিন্তু নিজে থেকে কেউ কিছু দিলে যে কী ভাল লাগে!” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাফেতে স্যান্ড‌উইচ তৈরি করার ফাঁকেই শম্পা বলেন, “গায়ে গামছা, পরনে পেটিকোট থাকত বলে আমাদের অনেকে পাগল ভাবতেন। ফুটপাতে থাকার সময়ে আমার একটা বাচ্চা হয়। ও ভাবে বেঁচে থাকা যে কী কষ্টের, তা আমার থেকে ভাল কে জানে!” কিরণ নামে আর‌ এক আবাসিক বলেন, “আমরাও তো অসহায় ছিলাম। তাই সাধ্যমতো ওঁদের সাহায্য করতে চেয়েছি।”

গত শনিবার আবাসিকদের দেওয়া অর্থে জিনিসপত্র কিনে ওড়িশায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভোটের ফলে যখন বিভাজনের প্রতিফলন, তখন এই কলকাতায় ঝর্না, শম্পা, শ্যামলী, শেফালিরা যেন এক অন্য বার্তা দিলেন। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার সর্বাণী দাস রায় বলেন, “অন্যকে সাহায্য করার ইচ্ছে সকলেরই থাকে। যাঁরা সব কিছু হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও সেই ইচ্ছেটা রয়েছে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো যে কতটা প্রয়োজন, ওঁদের এই পদক্ষেপ তার‌ই প্রমাণ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ফণী Fani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE