Advertisement
০৫ মে ২০২৪

স্টান্টের হাতছানিতেই ঘটছে পরপর অঘটন

স্টান্টের নাম ‘হ্যান্ডেল ক্রাইস্ট’! শেষ দৃশ্যের ওই ভয়ঙ্কর কসরতের আগে যাদবপুরের ক্যাম্পাসে সম্প্রতি এক দুপুরে দুই চালক বাইক নিয়ে যা করলেন, তা দেখে শিউরে উঠতে হয়। দর্শকদের হর্ষধ্বনি এবং অনুষ্ঠান-সঞ্চালকের ঘোষণা সেই ভয়কে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।

কসরত: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোটরবাইক নিয়ে স্টান্ট। ছবি: রণজিৎ নন্দী

কসরত: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোটরবাইক নিয়ে স্টান্ট। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

মোটরবাইক নিয়ে খানিক লম্ফঝম্পের পরে একটি কালো দড়ি চেয়ে নিলেন চালক। সেই দড়ি কষে বাঁধা হল বাইকের ডান হ্যান্ডেলে। তার পরে জোরে বাইক ছুটিয়ে হ্যান্ডেল ছেড়ে সোজা দাঁড়িয়ে পড়লেন চালক। এক পা সিটে। অন্য পা হ্যান্ডেলে। ডান হ্যান্ডেলে কায়দা করে দড়ি বাঁধা থাকায় ‘অ্যাক্সিলারেশন’-এরও ঘাটতি নেই! এবার হেলমেট খুলে এক হাতে তা শূন্যে তুলে ধরলেন চালক। অন্য হাতের মুদ্রায় জয়ের চিহ্ন!

স্টান্টের নাম ‘হ্যান্ডেল ক্রাইস্ট’! শেষ দৃশ্যের ওই ভয়ঙ্কর কসরতের আগে যাদবপুরের ক্যাম্পাসে সম্প্রতি এক দুপুরে দুই চালক বাইক নিয়ে যা করলেন, তা দেখে শিউরে উঠতে হয়। দর্শকদের হর্ষধ্বনি এবং অনুষ্ঠান-সঞ্চালকের ঘোষণা সেই ভয়কে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। ঘোষককে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনারাও চেষ্টা করবেন নাকি? আছে কারও দম?’’ উত্তরে উড়ে আসে সম্মতিসূচক চিৎকার।

ভয় আরও বাড়ে সম্প্রতি সরস্বতী পুজোর ভাসানে যাওয়ার সময়ে এক যুবকের মর্মান্তিক বাইক দুর্ঘটনার পরে। আলিপুরের কাছে সেই বাইক সজোরে ধাক্কা মেরেছিল জিরাট ব্রিজের রেলিংয়ে। হেলমেটহীন চালকের মাথা রেলিংয়ে আটকে যায়। রেলিং থেকে ঝুলতে থাকে দেহের বাকি অংশ! তার পরেও গত কয়েকদিনে একাধিক মোটরবাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে শহরে।

মনোরোগের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘এত দুর্ঘটনার পরেও বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানো থামছে না। মোবাইল গেম এবং প্রকাশ্যে এই ধরনের স্টান্ট দেখে অনেকেই প্রভাবিত হচ্ছেন। বাহবা পাওয়ার আশায় প্রশিক্ষণহীন হাত ওই সব কসরত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে এই ধরনের স্টান্ট করতে দেওয়া নিয়েও বিতর্ক চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু অবশ্য বলছেন, ‘‘বাইক নিয়ে ওই সব যে হবে, জানতামই না। একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। আগে জানলে অনুমতি দেওয়া হত না।’’ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা সোসাইটির আহ্বায়ক রাইধানি দেবনাথকে এ ব্যাপারে ফোন করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি।

পুলিশ জানাচ্ছে, স্বশাসিত সংস্থা হওয়ায় যাদবপুরের মতো প্রতিষ্ঠানে ঢুকে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে না। প্রতিষ্ঠানের বাইরেও চাইলেই স্টান্ট আটাকাতে পারে না পুলিশ। ট্র্যাফিক বিভাগের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থাই মোটরবাইক স্টান্টের আয়োজন করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোনও আইন এখনও নেই। যদিও বেআইনি স্টান্ট গ্রুপগুলিকে ধরার চেষ্টা করি আমরা।’’ সে ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা বলতে শুধুই বেআইনি ভাবে কোথাও জড়ো হওয়া, বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো এবং মোটর ভেহিক্‌লস আইনের ১৮৩ (গতি-সীমা লঙ্ঘন), ১৮৪ (বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো) এবং ১৮৯ (প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া গতির প্রতিযোগিতা করা) ধারায় মামলা করা।

অস্ট্রিয়ার এক বাইক সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় শাখার আধিকারিক মহাদেব দাস যদিও বলেন, ‘‘বিশেষ ধরনের পোশাক না পরলে ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক না হলে স্টান্ট করা যায় না। প্রশিক্ষণ ছাড়া স্টান্ট না করার বিষয়ে প্রচারও চালানো হয় সব অনুষ্ঠানে।’’ কোরিয়ার এক বাইক সংস্থার আবার বক্তব্য, ‘‘বাইকের গুণমান বোঝাতেই ওই স্টান্ট দেখানো হয়। বিপদের দিকটিও জানিয়ে দেওয়া হয়।’’

যাদবপুরে স্টান্ট দেখাতে এসেছিলেন রাঁচীর বাসিন্দা, ২১ বছরের কওসর রাজা। রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জানালেন, ১৪ বছর বয়স থেকে বাইকের স্টান্ট করছেন। এখন শো-পিছু ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে পান। বলেন, ‘‘আমাদের দেখে অনেকেই বাইকে সওয়ার হয়ে উড়তে চান। প্রশিক্ষণ ছাড়া স্টান্ট কিন্তু মারাত্মক।’’

নতুন প্রজন্ম কি ভাবছে সেই বিপদের কথা? সাম্প্রতিক ঘটনাবলী কিন্তু সেই আশা দেখাতে পারছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bike Stunt Accident Death Jadavpur University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE