Advertisement
১০ মে ২০২৪

গাড়ি বিকল হলে সুরক্ষা দেবে কে

শনিবার দিনভর খোঁজখবর করে জানা গেল, এ শহরে ‘ব্রেকডাউন কার সার্ভিস’-এর নাম করে প্রচুর সংস্থা চলছে। তবে জরুরি সময়ে তাদের ফোন করে যে পাওয়া যাবেই, এমন নিশ্চয়তা নেই। তা ছাড়া, কোনও একটি সংস্থার প্রতিনিধি গাড়ি উদ্ধারে এলেও ঠিকঠাক সেই গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে কি না, তারও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, গাড়ি কোথায় আছে জানিয়ে গাড়ির চাবি দিয়ে দিতে হবে ওই সংস্থার কর্মীর হাতে।

আস্তরণ: কালীপুজোর রাতে বিদ্যাসাগর সেতুতে ধোঁয়াশা। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

আস্তরণ: কালীপুজোর রাতে বিদ্যাসাগর সেতুতে ধোঁয়াশা। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৬
Share: Save:

হায়দরাবাদের অদূরে ২৬ বছরের এক তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। তদন্তে উঠে এসেছে, ওই তরুণীর স্কুটারের চাকা প্রথমে ফাটিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। পরে স্কুটারটি সারিয়ে দেওয়ার নাম করেই ওই তরুণীকে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের পরে খুন করা হয়। এই ঘটনাই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, গাড়ি, স্কুটার বা বাইক নিয়ে বেরোলে কলকাতার রাস্তাই বা কতটা নিরাপদ? সমস্যায় পড়লে জরুরি

সময়ে সাহায্যই বা পাওয়া যেতে পারে কী ভাবে?

শনিবার দিনভর খোঁজখবর করে জানা গেল, এ শহরে ‘ব্রেকডাউন কার সার্ভিস’-এর নাম করে প্রচুর সংস্থা চলছে। তবে জরুরি সময়ে তাদের ফোন করে যে পাওয়া যাবেই, এমন নিশ্চয়তা নেই। তা ছাড়া, কোনও একটি সংস্থার প্রতিনিধি গাড়ি উদ্ধারে এলেও ঠিকঠাক সেই গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে কি না, তারও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, গাড়ি কোথায় আছে জানিয়ে গাড়ির চাবি দিয়ে দিতে হবে ওই সংস্থার কর্মীর হাতে।

গত কয়েক বছরে কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানাতেই এ ভাবে চাবি নিয়ে গাড়ি হাতিয়ে নেওয়ার একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, তাদেরও ‘রেকার সার্ভিস’ রয়েছে। গাড়ি তুলে আনার জন্য লালবাজারে রাখা ক্রেন জাতীয় ওই গাড়ি ব্যবহার করে তারা। তবে কলকাতা পুলিশেরই এক কর্তা জানান, সেগুলি সাধারণত ব্যবহার হয় বেআইনি পার্কিং রোধে বা মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হওয়ায় যানজট হলে। জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত

প্রয়োজনে পুলিশ সাহায্য করতে চাইলেও লালবাজার থেকে সেই গাড়ি কত ক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছবে, সেই প্রশ্নও থাকছে।

দীর্ঘদিন ধরে নিজেই নিজের গাড়ি চালান তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী সৃজা সরকার। তিনি বললেন, ‘‘এ সবের জন্যই নির্ভর করতে হয় ইন্টারনেট ঘেঁটে পাওয়া হেল্পলাইন নম্বর বা যে সংস্থার গাড়ি রয়েছে, তাদের হেল্পলাইন নম্বরের উপরে।’’ তবে আপৎকালীন সময়ে হেল্পলাইন নম্বর থেকে সাহায্য পাওয়া এক ঝক্কির ব্যাপার বলেই তাঁর মত। সৃজার বক্তব্য, ‘‘হায়দরাবাদের ঘটনার কথা শুনে ওই ভাবে লোক ডাকতেও এ বার ভয় করবে। যাঁকে পাঠানো হবে, তিনি যে ভাল হবেনই, তার

নিশ্চয়তা কোথায়?’’

নিশ্চয়তা না থাকারই উদাহরণ মিলল ইন্টারনেট ঘেঁটে বার করা ‘ব্রেকডাউন রিকভারি ২৪x৭’ নামে একটি সংস্থার হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে। যত বারই ফোন করা হল, যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর জানাল, এটি ভুল নম্বর। ‘২৪x৭ সেফ কার’ নামে আর একটি সংস্থার দেওয়া নম্বরে ফোন করায় এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘ভুল নম্বর। এটা ওষুধের দোকান।’’ কোনও মতে ফোনে পাওয়া গেল ‘কার ক্রেন সার্ভিস’ নামে একটি সংস্থার এক কর্মীকে। ফোন ধরেই তিনি দাবি করলেন, রাজ্যের যেখান থেকে খুশি গাড়ি, স্কুটার বা বাইক উদ্ধার করে দিতে পারবেন। যত দূরে গাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে, সেই অনুযায়ী টাকা দিতে হবে। যেমন, রেড রোড থেকে উল্টোডাঙায় গাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য দিতে হবে ১৮০০ টাকা। একই রকম টাকা নেবে ‘এম কে ব্রেকডাউন সার্ভিস’ও। তবে দুই সংস্থারই শর্ত, গাড়ির চাবি ছেড়ে দিতে হবে তাদের হাতে। গাড়ির মালিক সঙ্গে থাকতে চাইলে তাঁর দায়িত্ব তারা নিতে পারবে না!

তা হলে দায়িত্ব কে নেবে? কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার দাবি, ‘‘আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যে কোনও সময়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন। বিশেষ করে আমরা মহিলাদের এ কথা বারবার বলি। এই ধরনের কিছু হলে থানাগুলিকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া আছে। তা ছাড়া, মহিলাদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণে ‘রেসপেক্ট উইমেন’ এবং ‘তেজস্বিনী’র মতো প্রকল্প চালানো হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Safety Koklkata Kolkata Night Life
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE